গাছ পাগল সামাদ

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:১১ | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৫

প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হন ফরিদপুর শহরতলীর ভাজনডাঙ্গা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব সামাদ শেখ। একশ, দেড়শ টাকা পকেটে আসার পর নাস্তা সেরেই তার প্রথম কাজ গাছের চারা কেনা। একটি গাছও না লাগিয়ে রাতে বাড়ি ফিরেছেন এমনটি ঘটেনি তার দীর্ঘজীবনে।

প্রতিদিনের আয়ের একটি অংশ যিনি ব্যয় করেন চারা কেনা, রোপন ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে। অথচ সেই সামাদ শেখের ঘরে অভাব অনটন দুই যুগের নিত্যসঙ্গী।

এলাকায় ‘গাছ পাগলা সামাদ’ নামে পরিচিত এই ব্যতিক্রমী মানুষটিকে সবাই ভালো জেনে প্রশংসা করলেও স্ত্রী, দুই ছেলে আর পুত্রবধূর সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

সামাদের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম তার গাছ পাগল স্বামীকে নিয়ে গর্বও যেমন করেন, পাশাপাশি সংসারের দৈন্যদশা নিয়ে রয়েছে গভীর হতাশা আর ক্ষোভ।

তিনি জানান, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রিকশা চালাতে বের হন সামাদ। মাথার মধ্যে সব সময়ই একটা বিষয় ঘোরে- রাস্তার পাশে, খাস জমিতে, কবরস্থানে, শ্মশানে, নদীর পাড়ে বা পুকুরের ধারে কোথায় গাছ লাগানোর একটু জায়গা পাওয়া যায়। জায়গা পছন্দ হলেই তিনি ছুটে যান নার্সারিতে। তিনি শুধু ফরিদপুর সদর নয়, পার্শ্ববর্তী চরভদ্রাসন, সদরপুর, মধুখালী এমনকি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য বৃক্ষ রোপন করেছেন তিনি।

আমৃত্যু এ কাজ করে যাবার জন্য সংকল্পবদ্ধ সামাদের এই পাগলামি ছায়া আর অক্সিজেন দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছে গোটা অঞ্চলকে। বন বিভাগের গাছের সঙ্গে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে তার রোপিত বৃক্ষগুলো মনে করিয়ে দেয়- সব পাগলামি খারাপ নয়। সে কষ্ট পায় তার লাগানো গাছ কেউ তুলে ফেললে বা কেটে বিক্রি করলে।

সামাদের প্রতিবেশি ফারুক হোসেন বলেন, তার মত বিরল লোক আমাদের সমাজে খুব দরকার। তিনি বলেন, ফরিদপুর চরভদ্রাসন ও ফরিদপুর থেকে সদরপুর সড়কের দুই পাশে আমাদের সামাদের লাগানো শত শত গাছ রয়েছে।

ভাজনডাঙ্গা বাজারের মুদি দোকানদার ফিরোজ শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় এমন অনেক বড় গাছ আছে যেগুলো অনেক আগে সামাদ লাগিয়েছিল। আমি ছোটবেলা থেকেই তাকে গাছ লাগাতে দেখছি।

শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মী প্রফেসর আলতাফ হোসেন সামাদের বিষয়ে বলেন, একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ একটি ভালো কাজ করছে, তাকে আমরা বলছি পাগল। আমার কাছে মনে হয় সামাদের চেয়ে সুস্থ্য মানুষ সমাজে কম রয়েছে বলেই তাকে আমাদের পাগল মনে হয়।

ফরিদপুর হটিকালচার সেন্টার উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দামের বিভিন্ন গাছের চারা প্রতিদিনই কিনে নিয়ে যান সামাদ। কোনো বাকি নেই তার। তিনি বলেন, অফিসের গেটে তাকে দেখলেই আমরা বুঝি সামাদের গাছ লাগবে। মিজানুর রহমান জানান, আমার চাকরির বয়সে এমন গাছপ্রেমী মানুষ দেখিনি।

ফরিদপুরে গাছ পাগল খ্যাত সামাদ শেখ বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই গাছ লাগাই। গাছ লাগাতে ভাল লাগে, গাছ সবার উপকারে আসে।

তিনি বলেন, ফল গাছের চারা লাগাতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আমি, তাই হর্টিকালচার থেকেই বিভিন্ন ধরনের ফলের চারা নিয়ে রাস্তার পাশে বা সরকারি কোনো অফিসের পাশে লাগিয়ে দেই।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :