মাংস ধর্মঘট: খাসির বদলে মুরগির কাচ্চি

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:১২ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:১৩

আবদুল আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস

পুরান ঢাকার প্রখ্যাত নান্নার বিরিয়ানি খাবেন বলে তিন বন্ধুকে নিয়ে আসিফ হোসেন মিরাজ গেলেন লালাবাগ কেল্লার পাশে দোকানে। বললেন, ‘মামা চাইরটা কাচ্চি লাগাও।’

খাবার আসলো, ফুরফুরে মেজাজে খাবার মুখে তুলতে যাবেন, কিন্তু প্লেট দেখে ভিমড়ি খেলেন চারজনই। মিরাজ বললেন, ‘এইডা কী দিলা মামা? মুরগি কেন? তোমার কাছে কি কাচ্চি ছাড়া অন্য কিছু খাইসি?’

ওয়েটার উত্তর দিল, ‘মামা  মাংসের দোকান বদ্দ চাইর দিন, তাই মুরগি দিয়াই চালাইতাসি?’

মিরাজ বিরক্তি নিয়া বললেন, ‍‘ধুর মিয়া আগে কইবা না?’

পাশ থেকে মিরাজের আরেক বন্ধু মিরাজকে বলল, ‘থাক বন্ধু চেতিস না।  তা মামা আইজকা খাসি রাহনাই কে?’

ওয়েটার বলল, ‘মামা ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করতাসে। হেগ সবার দোকানে মাংস বেচা বদ্দ রাখসে। এর লইগ্গা গত চাইরদিন মুরগি দিয়া কাচ্চি আর মোড়গ পোলাও বেচতাসি। সমস্যা নাই মামা, মজা পাইবেন, খাইয়ালান।’

মিরাজ আর তার বন্ধুদের মত ভোজন রসিকরা গত চার দিন ধরে হতাশ। গরু বা খাসি বিক্রি প্রায় বন্ধ হোটেলে। অনিচ্ছা সত্বেও গুরু খাসির বিকল্প হিসেবে একই নামে চালিয়ে দেয়া মুরগির তৈরি কাচ্ছি বা অন্য খাবার খাচ্ছেন তারা।   

রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরা ও নামকরা বিভিন্ন বিরিয়ানা হাউজের তৈরি সুস্বাদু মাংস ভুনা, শিক কাবাব, বিফ ভুনা খিচুড়ি, কাচ্চি বিরিয়ানি ব্যবসায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে কমে গেল পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা একা বাসার বাইরের নিয়মিত ভোজন রসিকদের ভোজন বিলাস।

পুরান ঢাকার নান্নর বিরিয়ানী, হানিফ বিরিয়ানীর মতো স্বনামধন্য বিরিয়ানির দোকানগুলোতেও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল খাসি বা গরুর মাংসের সুস্বাদু বিরিয়ানির বিক্রি।

ধর্মঘটের কারণে গেল সোমবার থেকে মাংস ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান বন্ধ রেখেছেন। এই ধর্মঘট আগামী শনিবার পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।

মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে গরু আনার সময় বিভিন্ন জায়গায় বাড়তি টাকা এবং চাঁদা দেয়ার কারণে গরুর মূল্য বেশি রাখা হয়। তারা বেশি দামে কিনে আনেন, কিন্তু মাংসের দাম বেশি রাখতে পারছেন না। এ কারণে তাদের লোকসান হচ্ছে।

সীমান্তে, সড়ক পথ ও পশুর হাটের চাঁদাবাজি হচ্ছে অভিযোগ করে এসব বন্ধ না হলে মাংস বিক্রি বন্ধের কর্মসূচি সারাদেশেই ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।

তাদের এই ধর্মঘটের ফলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিরিয়ানি ঘরগুলোর ব্যবসা অনেকটাই স্থবির হয়ে পরেছে।

রাজধানীর মগবাজারের একটি খাবার হোটেলের ব্যবস্থাপন বলেন,  ‘আমাদের হোটেলে প্রতিদিন প্রায় দুই ডেগ গরুর মাংসের বিরিয়ানী বিক্র করতাম। মাংস ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে এখন মোড়গ পোলাও বিক্রি করছি। তবে এক ডেগই বিক্রি করা যায় না।’

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নান্নার বিরিয়ানি হাউজের এক বিক্রেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অহন আমগোর পুরান ঢাহায় গরু-খাসির মাংস নাইক্কা। হের লাইগ্গা মুরগির মাংস দিয়াই কাস্টোমারগো কাচ্চি খিলাইতাসি।’

গরু ও খাসির মাংসের দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে মুরগী ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে এই বিক্রেতার অভিযোগ।

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/এএকে/ডব্লিউবি)