পদ্মায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব টিআইবি এখন চুপ

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৩৪ | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:০৮

পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলার পর থেকে বারবার এ নিয়ে কথা বলেছে টিআইবি। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে তারা বিবৃতি দিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বিশ্বব্যাংকের দাবিকে নাকচ করে দেয়ার পরও টিআইবি ‘স্বাধীন’ ও ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু কানাডার আদালতে এই মামলা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সংস্থাটির।

বিশ্বব্যাংক দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর বেশ কিছু সংগঠন এবং ব্যক্তি আগপিছ চিন্তা না করেই এই ভাষ্যকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যকেই সত্য ধরে নিয়ে সরকারকে একের পর এক আক্রমণ করেছেন তারা।

২০১২ সালের ৩০ জুন বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করার পর পর টিআইবির বিবৃতি আসে গণমাধ্যমে। অথচ কানাডা আদালতের রায় প্রকাশের পর ১০ দিন সময় পার হয়ে গেলেও টিআইবি এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াই জানায়নি। যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ নিয়ে কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়া প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিদেশি সংস্থার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কিন্তু যেসব বিষয়ে তারা কথা বলতে পারে না, এখতিয়ারের বাইরে গিয়েও তারা এসব নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ যে সঠিক ছিল না, সেটা না বোঝার কারণ নেই। কারণ যেখানে সেতুর কাজই শুরু হয়নি, সেখানে দুর্নীতি কীভাবে হলো?’

ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতির পর টিআইবির প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় লাগেনি

পদ্মাসেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি ছিল। কিন্তু তিন বছরের টানাপড়েনের পর ২০১২ সালের ৩০ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সে চুক্তি বাতিল করে তারা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই গণমাধ্যমে আসে টিআইবির বিবৃতি। এতে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক, নৈরাশ্য-ব্যঞ্জক ও লজ্জাজনক। একইসঙ্গে টিআইবি অনতিবিলম্বে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত বিচারিক কমিটি গঠন করে অভিযোগটির তদন্ত করতে আহবান জানায়।’

ওই বিবৃতিতে এও বলা হয়, ‘টিআইবি মনে করে, দুর্নীতি শুধু ঘুষ আদান-প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা প্রভাব প্রয়োগ বিবেচনায় নিতে হবে।’

বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বাতিলের আগে সংস্থাটির পরামর্শ অনুযায়ী একটি বিশেষ দল গঠন করে অভিযোগের তদন্ত করে দুদক। কিন্তু তারা সে সময়ে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার মত কিছু পায়নি। টিআইবির কাছে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার এই তদন্তকে পূর্ণাঙ্গ মনে হয়নি। তারা বিবৃতিতে ‘সরকারের কাছে একটি উচ্চপর্যায়ের স্বাধীন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য বিচারিক কমিটি গঠনের অনুরোধ জানায়’।

টিআইবি বলে, ‘কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশ প্রদান করবে; যা একই সময়ে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণ হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

এখন যা বলছেন টিআইবি প্রধান ইফতেখারুজ্জামান

যে অভিযোগ নিয়ে এতসব তুলকালাম হলো, সেই অভিযোগকে কানাডার আদালত বলেছে গালগপ্প। বিচারক বলেছেন, বিশ্বব্যাংক গুজবের ওপর ভিত্তি করে মামলা করেছে। আবার একজন দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার কাজ না পেয়ে উড়ো অভিযোগ করেছিল এবং সেটাকেই সত্য ভেবে নিয়ে মামলা করা হয়েছিল।

এই রায় প্রকাশের পর জাতীয় সংসদে পদ্মাসেতু নিয়ে অভিযোগকারীদেরকে তলবের দাবি উঠেছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে খুঁজে বের করতে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। কানাডার আদালনের রায় প্রকাশের পর যারা সে সময় বিশ্বব্যাংকের সুরে কথা বলেছিলেন তারা আছেন চাপে। কিন্তু তাদের কারও পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি গণমাধ্যমে।

কানাডা আদালতের রায়ের পর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে টিআইবি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না কেন-জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটাতে বিবৃতি দেয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে আমরা বলেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই। কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, বিশ্ব ব্যাংক যে অভিযোগ করেছে সেগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্য ছিল না।’

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি প্রধান বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে বা প্রকল্পে দুর্নীতি হয় তাহলে অভিযোগ করতে পারে। সেটি আদালতে প্রমাণিত হতে হবে। যদি আদালতে প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিচার হবে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে কাউকে শাস্তি দেয়া যায় না। বিশ্বব্যাংক যেটা করেছে সেটা হলো,তদন্ত হওয়ার আগেই বাংলাদেশ থেকে তাদের অর্থ তুলে নিল। অর্থাৎ তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে বাংলাদেশকে তারা শাস্তি দিল। এটা আইনের শাসনের পরিপন্থি। এখন এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা দেয়া উচিৎ, কেন তারা পদক্ষেপটি নিয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের জবাবদিহি করার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।’

তাহলে আপনাদের প্রতিক্রিয়াও কি অযৌক্তিক ছিল?-জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা বিচারিক তদন্ত চেয়েছিলাম। একইসঙ্গে আমরা পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ যে ক্ষেত্রেই উঠুক না কেন, আমরা সঠিক যথাযথ তদন্ত চাই। আমরা কখনো বলেনি পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমরা বলেছি, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে, সেটার তদন্ত আমরা চেয়েছিলাম। এটা স্বাভাবিক।’

এরপর ইফতেখারুজ্জামান আবার এসএমএম পাঠান ঢাকাটাইমসকে। এতে তিনি বলেন, ‘টিআইবি কখনো এই অভিযোগ (পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার) করেনি। আমরা শুধু চেয়েছিলাম সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ তদন্ত হোক। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাংকেরর কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে কেন অর্থায়ন প্রত্যাহার করা হল। কিন্তু কখন আমাদের এই প্রশ্নের জবাব দেয়নি। আমরা সব সময় বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের শাসনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখেছি। অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে সাজা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে এবং টিআইবি এর প্রতিবাদ করেছে। বিশ্বব্যাংক মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে নিয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টিআইবিকে মেলানো খুবই দুঃখজনক।’

ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/এমবি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :