প্রশ্ন ফাঁস টাকার জন্য নয়

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:২৪ | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:২৫

প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র একের পর এক অপকর্ম করে বেড়ালেও ধরা পড়ছে সামান্যই। প্রশ্নের বিনিময়ে টাকা ‘পরে দিলে’ কিংবা ‘না দিতে পারলেও’ হবে মর্মে বার্তাও হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা ইন্টারনেট মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। প্রশ্ন ওঠেছে, অবৈধপথে নগদ অর্থ উপার্জন করা যদি অপরাধীদের উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে কী চায় এরা? এই অপরাধ কি তাহলে দীর্ঘমেয়াদি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ?

নিরুপায় হয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ অপরাধ দমনে হুমকি-ধামকি করছেন বটে। কিন্তু এ যেন বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো। সরকারি কোনো পদক্ষেপেই রোধ করা যাচ্ছে না প্রশ্ন ফাঁসের প্রক্রিয়া। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় নানা পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠছে একের পর এক। ফাঁসকারীরা ‘হোয়াটসঅ্যাপ’সহ নানা ইন্টারনেট মাধ্যমে প্রশ্নের কপি তুলে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের 'টাকা পরে দিলেও হবে' জাতীয় আহবানে নিজেদের অনেকটা বাধাহীনভাবেই যেন অপকর্ম করে যাচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁস করে অবৈধ পথে নগদ অর্থ হাসিল করা এইসব ফাঁসকারীদের মূল উদ্দেশ্য নয়। তাহলে কী চায় এরা? তবে কি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভিতকে দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় দুর্বল করার কোনো ষড়যন্ত্রে নেমেছে দুর্বৃত্তচক্র?

ফেইসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলাখুলিভাবে অপরাধীরা প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষার্থীদের আহ্বান করছে। পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারের নানা মহলে যোগাযোগ করছে; সংবাদমাধ্যমগুলো স্বউদ্যোগে ফাঁসকৃত প্রশ্নের প্রমাণ সংগ্রহ করে জনসম্মুখে তুলে ধরছে।

সরকার যদিও বলছে কেউ রেহাই পাবে না, কিন্তু অপরাধীরা ধরা পড়ছে সামান্যই। সম্প্রতি এসএসসি’র গণিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এপর্যন্ত ছয়জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তারা এখন কারাগারে আছে। এতে জনমনে আতঙ্ক, উদ্বেগ কমছে না। সরকার কি তাহলে প্রযুক্তিতে দক্ষ অপরাধীদের সঙ্গে পেরে উঠছে না? আর ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়িয়ে দিতে অপরাধীরা কেন বিশেষ করে হোয়াটস্যাপ মাধ্যমকে ব্যবহার করছে?

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অপরাধীদের ধরতে হলে শুধু প্রযুক্তির পেছনে ছুটলে হবে না। ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন কিভাবে অপরাধীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে তার হদিস করা সবার আগে দরকার। প্রযুক্তি মানুষকে ব্যবহার করে না, মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে।

বুয়েটের ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রশ্ন তো আর প্রযুক্তির জন্য ফাঁস হচ্ছে না। ফাঁস করছে মানুষ। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা ফাঁসকৃত প্রশ্ন হয়ত ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে কি না, সেটা আগে দেখতে হবে’।

এদিকে দেশের শিক্ষাবিদরা বলছেন, পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছে তারা মাঠপর্যায়ের। তাদের ধরলে প্রশ্নফাঁস থামবে না। ধরতে হবে মূলহোতাদের। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শাস্তি না পাওয়ায় প্রশ্নফাঁস হয়েই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশে যারা অপকর্ম করে। তাদের শাস্তি নেই। গত ২০ বছরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে কারও শাস্তি হতে দেখিনি। মূল হোতাদের ধরা হয়নি’।

যে ছয়জনকে ধরা হয়েছে তারা আবার ছাড়া পেয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার বাণিজ্যিক বাজার সৃষ্টি হওয়া আরেকটি মারাত্মক ব্যাধি। দেখুন পরিবারগুলো বাজারমুখী হয়ে পড়ছে। আগামী ১০ বছরে এই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ সবারই টার্গেট, যে করেই হোক জিপিএ-৫ পেতে হবে। আর এতে পরিবারও অসৎ উপায়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। চারদিকে নানা বাজার। প্রশ্নফাঁস বাজার, কোচিং বাজারসহ নানা বাজারে তারা আকৃষ্ট হচ্ছেন। সুতরাং মূল হোতারা যতোদিন বাইরে থাকবে ততোদিন এটার মীমাংসা হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘জালিয়াতচক্রকে ধরতে হবে। তাদেরকে কোনো ধরনের সুযোগও দেয়া যাবে না, যাতে তারা সাহসও না পায়। অপরাধীদের শক্তভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে ঘটনা ঘটছে সেটা স্যোশাল ক্রাইম। এর বিচার বিদ্যমান আইনের করা না গেলে প্রয়োজনে নতুন আইন করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই অপরাধ এমন যেটা জাতিকে বিনষ্ট করছে। এটাকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে।’

প্রশ্ন ফাঁসকাকারীরা টাকা পর্যন্ত নিতে চাচ্ছে না। তারা বলছে- ‘আগে প্রশ্ন নাও। সব মিলে গেলে টাকা পরে নেবো’। তাদের এমন ভাষ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বিষয়টি তো অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তাদের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে, যাতে তারা সুযোগ এবং সাহস কোনোটিই না পায়।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ‍নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা বসে নেই। অপরাধীরা ধরা পড়বেই। তাদের শাস্তিও নিশ্চিত হবে। আমরা ছেলে-মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলতে দেবো না।’

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বারের মতো প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে গত রবিবার। ঢাকাসহ তিনটি বোর্ডের অধীনে রবিবার অনুষ্ঠিত গণিত (আবশ্যিক) পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ফাঁসের এ অভিযোগ স্বয়ং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানও স্বীকার করেন। শিক্ষামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। বলেছেন, প্রমাণ পেলে গণিত পরীক্ষা বাতিল হবে।

এসএসসিতে ঢাকা বিভাগের গণিতের প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ঢাকা ও বরিশাল বোর্ডের দুটি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মিলেছে হোয়াটস অ্যাপে, তা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গেও মিলে গেছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বরিশাল ও ঢাকা বোর্ডের শারীরিক শিক্ষা এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা বোর্ডের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগের রাতেই মিলেছে এই মেসেজিং অ্যাপে যোগাযোগের মাধ্যমে।

ঢাকা বিভাগের গণিতের মতোই ফেইসবুক পাতায় এই প্রশ্ন বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল; পরীক্ষার আগের রাতে ফেইসবুকেও মিলেছে এবারের সৃজনশীল ও এমসিকিউ প্রশ্ন। একাধিক ফেইসবুক পাতা ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আগের রাতে দুটি পরীক্ষারই প্রশ্ন পাওয়া যায়। পরদিন মূল প্রশ্নের সঙ্গে তা হুবহু মিলে যায়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আন্তঃবোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার জানান, আমাদের কাছে আর কোনো প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য নেই। আমরা এমন কিছু পাইনি এর মধ্যে।

(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/এমএম/এসএএফ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির নিন্দা 

কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীদের গাবতলিতে স্থানান্তর করা হবে

বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই পরাজিত হয়েছে: মজনু

বোনের পর চলে গেল শিশু তাওহিদও, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১

রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের লিডারসহ ২০ সদস্য আটক, অস্ত্র উদ্ধার

‘আর সহ্য করতে পারছি না’ বলেই সাত তলা থেকে লাফিয়ে তরুণের মৃত্যু

এনএসআই’র নতুন পরিচালক সালেহ মোহাম্মদ তানভীর

বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য ১৬৫০ টন পেঁয়াজ কিনবে ভারত সরকার

যারা আমার মায়ের হাতে খাবার খেত, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকার ৫৫০ বিআরটিসির বাস ঈদে সারাদেশে চলবে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :