মধ্যপ্রাচ্যের ভবিতব্য

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪৮

মোহাম্মদ জমির

মার্কিন দেশের ক্ষমতার মসনদে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে তিনি যেসব হুম্বিতম্বি করেছেন, সেগুলো নিয়ে আগে থেকেই দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো। চমক দেখিয়ে তিনি যখন নির্বাচনে জিতে গেলেন, তখন শঙ্কা দেখা দিলো ট্রাম্প জামানা কী তার নির্বাচনী বক্তব্যগুলোর আলোকে পরিচালিত হবে। নাকি সেগুলো মেঠো বক্তব্য হিসেবে থেকে যাবে। পরের বিষয়টি হলেই কিন্তু আমরা খুশি হতাম। কিন্তু আমরা দেখছি ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মতো একের পর এক ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

মুসলিম দেশগুলোর প্রতি তিনি যথেষ্ট প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব রাখার আচরণ দেখিয়ে যাচ্ছেন। যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে মার্কিনদের বড়ো একটা অংশ। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার দেশের বিচার বিভাগও একমত হতে পারছে না কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এসবে কিছু আশার আলো অবশ্য রয়েছে।

যাই হোক ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ওয়াশিংটনের বিশ্বচিন্তায় যে বদল আসবে, তার আলামত কিন্তু একে একে দেখিয়ে যাচ্ছেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে মুসলিম প্রধান মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকা ট্রাম্প জামানা কেমন করে পার করবে। এক্ষেত্রে সিরিয়া, তুরস্ক, ইরান ও গালফ অঞ্চলে মার্কিন নীতি কোন পথে চলবে, তার কিছু কিছু আলামত কিন্তু এরইমধ্যে সামনে এসেছে। আইএস নিয়েও কিন্তু নতুন কিছু করার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

মার্কিন নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের বাক-বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে এটাই জানা গিয়েছিলো নতুন যিনি হোয়াইট হাউসে আসবেন, তিনিও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব-বলয় ধরে রাখতে চাইবেন। তবে আমরা চাইবো, তাদের প্রভাব যেন নৈতিকতার সীমা অতিক্রম না করে। তাদের প্রভাবের মধ্য দিয়ে যেন শান্তিময় একটি পরিবেশ ফিরে আসে মধ্যপ্রাচ্যে।

বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাকের মতো যুদ্ধ বিক্ষুদ্ধ অঞ্চলগুলোয় স্থিতি ফিরে আসে। দেশ দুটির সংঘাত যেন প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে। ইরান আর তুরস্ক যেন দ্বন্দ্বমুখর অবস্থাকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে না যায়। সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সর্বদাই যে একটি যুদ্ধংদেহী, মারমুখী অস্বস্তিকর পরিবেশ, তা দূর হলে গোটা বিশ্বই কিন্তু হাফ ছেড়ে বাঁচবে।

প্রথমে সিরিয়ার কথাই বলি। অনেকে বোদ্ধার মত হচ্ছে, চলতি বছরের সিরিয়ার অশান্তির আগুন নিভে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্য রাশিয়া ও তুরস্ককে যৌথ ভূমিকা রাখতে হবে। তারপরও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানের কাজটি অতো সহজ নয়। এই দিকটি দেখাতে গিয়ে পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী শুধু আলেপ্পো পুনরুদ্ধরাই করেনি, তারা সিরিয়ার প্রধান কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এভাবে তারা একটা স্বস্তিকর অবস্থানে আছে। এসব অবশ্যই সত্যি।

কিন্তু চলতি বছরে কী সিরিয়া যুদ্ধের অবসান হবে? বাশারের বিশ্বস্ত সহযোগীরা দারুণ লড়াই করছেন। তারা বেশ কিছু জয়ও পেয়েছেন। কিন্তু বাশার বাহিনীর পক্ষে গৃহযুদ্ধ এক্কেবারে থামিয়ে সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। বিভিন্ন দিকে তাদের জয়যাত্রা অবশ্য অব্যাহত আছে।

উত্তরাঞ্চলে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রেখেছে। তারপরও আলেপ্পো, দামেস্ক এবং এর আশপাশের এলাকায় শত্রপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাইছে তারা। আইএসের দখলে থাকা তেল সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেইর আল জোর উদ্ধারে নামতে হবে তাদের। যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্যে বিদ্রোহ করা অন্য এক পক্ষের বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে বাশার বাহিনীকে। হাত, বেহাতের খেলার মাধ্যমে পালমিরায় তারা আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছে। তবে এখানে আবার আইএসের আক্রমণের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই থাকতে হবে সরকারি বাহিনীকে। সমস্যাশঙ্কুল সিরিয়ায় সমস্যা কিন্তু আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কারণ এই অঞ্চল ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতি তার চেহারা পাল্টে ফেলতে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে নতুন একটি মাত্রা হচ্ছে ৭ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপ। এর মাধ্যমে তারা সিরিয়ার আল-বাব ও রাক্কা শহরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়তে রাজি হয়েছেন। দু’টো শহরই নিয়ন্ত্রণ করছে আইএস।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কয়েকজন কর্মকর্তা ৮ ফেব্রুয়ারি একথা জানিয়েছেন। সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা, শরণার্থী সংকট, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে দু’নেতার কথা হয়েছে এবং এরদোয়ান সিরিয়ার কুর্দি ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদেরকে সমর্থন না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান সেই কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, দু’দেশ যে কোনও ধরনের সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাছাড়া, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তুরস্কের অবদানের জন্য তিনি দেশটিকে স্বাগতও জানিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর মিত্রজোট ‘দ্য সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ) ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাক্কায় আইএসের বিরুদ্ধে প্রচারণার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ওয়াইপিজি মিলিশিয়ারা এই এসডিএফ এরও শরিক। নেটো মিত্র দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের অংশ হিসাবে তুরস্ক বরাবরই রাক্কা জঙ্গিমুক্ত করার অভিযানে অংশ নিতে চেয়ে এসেছে। কিন্তু এ অভিযানে তারা ওয়াইপিজি’কে কখনওই চায়নি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণে তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না। আঙ্কারা ওয়াইপিজি কুর্দি মিলিশিয়াদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবেই দেখে। তবে ৭ ফেব্রুয়ারির ফোনালাপে ট্রাম্প তুরস্কের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন উভয় দেশের নেতার কর্মকর্তারাই।

সিরিয়ার উত্তাপের যে সমীকরণ তাতে তুরস্কের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে বড় এক মাথা ব্যাথা রাশিয়া। এতে আবার কুর্দিদের ভাগ্যও জড়িয়ে আছে। সম্প্রতি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় রকমের সাফল্য অর্জন করেছে সিরিয়ার কুর্দিরা। এখন তারা উদ্বেগের সঙ্গে তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা বলা মুশকিল। সিরিয়া বিষয়ে কোনো চুক্তি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিত্যাগ করবে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সিরিয়ার ৬ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানে নতুন চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানুয়ারিতে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় সিরিয়া সরকার ও বাশার বিরোধী বিদ্রোহীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের উদ্যোগে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এ তিন দেশের মধ্যে এক রূপরেখা চুক্তির আওতায় আঞ্চলিক ক্ষমতা প্রভাব ভিত্তিতে সিরিয়া কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক অঞ্চলে বিভক্ত হবে। তবে  এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘের ভূমিকা থাকবে না। তুরস্ক ওয়াইপিজিকে এ যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাইরে রাখার দাবি জানানোর কারণে সিরিয়ার কুর্দিরা উদ্বিগ্ন। তুরস্কের নতুন কৌশলে কুর্দি এলাকাগুলো তার লক্ষ্যবস্তু হবে। আস্তানায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক আলোচনায় সিরিয়ার কুর্দিদের ব্যাপারে রাশিয়া কিছু ঘোষণা করেনি। কিন্তু তুরস্ক সিরিয়ার ভবিষ্যৎবিষয়ক কোনো পরিকল্পনায় কুর্দিদের বাইরে রাখতে দৃঢ়সংকল্প।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইএসের সর্বশেষ শক্তঘাঁটি ও কার্যত রাজধানী রাক্কা মুক্ত করার অভিযানে কুর্দি যোদ্ধাদের কোনো ভূমিকা না রাখার জন্য তুরস্ক বারবার অনুরোধ করেছে। আলেপ্পোর ঘটনায় দেখা যায়, তুরস্ক সিরিয়ায় শাসক পরিবর্তনের দাবি ত্যাগ করেছে। তুরস্ক আলেপ্পো থেকে ৪০ কি মি উত্তর পূর্বে আইএস অধিকৃত আল বাব দখলের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে।

কুর্দি যোদ্ধারা যাতে আফরিন ও কোবানি অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত এলাকা প্রতিষ্ঠা না করতে পারে সে জন্য তুরস্ক আল বাবের নিয়ন্ত্রণ চায়। তুরস্ক যদি আল বাব ছাড়িয়ে আরো অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কি করবে তা বলা মুশকিল।

তুরস্ক আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইকে মানবিজ শহরের নিকটে কুর্দি বাহিনীর ঘাঁটিগুলোর উপর আঘাত হানার জন্য ব্যবহার করছে বলে কুর্দিরা অভিযোগ জানিয়ে আসছে। বলা নিষ্প্রয়োজন যে কুর্দিরা যাতে সিরিয়ায় আরো ভূ-খ- দখল করতে না পারে সে জন্যই তুরস্ক সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কুর্দিদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র কতদূর যাবে? এ এমন এক প্রশ্ন যার জবাব এখন কেউই দিতে পারবে না। দেখতে হবে যে বাশার, তুরস্ক ও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি আলোচনা কীভাবে অগ্রসর হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে বিরোধের অন্যতম প্রধান বিষয় ফেতুল্লাহ গুলেনকে তুরস্কের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ নাকচ করা হলেও আরেকটি বিরোধের বিষয় হল আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন।

যুক্তরাষ্ট্র-কুর্দি রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে কুর্দিদের স্মৃতি তিক্ত। যুক্তরাষ্ট্র এক জটিল সময়ে কুর্দিদের পরিত্যাগ করেছিল। সিরিয়ার কুর্দিরা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরেোষ্ট্রর সমর্থন চায় এবং সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। কুর্দিরা ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠন করলে যুক্তরাষ্ট্র কুর্দি অংশীদারদের সমর্থন দিতে পারে যে ফ্রন্টে পিওয়াইডি ও কেএনসি সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে একসাথে কাজ করবে।

এদিকে বারাক ওবামার শেষের দিকে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কে ইতিবাচক এক মোড় দেখা দিয়েছিলো। হোয়াইট হাউসে এসে তাতে বাধ সাধলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে তার প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ ৩ ফেব্রুয়ারি ইরানের ১৩ নাগরিক ও এক ডজন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর দেশটির ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ট্রাম্প প্রশাসন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে লেখেন, “ইরান আগুন নিয়ে খেলছে- প্রেসিডেন্ট ওবামা তাদের প্রতি কতোটা দয়ালু ছিলেন তা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। আমি তেমনটি নই!” এর জবাবে ইরান বলে,  ‘একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির’ কাছ থেকে ‘অনর্থক’ আমেরিকান হুমকিতে তারা নতি স্বীকার করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন ও চীনভিত্তিক। ইরানের ইসলামিক রিপাবলিক রেভোল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরাও এর আওতায় আছেন।

গত ২৯ জানুয়ারি মাঝারি পাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় ইরান। এর মধ্য দিয়ে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত লংঘন করেছে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় হোয়াইট হাউস। এর প্রতিক্রিয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি তেহরান বলে, নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য চালানো এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তারা পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করেনি। এদিকে চলতি মাসের শেষ দিকে ইরানে অনুষ্ঠেয় একটি প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের কুস্তিগিরদের নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে তেহরান।

ইরান নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের বড় শক্তি সৌদি আরব নিশ্চয় খুশি হবে। এই দুই দেশই ইরানের পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়নকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বাদশাহ সালমান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি ফোনালাপ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। ইরান যে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে, সেটা মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উভয় ট্রাম্প-সালমান একমত হয়েছেন। ‘মৌলবাদী ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবিলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া-ইয়েমেনে ‘সেফ জোন’ তথা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে।

আবুধাবির যুবরাজ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও ট্রাম্পের টেলিকথন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউস জানায়, ইসলামী সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে কথা বলেছেন তাঁরা। এ ছাড়া আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণে শরণার্থীতে পরিণত হওয়া মানুষের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ট্রাম্পের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন আল নাহিয়ান।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে হলে উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশেও শান্তি থাকতে হবে। আমরা দেখেছি গাদ্দাফী-উত্তর লিবিয়ায় সেভাবে স্থিতি আসেনি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে পালাবদল হলেও মিশরে সামরিক এক নায়কের শাসনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। ইয়েমেনে চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। অথচ গণতন্ত্রের জন্য এই সাত বছরে আরব অঞ্চলে যে আন্দোলন-সংগ্রাম, তার শুরুটা কিন্তু হয় উত্তর আফ্রিকায়। অবশ্য আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়া গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছে।

সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঝঞ্ঝাবিক্ষুধ্ব পরিস্থিতি থেকেই যাচ্ছে। পৃথিবীজোড়াই কিন্তু এর নেতিবাচক ছায়া পড়তে পারে। যার বাইরে নয় বাংলাদেশও। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তাপ থাকলে তাদের অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে যেতে পারে, থমকে যেতে পারে তাদের উন্নয়নের চাকা।

মোহাম্মদ জমির : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও প্রধান তথ্য কমিশনার

ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/এমজেড/টিএমএইচ