লালমনিরহাটের তাঁত শিল্প ধ্বংসের পথে

রাহেবুল ইসলাম, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫০ | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:৫৬

হিমালয়ের পাদদেশে সীমান্তঘেঁষা লালমনিরহাটে শীত জেঁকে বসেছে। বর্তমানে চলছে ভরা শীত মৌসুম। এ শীতে ছিন্নমূল থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের ভরসা কাকিনা তাঁতের চাদর। বর্তমানে কাকিনার তৈরি তাঁতের শাড়ি এক সময়ের মসলিনের মতই দেশি-বিদেশি নারীদের মনে স্থান করে নিয়েছে। এ জন্যই প্রবাদ রয়েছে- ‘তিস্তা নদী নালা খাল বিল কাকিনার শাড়ি তার গর্বের ধন।’ আর এই গর্বের ধন এখন হারাতে বসেছে। সুতার দাম বৃদ্ধি, কারিগর ও মহাজনদের মধ্যে লভ্যাংশের অসম বণ্টন আর কারিগরের অভাবে তাঁত শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাপ-দাদার এই তাঁত শিল্পকে ধরে বাল্যকাল থেকে এ পেশায় জড়িত ইমান আলী। ইমান আলী এ কাজের পাশাপাশি করতে চেয়েছিলেন লেখাপড়া। অভাবের তাড়নায় অর্জন করা সম্ভব হয়নি তার। গ্রহণ করতে পারেননি উচ্চ কোনো পেশা, তাই বাপ দাদার তাঁত বুননে চলছে তার সংসার।

কাকিনা তাঁত শিল্প এলাকায় গিয়ে কথা হয় ইমান আলীর সাথে। তিনি বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের যাঁতাকলে পিষ্ট তাঁতীরা। সরকারি কোনো ঋণ না পেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে নিঃস্ব হয়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে রয়েছে তাঁতীপাড়া। সব সময় কাজে মহাব্যস্ত তাঁতীপাড়ার শ্রমিকরা।

কথা বলার ফুরসতও যেন নেই তাদের। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরাও ব্যস্ত বড়দের সাথে।

পরান আলী জানান, সুতার দাম বেশি, সব সময় চাদরের চাহিদা না থাকা, অর্থাভাবে এ পেশা থেকে অনেকেই ছিটকে পড়েছেন। সুদখোর দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সুতা কিনে কোনো রকমে টিকে রয়েছেন তাঁত শিল্পে।

সুদের টাকায় ব্যবসা করে তেমন মুনাফা হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক হাজার টাকা নিলে প্রতি মাসে ১০০ থেকে ১২০ টাকা মহাজনকে সুদ দিতে হয়। তবে তিনি দাবি করেন সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান সুতা আর মজুরি দিলে বারো মাসই তারা চাদর, লুঙ্গি, শাড়িসহ বিভিন্ন কাপড় তৈরি করে সরবরাহ করতে পারতেন। তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন পরান আলী।

কাকিনা রুদ্ধেশ্বর গ্রামের কয়েক জন তাঁত শ্রমিক মহিলা জানান, দৈনিক ভোর ৫টায় কাজ শুরু করে রাত ১০টায় শেষ করে চার সদস্যের পরিবারে চাদর তৈরি হয় ছয়টা। এতে তাদের সুতা খরচ পড়ে প্রতিটিতে ১০০ টাকা। পাইকারি প্রতিটি চাদর বিক্রি হয় ১১০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা।

কলেজপাড়ার তাঁতশ্রমিক রহম আলী জানান, প্রতি মণ সুতা ছয়-সাত হাজার টাকায় কিনতে হয় বগুড়া শহর থেকে। তিনি মহাজনের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে সুতা কিনেছেন। বিনিময়ে মহাজনকে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রতিটি চাদর পাঁচ থেকে আট টাকা কমিশনে বিক্রি করতে হয়। তাতে লাভ কম হলেও জীবন বাঁচানোর তাগিদেই তাঁত বুনছেন।

তবে বছরের অন্য সময়ে চাদরের চাহিদা না থাকায় তাঁত বন্ধ রেখে অন্য কাজে শ্রম বিক্রি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সারা বছর চাদর, লুঙ্গি, শাড়িসহ বিভিন্ন কাপড় তৈরি করে বাজারজাত করতে পারতেন।

তাঁতী সমিতির সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় সর্বমোট পাঁচ হাজার তাঁতী রয়েছেন। এই তাঁতীরা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারছেন না।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :