আগুনে পুড়ল সামিরুনের সারা জীবনের সঞ্চয়

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫০ | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:০৮

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকায় চাঁন হাউজিং বস্তিতে আগুনে পুড়ে গেছে সামিরুন নেসার ৪০ বছরের সঞ্চয়। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। সামিরুনের মতো  আঞ্জুআরা বেগম, মনি, সালমা, রেহেনা আরো অনেকর ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বুধবার গভীর রাতে ওই বস্তিতে আগুন লেগে দেড় শ ঘর পুড়ে যায়। মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। কিছুতেই আহাজারি থামছে না তাদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বস্তিতে ঢোকার পথে শোনা যাচ্ছিল সামিরুন নেসার আহাজারি। তাকে ঘিরে আছেন অনেকে। কেউ এই বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত, কেউ বা পোড়া বস্তি দেখতে এসেছেন। সান্ত্বনা দেবে কে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সামিরুন বলেন, ‘বাবা, বাবা গো, আগুনে আমার সব শেষ। আমি এখন কোথায় যামু, কী করমু। দেশ স্বাধীনের পর থেইক্যা এইহানে আছি।  তিন বছর আগে স্বামী মইরা গেছে। দুই নাতিকে নিয়ে কোনোমতে খাইয়া বাঁইচা ছিলাম।’

সামিরুন বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘একটু একটু কইরা কিছু টাকা-পয়সা জমাইছিলাম। গ্রামের বাড়ি ভোলায় একটু জমি কিনমু। কিন্তু আগুনে পুইড়া সব শেষ।’

কত টাকা পুড়ছে জিজ্ঞাসা করলে চল্লিশোর্ধ্ব সামিরুন বলেন, ‘চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো ছিল।’

সামিরুন নেসার মতো আঞ্জুআরা বেগম তার স্বামীকে নিয়ে তিন মাস আগে নওগাঁ থেকে ঢাকায় আসেন। স্বামী ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। আর আঞ্জুআরা মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এক ছেলে এক মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকে।  আগুনে তাদেরও সবকিছু পুড়ে গেছে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত শাহানা বলেন, সবকিছু হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আগুন শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মোহাম্মদপুরের বাশঁবাড়ি এলাকার এই বস্তিতে ৪০০ থেকে ৫০০ ঘর ছিল। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তিটি অনেক দিনের পুরনো। এই জমির কোনো বৈধ মালিক নেই।  পাকিস্তান আমলের পরিকল্পনার ১২০ ফুট রাস্তার কিছু অংশ, আর কিছু বিরোধপূর্ণ জমির ওপর গড়ে উঠেছিল চাঁন হাউজিং বস্তি। তবে সেখানে যারা বসবাস করত তাদের কাছ থেকে কেউ কোনো ভাড়া কিংবা চাঁদা নিত না। তবে বস্তির পুরাতন বাসিন্দার কেউ কেউ দুই-একটি ঘর তৈরি করে ভাড়া দিত।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিব ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এর আগেও এই জমিতে চারবার আগুন লেগেছিল। এই নিয়ে পাঁচবার আগুন লাগল। তবে আগুন লাগার পর এই জমিতে আগের মানুষেরাই ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে। এতেই বোঝা যায় এটা নিছক দুর্ঘটনা। কেউ ষড়যন্ত্র করলে তো তারা এই জমিতে অন্য কিছু করার চেষ্টা করত। কিন্তু সেটা কখনো হয়নি।’

এখনো পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ ফেব্রুয়ারি/এএ/জেডএ/মোআ)