বেকারত্ব ঘোচানোর ওষুধ...

লেখা ও ছবি : শেখ সাইফ
 | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:২২

'ডিগ্রি পাস করে মাস্টার্স পড়ছি। ভালো চাকরির চেস্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। তাই ওষুধ কোম্পানিতে ঢুকেছি।' বলছিলেন একটি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বিপণন কর্মী। নিজের নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি।

বেকারত্বের মতো সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে দারুণ এক ক্ষেত্র ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপনন বিভাগ। দেশের সাড়ে তিনশো ওষুধ কোম্পানিতে লাখো শিক্ষিত তরুণ বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে পেশাজীবনে দারুণ উন্নতি করতে পেরেছেন। অনেকেই আবার এই পেশায় এসে সন্তুষ্ট নন। আপাতত এই কাজে থাকলেও সময়-সুযোগ বুঝে মনের মতো কোনো কাজে চলে যাবেন। তাই তারা পেশার পরিচয় দিতে চান না।

হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে যারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রচারে আসেন, তারাও নাম-পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ফুটপাতে তাদের দেখা যায়। সড়কে থাকে সারি সারি মোটর সাইকেল। পেছনে একটি ব্যাগ যুতসই করে বাধা।

এক সকালে গিয়ে দেখা যায়, কেউ বসে আছেন। আবার কেউ মুঠোফোনে কথা বলছেন। অনেকে আবার জটলা হয়ে আলাপ করছেন। কেউ কেউ ওষুধের ফরমায়েশ লিখে চলেছেন কোম্পানির প্যাডে। আবার জনা কয়েকজন ফুটপাতে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই মাঠ-ব্যবস্থাপক কর্মীদের কাজের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

মোটর সাইকেলের উপর বসে ছিলেন একজন। হাসপাতালে আপনাদের কী করতে হয়? এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, 'ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা, সালাম জানানো, ওষুধের স্যাম্পল দেওয়া, আমাদের ওষুধ লিখছে কিনা কৌশলে তা দেখা। এজন্য আমাদের এখানে থাকতে হয়। সপ্তাহে দুদিন ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার অনুমোদন আছে। কয়েক বছর আগে অবশ্য এমন অবস্থা ছিলো না। তখন প্রতিদিনই দেখা করার সুযোগ ছিল।’

পাশেই ছিলেন একজন মেডিক্যাল ইনফরমেশন অফিসার (এমআইও)। নিজে থেকেই আলাপে যোগ দিলেন। বললেন, ‘সকাল নয়টার সময় এখানে আসতে হয়। আমাদের একজন বস্‌ আছেন, মানে টিম ম্যানেজার। তার অধীনে ৫-৬ জন এমআইও কাজ করেন। কারো কাজের সময় সকাল নয়টা থেকে আড়াইটা। আবার কারো ডিউটি থাকে বিকেল পাঁচটা ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। ডাক্তার পরিদর্শনের সময় সাধারণত বেলা দেড়টা।’

মেডিক্যাল প্রতিনিধিরা জানালেন, দুপুরে তাদের খাবার বিরতি থাকে। এরপর আবার বিকেল পাঁচটা থেকে পরিদর্শন শুরু হয়। এসময় বিভিন্ন ক্লিনিকে যান তারা। এরপর হচ্ছে ওষুধের ফরমায়েশগুলো লেখার পালা।

একজন মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার বললেন, 'আমার আন্ডারে ৩০টা ফার্মেসি আছে। কী কী ওষুধ লাগবে জেনে নিয়ে তার তালিকা অফিসে পাঠিয়ে দেই। ওষুধের এসব অর্ডার দিতে দিতে রাত ১১টা বেজে যায়। এরপর বাসায় ফেরা। সেখানেই কিন্তু কাজ শেষ নয়। আগামীদিনের ওয়ার্কপ্ল্যান শিট আছে আমাদের সবার কাছে। সেটি পূরণ করার কাজে বসতে হয়। এরপর টাকা হিসাব-নিকাশ। সব কাজ শেষ হলেই কেবল নিজের জন্য সময় বের করা যায়। ঘুমাতে ঘুমাতে রাত একটা বেজে যায়। পরের দিন কিন্তু ঠিকই সকাল নয়টায় আবার হাসপাতালে চলে আসতে হয়।’

দিনমান লক্ষ্যপূরণের লড়াই

আর সব পণ্যের মতোই ওষুধের বেলায়ও সপ্তাহ বা মাসের লক্ষ্যপূরণের চ্যালেঞ্জ নিতে হয় বিক্রয় প্রতিনিধিদের। এতে যে সফলকাম হন, সে-ই এই পেশায় টিকে যান। তিনিই তর তর করে পৌঁছে যান উপরের দিকে। প্রথম ধাপ পার হতে পারলে হওয়া যায় টিম ম্যানেজার (টিএম)। এভাবে পর্যায়ক্রমে রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার (আরএসএম), ডিভিশনাল সেলস ম্যানেজার (ডিএসএম) থেকে ডিরেক্টর হওয়ারও সুযোগ থাকে। কিন্তু চ্যালেঞ্জের এই পেশায় টিকে থাকা-ই কঠিন বিষয় বলে জানালেন একাধিক বিপননকর্মী।

তারা আরো জানালেন, যদি কোনো ফার্মেসি ওষুধ নিয়ে টাকা দিতে একটু দেরী করে, তখন নিজেদের পকেট থেকে দিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে পুরো টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়। আবার অনেক ক্রেতা ওষুধ ফেরত দেয়। এক্ষেত্রেও তাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। তবে কোম্পানির টার্গেট পূরণ করতে পারলে কমিশন পাওয়া যায়। প্রতিমাসে এটা বাড়তে থাকে।

তবে প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা কোম্পানিতে যারা আছেন, তাদের জন্য কাজটা কিছুটা সহজ। কিন্তু নতুন ওষুধ কোম্পানির বেচাবিক্রির কাজ অনেক কঠিন। কারণ নতুন ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে দিতে চান না চিকিৎসকরা। ফার্মেসিগুলোও নতুন কিছু রাখতে অনাগ্রহী থাকে।

এসব বিষয় নিয়ে যে মানুষটি আলাপ করছিলেন আচমকা তার মুঠোফোন সেট বেজে উঠলো। কিছু সময় ফোনে কথা বলে নিলেন। সেটটি পকেটে রাখতে রাখতে বলছিলেন, ‘বউয়ের ফোন। কখন ফিরবো, জানতে চায়। তাকে বুঝানো যায় না, এমপিওদের কোনো অফিস টাইম নেই।’

ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/এসএস/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :