বন্ধই থাকছে ৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:২৩ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়ায় ২০টি কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদন বন্ধই থাকছে। এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত রায়ে ২০টি কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ এবং ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদন বন্ধই রেখেছেন। তবে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে বলেছেন। ওষুধ উৎপাদন বন্ধ হয়েছে কিনা কমিটিকে প্রতি চার মাস পরপর সেই প্রতিবেদন আদালতে দিতে বলা হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের কমিটিতে যারা থাকবেন তারা হলেন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের গঠন করা বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন এবং ড্রাগ অ্যাডমিনিস্টেশনের একজন।

মনজিল মরসেদ জানান, কোনো কোম্পানি পুনরায় ওষুধ উৎপাদন করতে চাইলে  ওই কমিটির অনুমোদন লাগবে। কমিটি বিষয়টি আদালতকে অবহিত করবে।

উৎপাদন বন্ধ হওয়া ২০ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদনকারী ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

গত বছরের ৫ জুন মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে এ ৩৪ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ। ওই বছরের ৭ জুন ওই ২০ কোম্পানিকে সাত দিনের মধ্যে ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ১৪টি কোম্পানিকে একই সময়ের মধ্যে এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

একইসঙ্গে ৩৪টি কোম্পানির অনুমোদন বাতিলে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং এসব কোম্পানির লাইসেন্স ও এন্টিবায়োটিক উৎপাদনের অনুমোদন কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

এরমধ্যে চার কোম্পানি এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলেও  হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকে। গত বছরের ১৫ জুন হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল  রাখে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. সাহাবুদ্দিন কবীর চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।

এ বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেন। যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা ছাড়াও ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়েটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল চান। কিন্তু ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/ এমএবি/এমআর)