গণমাধ্যমে বিজয় সরকারের গান প্রচারের দাবি

ফরহাদ খান, নড়াইল
 | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:১৭

একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীসহ অন্যান্য সময়ে তার গান টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারের দাবি করেছেন ভক্তরা।

এদিকে, বিজয় সরকার সংগ্রহশালা নির্মাণ এবং স্বরলিপি প্রকাশের দাবিও উপেক্ষিত রয়েছে। এছাড়া দেখভালের অভাবে কবির বসতভিটা পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়।

২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ছোট পরিসরে ‘বিজয় মঞ্চ’ নির্মিত হলেও দেখার কেউ নেই। প্রায় সারা বছরই কবির বসতভিটায় ঝোঁপজঙ্গলসহ ময়লা-অবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। নেই টিউবওয়েল ও টয়লেট ব্যবস্থা। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কবির ব্যবহৃত খাট, পাঞ্জাবি ও পাদুকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিজয়ভক্ত নড়াইলের টাবরা গ্রামের স্বপন কুমার সরকার বলেন, প্রকৃত সুর ও সঙ্গীতসহ বিজয় সরকারের গান বিটিভি, রেডিও এবং অন্যান্য চ্যানেলগুলোতে খুব একটা প্রচার হয় না। এতে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিজয় সরকারের গানের কথা ও সুর অজানা থেকে যাচ্ছে। আমাদের দাবি তার (বিজয় সরকার) জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিওতে গান প্রচার করতে হবে।

লোহাগড়ার দিঘলিয়া গ্রামের ভিক্টোরিয়া আক্তার বলেন, বিজয় সরকারের গানের কোনো স্বরলিপি না থাকায় আমরা নবীন শিল্পীরা লোকমুখে শুনে বিজয়গীতি গেয়ে থাকি। এ কারণে বিজয় সরকারের গান চর্চা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী বলেন, বিজয় সরকারের স্মৃতি ধরে রাখতে সংগ্রহশালা নির্মাণসহ গানচর্চার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

আমাদা আদর্শ কলেজের শিক্ষার্থী চঞ্চল, উজ্জ্বল, দিতি, শ্রাবণী, লিজা ও রাবেয়া জানান, বিজয় সরকারের বসতভিটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে দর্শনার্থীরা সহজে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারেন না।

বিজয় সংসদের নির্বাহী সদস্য নড়াইলের সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ বলেন, বিজয় সরকারের বাসভবনসহ তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র অযত্ন অবহেলায় রয়েছে। কবিকণ্ঠের গানগুলো সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। তার কর্মময় জীবন ও স্বরলিপি প্রকাশেরও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। গুণী এই শিল্পীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে।

জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে আমরা পত্র দিয়েছি। আশা করছি, বিজয় সরকারের জন্মদিনে (২০ ফেব্রুয়ারি) টেলিভিশন ও বেতারে তার গান প্রচার হবে। এক্ষেত্রে গান প্রচার হলে সেই র‌্যায়ালিটি যেন বিজয় সরকারের পরিবারের সদস্যরা বা বিজয় সংসদ পায়, সে ব্যাপারেও পত্র দিয়েছি। এছাড়া বিজয় সরকারের স্মৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

বিজয় সরকার অসংখ্য জনপ্রিয় গান গেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/ সে আমারে ভুলবে কেমনে...।

প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে লিখেছেন- তুমি জানো না, তুমি জানো না, জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা/তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছি, মনে আপন মেনেছি/ তুমি বন্ধু আমার এ মন মানো না...।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি বিজয় সরকার গেয়েছেন- নবী নামের নৌকা গড়/ আল্লাহ নামের পাল খাটাও/ বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/ কূলের তরী খুলে দাও...।

আল্লাহ রসূল বল মোমিন/ আল্লাহ রসূল বল/ এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/ সোজা পথে চল...।কিংবা মন বিল্লালের আযান শুনে দিল্ কাবাতে নামাজ পড়...।

বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামেই কেটেছে কবির বেশির ভাগ সময়। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোকগমন করেন বিজয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :