চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ‘মামা-মামি’র দর্শন

ইব্রাহীম খলিল, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৩২

কবে থেকে জানা নেই, তবে মামা হিসেবেই সমাজে সমাদৃত হিংস্র আর মাংসাসী চারপেয়ে প্রাণী বাঘ। আর ভিনদেশী প্রাণী সিংহীকেও মামি বলে ডাকছেন কেউ কেউ। এই মামা আর মামি দেখতে এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ভিড় উপচে পড়া।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গেলেই শোনা যায় এই বাঘ মামা ও সিংহ মামির হুঙ্কার। গত দুই মাস ধরে এই হুংকার শুনতে তার তাদেরকে কাছ থেকে দেখতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

‘মামা’, ‘মামি’র হুঙ্কার কেবল চিড়িয়াখানা নয়, সীমানাপ্রাচীরের বাইরে থেকেও শোনা যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আজাদ সাহেবের বাড়ি চিড়িয়াখানা থেকে খানিকটা দূরেই। তার ১১ বছর বয়সী ছেলে সমু আর আট বছর বয়সী শানুর এই ডাক ভীষণ পছন্দ। আজাদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাতে প্রাণী দুটির হুংকারে মাঝেমধ্যে ঘুম ভেঙে যায়। বাচ্চাদের ভালোলাগা দেখে আমার ভালোই লাগে।’

সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, খাঁচার ভেতর বানানো গাছের ওপর বসে আছে বাঘ। বাইরে মা-বাবার সঙ্গে আসা শিশু রাহাত চিৎকার দিয়ে উঠলো, ‘কত বড় বাঘ!’। খাঁচার ভেতরে হাঁটতে থাকা বাবাকে দেখে পরক্ষণে সে আবার বলে উঠে, ‘বাঘটা যে এদিকে আসছে’। এ কথা বলেই বাবাকে জড়িয়ে মুখ লুকায় শিশুটি। তার এই বিস্ময় আর ভয় দেখে মুচকি হাসেন অন্য দর্শনার্থীরা।

রাহাতের বাবা সোলায়মান বলেন, ‘বাচ্চাকে নিয়ে আগেও কয়েকবার চিড়িয়াখানায় এসেছিলাম। তখন বাঘ-সিংহ ছিল না। বাঘ-সিংহ আসার খবর অনেক আগে পেলেও সময় করে উঠতে পারিনি। তাই আজ (শুক্রবার) ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। বাঘ ও সিংহ দেখে খুব ভাল লেগেছে।’ জন্মলগ্ন থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এ পর্যন্ত তিনটি বাঘ আনা হয়েছিল। সর্বশেষ ভীম ২৩ বছর বয়সে ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর মারা যায়। এরপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ছিল বাঘহীন। এর আরও ৫-৬ বছর আগে মারা যায় ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে আনা সিংহ-সিংহীও। পরে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাজাহার সাফারি পার্কে চিঠি দিয়েও সাড়া না পেয়ে রংপুর থেকে সিংহ দম্পতি নোভা-বাদশা ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় দুটি বাঘ।

বাঘ ও সিংহ দেখে অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে খাঁচার নিরাপত্তা রেলিং টপকে কাছে চলে যান। তাই বেশি কাছে গিয়ে কেউ যাতে থাবায় না যায়, তার জন্য রেলিংয়ের ওপর লোহার জাল দিয়ে দর্শনার্থীদের সাথে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। এতেও উৎসাহ থেমে নেই। বরং জালেই নাড়া দিয়ে বাঘ-সিংহের মনযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা চলে দিনভর।

চিড়িয়াখানার সহকারী ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন জানান, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ আনা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। গণমাধ্যমের সুবাদে সে কথা জেনে গেছে নগরবাসী। এর আগে সিংহী নোভা ও সিংহ বাদশার বিয়েতে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।

ইকবাল হোসেন বলেন, বাঘটিকে যেদিন আনা হয় সেদিন দর্শনার্থীদের ভিড় জমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। সে থেকে ক্রমেই বাড়ছে দর্শক। ফলে বাঘ ও সিংহের হুঙ্কারে প্রতিদিন মিলেমিশে একাকার হচ্ছে জনকোলাহলও। যা গত এক দশকেও দেখা যায়নি।

চিড়িয়াখানার চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, গত এক দশক ধরে চিড়িয়াখানায় বানর, হরিণ, ভালুক, সারস, কুমির, ময়ূর, সজারু-এসব দেখেই মন ভরাতে হতো দর্শনার্থীদের। কিছুটা বিনোদন পূরণ হতো ভালুক আর বানরের ছুটাছুটি দেখে। কিন্তু সব কিছু শেষে সেই বাঘ-সিংহের অভাবই শূণ্যতা জাগিয়ে তুলতো দর্শনার্থীদের।

শাহাদাত হোসেন বলেন, কিন্তু এখন কেউ এলেই প্রথমে চলে যান বাঘের খাঁচার দিকে। এরপর পাশের সিংহের খাঁচার কাছে। বাঘ আনার পর থেকে দর্শনার্থী আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘বাঘ ও সিংহ আসার পর চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় আমাদেরকে আনন্দিত করছে’। তিনি জানান, তারা নতুন নতুন প্রাণী নিয়ে আসবেন। চিড়িয়াখানার সামনে পাখির অভয়ারণ্য তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এভিয়ারি পার্কে পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের পদচারণা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা