শিগগির নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি

খুলনা ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৪৯ | প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৪০

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র, সংবিধান এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে। যে কারণে নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরিতে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়। এখন নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করছে বিএনপি। যা শিগগির প্রস্তাব আকারে জাতির সামনে পেশ করা হবে।

শনিবার দুপুরে খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ‘সুষ্ঠু অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনা শাখা এ সভার আয়োজন করে। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. সেখ মো. আখতার-উজ-জামান।

সভায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে চুরমার এবং ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা ওপর জনগণ এবং দেশ-বিদেশের কারও আস্থা নেই। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সার্চ কমিটি গঠনসহ রাষ্ট্রপতিকে ১৩ দফা প্রস্তাব দেন। জাতির প্রত্যাশা ছিল রাষ্ট্রপতি সব বিচারে নিরপেক্ষ, যোগ্য এবং জাতীয় মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে একজন সিইসি নিয়োগ দেবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে তার ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন না ঘটিয়ে তিনি একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। যিনি বিতর্কিত ও দলীয়। তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

সংবিধান পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধান রচিত হয়েছে জনগণের প্রয়োজনে। জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকতো না। এখন আওয়ামী লীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণের ভোট এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

তিনি সংবিধানকে কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে বারবার সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করতে হবে।’ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের পেশাজীবীদের দেশব্যাপী জনমত তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আমির খসরু বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্র, সংবিধান এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে পথ চলবে। কিন্তু এ পথ শেষ হলে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে।’ তবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘দেশের পেশাজীবীরা এখন সবচেয়ে দুঃসময় অতিক্রম করছে। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। শওকত মাহমুদকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার। বিরোধী মতকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালিয়েছিল। বাসে আগুন ধরিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেছিল।’ বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার কারাগারে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এভাবে ধুকে ধুকে মরার চাইতে আসুন আমরা একবার বীরের মতো মরার সিদ্ধান্ত নেই। আমার সেই সিদ্ধান্ত নিলে এই ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে বাঁচার পথ পাবে না।’

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ভোট এখন দিবা-রাত্রি ম্যাচে পরিণত হয়েছে। অর্ধেক ভোট রাতে হয়ে যায়, বাকি অর্ধেক হয় দিনে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনীতিতে পেশাজীবীদের গুরুত্ব বেড়েছে। জনগনকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করতে রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি পেশাজীবীরাও তৎপরতা চালাবে। ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচাররা সব সময় চেয়েছে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। কিন্ত গণজাগরণ ও গণপ্রতিরোধের মুখে তাদের সবারই করুণ পতন ঘটেছে।’

শওকত মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে এবং তার প্রস্তাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না। আমার নির্বাচনকালীন সরকার চাই।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।’ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংগঠনকে শক্তিশালী করা ও আন্দোলন সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নেন খুলনা মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেসিসির মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, ড্যাবের সভাপতি ডা. রফিকুল হক বাবলু, প্রকৌশলী কাওছার আলী, সাংবাদিক নেতা শেখ দিদারুল আলম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজমুস সাদাত, কলেজ শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল।

ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম জুয়েল ও সাংবাদিক এহতেশামুল হক শাওনের সঞ্চালনায় আলেচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আলোচনা সভায় অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/এসএএইচ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আ.লীগের ‘মানা’

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি নেতা হাবিব কারাগারে

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভাঁওতাবাজি': আমীর খসরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :