যশোরে ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন না চাষিরা

মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর)
 | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:১৮

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় আলুর দাম না পেয়ে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন না। ফলন ভালো হলেও দাম পাওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বর্তমানে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আলু চাষিদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে সুদে মহাজন ও পাওনাদারের ধারদেনার কড়া তাগেদায় প্রান্তিক চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ডাইম, কাডিন্যাল, গ্র্যানুলা ও ডিভাইন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪৫৫ হেক্টরে। গতবার শেষের দিকে আলুর দাম বেশি পেয়ে এ বছর আলুচাষে ঝুঁকে পড়েন চাষিরা। ফলে লক্ষ্যমাত্রায় চেয়েও ৮৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেশি হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫১০ মেট্রিকটন।

ফলনের ব্যাপারে ডিভাইন এগ্রো টিস্যু কালচার লিমিটেড’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল মঈন বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে কৃষকরা উৎপাদিত আলুর দাম পাচ্ছেন না। তবে আলুর ন্যায্য দাম পেলে দেশের অর্থকারী এ ফসলটি আগামী দিনের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

এদিকে এ বছর শীতে বৃষ্টি ও প্রচণ্ড কুয়াশা না হওয়ায় আলু ক্ষেতে কোন প্রকার ভাইরাস বা পোকার আক্রমণ হয়নি। ফলে আলু চাষিদের আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে।

ভুক্তভুগী কৃষকরা জানান, ভাল আলু ফলাতে তারা উচ্চমূল্যে বীজ, সার, ডিজেল, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ ক্রয় করে আলু চাষ করেছিলেন। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও আলুর ফলন ভাল হবে। তবে দাম কমে যাওয়ায় ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়া গ্রামের আলু চাষি শাহিনুর রহমান জানান, অনেক বর্গাচাষি উচ্চ-সুদে মহাজনদের নিকট থেকে দাদন নিয়ে ও নিজের সংসারের ঘটিবাটি বিক্রি করে আলু উৎপাদন করলেও দুশ্চিন্তা তাদের পিছু ছাড়েনি। রক্ত পানি করে উৎপাদিত আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।

উপজেলার বড়খানপুর গ্রামের আলু চাষি আমানুর রসুল জানান, সরকার সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমাবার কল্পকাহিনী মুখে বললেও বাস্তবে তা আগের তুলনায় বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। আমি নিজে এ বছর ৪ বিঘা জমিতে ডিভাইন নতুন জাতের আলু চাষ করেছি। বাজারে আলুর দাম কম থাকায় খুবই দুশ্চিন্তায় আছি,তাই এখন তুলছি না। আরো কিছুদিন পর তুলে ডিভাইন কোল্ডস্টোরে (হিমাগারে) রাখব।

তিনি আরো জানান, সরকার মুখে দিন বদলের কথা বললেও বাস্তবে মেলেনি তার সত্যতা। তাই আলুর উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদিত আলুর দাম বাড়েনি। এক কেজি আলুর উৎপাদন খচর আনুমানিক ১৪/১৫ টাকা যা বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা কেজি। ফলে অনেকে ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন না।

আলু চাষি উপজেলার পেটভরা গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, সার-ডিজেলের দাম কমছে সরকারের খাতা-কলমে, বাস্তবে তার সুফল চাষির পাচ্ছেন না। সার ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে বেশি দরে সার কিনতে হয়েছে। বীজ ক্রয় করে চাষ থেকে আলু বাড়িতে আনা পর্যন্ত ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমপিও সারসহ বিঘাপ্রতি প্রায় ২৮০ কেজি রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। যাতে বীজ, সার, সেচ, চাষ, জমিলিজ, পিলিবাঁধা, উত্তোলন, বাজারজাতকরণ, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে খরচ পড়ে বিঘা প্রতি ৩৫/৩৬ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এ বছর আলু ফলেছে ৯০/৯৫ মণ পর্যন্ত। নিজের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বাদ দিলেও প্রতিকেজি আলুর দাম পড়ে ১৪/১৫ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ টাকা। তাই আলুর ফলন ভাল হলেও দাম না থাকায় বিঘাপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

বর্তমান বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৩২০ টাকা মণ দরে। সরকারিভাবে আলু সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না থাকায় উৎপাদিত আলু নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

হাজরাখানা গ্রামের আলু চাষি লিয়াকত আলী জানান, আলুর দাম না বাড়লে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম শাহাবুদ্দীন জানান, এ বছর উপজেলার পেটভরা, হাজরাখানা, আজমতপুর, ধুলিয়ানী, যাত্রাপুর, বাটিকামারী, বাদেখানপুর, স্বরুপদহ ও পৌর এলাকার ইছাপুর, পাচনামনা, বিশ্বাসপাড়া, চানপুরসহ ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বেশি-বেশি আলুর চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে তবে দাম অনেকটাই কম।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জানান, ভাতের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় আলুর চাহিদাও রয়েছে। তবে সরকারিভাবে আলু সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকা ও দাম কম হওয়ায় কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :