বিশ্বব্যাংককে চাপে রেখে চলতে চায় সরকার

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:২৭ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:২১

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে সংসদে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা সম্ভব। তবে সরকার এখনই এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে চায় না বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের সূত্রগুলো।

সরকারের দায়িত্বশীল তিনজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এমন মনোভাবই ব্যক্ত করেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, যা হয়ে গেছে তা ভুলে যেতে চায় সরকার। ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো ঘটনার উদ্ভব না হয় সে বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কৌশলী আচরণ করবে সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশকে অনেক সমীহ করছে। তারা সরকারের সঙ্গে অনেক প্রকল্পেই যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এসব বিবেচনায় আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝমেলায় জড়াতে চাই না। তবে সংস্থাটি যেন ভবিষ্যতে আবার এই ধরনের রাজনৈতিক খেলা খেলতে না পারে সে জন্য তাদের চাপে রাখা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কানাডার আদালতের রায়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে তা ছিল ভুল ও গালগল্প। তাদের মুখে চপেটাঘাত হয়েছে।’

বিশ্বব্যাংকর বিরুদ্ধে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেন, ‘আসলে ব্যবস্থা নেয়া-না নেয়ার কিছু নেই। তবে বিশ্ববাসী দেখেছে। তারা (বিশ্বব্যাংক) তাদের বিবেকের কাছেই দংশিত হচ্ছে।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা ছিল ১২০ কোটি ডলার। তারা এই অর্থ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পরেই অবশ্য অন্য একটি প্রকল্পে এই পরিমাণ অর্থ দেয়ার আগ্রহের কথা জানায়। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরও অনেক প্রকল্পই চলছে বাংলাদেশে।

গত অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১৯০ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল। এর মধ্যে ছাড় করা হয় ১০০ কোটি ডলারের বেশি। চলতি অর্থবছরে এর চেয়ে বেশি অর্থ ছাড় হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলে আসছিলেন, বিশ্বব্যাংক যে পদ্মা সেতু থেকে সরে গিয়ে ভুল করেছে-তাদের অর্থছাড় এবং নতুন নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিই এর প্রমাণ।

তবে কানাডা আদালতের রায় প্রকাশ হওয়ার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গেছে। অর্থায়ন বাতিলের আগে সংস্থাটি যে ভাষায় কথা বলত, একটি স্বাধীন দেশের পক্ষে তা হজম করা কঠিন ছিল। এখন তার বদলা নেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছেন মন্ত্রীরা।

বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও তারা যেন বাংলাদেশের সঙ্গে পুনরায় এমন কোনো আচরণ করতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান।

ঢাকাটাইমসকে আতিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে সেটি তো এখন আর ধোপে টেকেনি। তবে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করাই ভালো হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে তারা যেন এমন আচরণ না করতে পারে সেজন্য বিশ্বব্যাংকের আমাদের যে নির্বাহী পরিচালক আছেন, তিনি সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি তুলতে পারেন। এতে করে বিশ্বব্যাংকও সতর্ক হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। তারা এখন আমাদের অনেক বেশি সমীহ করছে। অনেক উন্নয়ন কাজে তারা যুক্ত হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায়ে রেখে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’

আওয়ামী লীগের আগের সরকারের আমলে ২০১০ সালে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। তাদের এই প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ছিল। এই অভিযোগে তারা সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি তোলে।

বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলাও করে। তবে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি জানিয়ে মামলা করেনি দুদক। আর ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই এই প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। তারা সরে দাঁড়ানোর পর জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকা, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এডিবিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান সরে দাঁড়ায়। এরপর সরকার নিজ অর্থে সেতুর কাজ চালিয়ে নেয়।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল, কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ঘুষ দিয়ে পরামর্শকের কাজ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের অনুরোধে কানাডা সরকার সে দেশে মামলা করে এবং লাভালিনের তিন কর্মকর্তার বিচার হয়। স্থানীয় সময় শুক্রবার প্রকাশ হওয়া ওই রায়ে বিচারক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ ও ‘শোনা কথা’ বলে উড়িয়ে দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এমএম/ডব্লিউবি)