নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র-বিস্ফোরকসহ জেএমবির তিন সদস্য আটক

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের ( জেএমবি) তিন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ‘জেহাদি’ বই, দেশীয় অস্ত্র, ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন তারা জেএমবির গায়েবি এহসার সদস্য।

সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী র‌্যাব ১১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সোমবার ভোরে সোনারগাঁও থানার কাচঁপুর এলাকা থেকে জেএমবি সদস্য মো. মোস্তফা ওরফে মোস্তু ওরফে শামীমকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোগরাপাড়া এলাকা থেকে আবু রায়হান ওরফে হিমেল এবং মো. শরিফুল ইসলামকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে সাতটি ‘জিহাদি’ বই, ৪৬টি লিফলেট, পাঁচটি দেশীয় অস্ত্র চাপাতি, পাঁচটি ককটেল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, দুটি স্কচটেপ উদ্ধার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমজি) এর সক্রিয় সদস্য এবং সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তারা এও স্বীকার করেন যে, জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন আমির এবং মৃত্যুদণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ও মৃত্যুদণ্ড সাজা কার্যকর হওয়া শায়েখ আব্দুর রহমানের অনুসরণকারী। এই তিন সদস্য নিজ নিজ এলাকা ও এলাকার বাইরেও সাংগঠনিক বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে সংগঠনের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল।

র‌্যাব আরও জানায়, আবু রায়হান ওরফে হিমেল বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সরকারি সফর আলী কলেজে সমাজ কর্ম বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তিনি তৌহিদের (৩২) মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন। তৌহিদের মাধ্যমে তার জেএমবির অপর সদস্য সাকিবের (২৫) সাথে পরিচয় হয়। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বাজারে সাকিব প্রায় তার সাথে দেখা করতে আসতেন এবং সাংগঠনিক বিষয়ে তারা আলোচনা করতেন। তিনি সাকিবকে ইয়ানত (চাঁদা) বাবদ ২০০ টাকা প্রতি মাসে দিতেন। সাকিবের মাধ্যমে অন্যান্য জেএমবির সদস্য আকাশ, রোকন ও আমিনদের পরিচয় হয়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে তিনি চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৬ সালের মার্চ মাস হতে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফা ওরফে শামীম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে তার এলাকার মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সংসারের অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকেন। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তিনি নব্য মুসলিম হাসমত নামক এক অপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে দীক্ষিত হন। তখন থেকে নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যোগদান এবং জিহাদে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার নিজ গ্রামের সাকিবের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সাকিবের মাধ্যমে গাজীপুর শালবাড়ী/শালনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তিনিসহ মোট ছয়জন মিলে ২৫ দিনের জিহাদি প্রশিক্ষণ নেন। সাকিবের মাধ্যমে তিনি মোবাইলে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার ভিডিও ও লেকচার পেতেন। তিনি সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনের জন্য প্রতি মাসে ইয়ানত বাবদ ৫০/১০০ টাকা দিতেন। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনের অপর এক সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ইয়ানত বাবদ টাকা সাকিবের পরিবর্তে ওই সদস্যের কাছে দিতেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে আসাদ (২৫), শিমুল (২৬) এবং সাইদুল (২৬) তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। সংগঠনের জন্য তিনি এলাকার বাছেদ ও সিদ্দিক ওরফে আকাশ ও সোহেল রানাকে প্রশিক্ষণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে সাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা পাঠান। তিনি ২০১৫ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন ধামরাইয়ের শরফ বাগ ইসলামিয়া কামেল মাদ্রাসা থেকে নবম শ্রেণি পাস করেন। তিনি ২০১৫ সালের প্রথম দিকে কাঠমিস্ত্রির কাজ করার জন্য ঘাটাইলে একটি কাঠের দোকানে কাজ করেন। ২০১৫ সালে মোস্তফা ও সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করেন এবং সংগঠনের সিদ্ধান্তে তিনি ধৃত মোস্তফার শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাটা জুতার কোম্পানিতে কিছুদিন কাজ করেন। তিনি সংগঠনের জন্য নিয়মিত ইয়ানত (অনুদান) দিতেন। তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে তিনি নভেম্বর মাসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

গ্রেপ্তারকৃত তিন জেএমবির সদসদ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় র‌্যাব।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)