মির্জাপুরে আ.লীগ নেতাদের নাম বেচে ভূঁইফোড় সংগঠন

জাহাঙ্গীর হোসেন, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৩৭

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ছবি ব্যবহার করে নানা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ’ নামের একটি ভূঁইফোড় সংগঠন। এলাকায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে সংগঠনটি নিজেদের আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এ ধরনের কোনো সংগঠনের কথা তারা কিছু জানেন না।

প্রচারণায় দেখা যায়, ভূঁইফোড় সংগঠনটির কয়েকজন নেতা ‘মির্জাপুর উপজেলা শাখার বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচিত করায়’ কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টার, বিলবোর্ড ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। পোস্টারে একটি বৃত্তের ভেতরে লেখা রয়েছে- ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক অনুমোদিত’।

সংগঠনটি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নাসির উদ্দিন খান নিজেকে আহ্বায়ক, আব্দুল কাদের মিয়া সদস্যসচিব ও রিপন আহমেদ নিজেকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দাবি করে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ মির্জাপুর উপজেলা শাখার পোস্টার, বিলবোর্ড ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। তারা এসব প্রচারমাধ্যমে নিজেদের ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একাব্বর হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মেয়র সাহাদৎ হোসেন সুমনের ছবি ব্যবহার করছেন।

দলে এ ধরনের সংগঠন থাকার কথা নাকচ করে দলীয় নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত সাতটি সহযোগী ও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগ হলো সহযোগী সংগঠন। আর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হলো ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ। দলের গঠনতন্ত্রে এর বাইরে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই।

অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে প্রায় অর্ধশত ভূঁইফোড় সংগঠন গজিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ মির্জাপুর উপজেলা শাখা এরই একটি। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে দেখা যায়, এসব সংগঠনের নেতাদের প্রধান উদ্দেশ্য দলের ও নেতাদের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার ও নানা অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়ানো। মির্জাপুর বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সদস্যসচিবের বিরুদ্ধেও নিরীহ মানুষের জমি দখল, মামলা দিয়ে হয়রানি করাসহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার নানা অভিযোগ উঠেছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক নয়, টাঙ্গাইল জেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি-সম্পাদক তাদের কমিটি নির্বাচিত করেছেন।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের ছবি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো আমি কোনো প্রচারণা করিনি। সদস্যসচিব না বুঝে করে থাকতে পারেন।’

কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি নন কমিটির সদস্যসচিব আব্দুল কাদের। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে পরে সামনাসামনি দেখা করে কথা বলব।’

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত সাতটি সহযোগী ও দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বাইরে বাকি সবগুলো ভুঁইফোড় সংগঠন। এদের নির্বাচন ও অনুমোদন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহারের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন এমপি বলেন, ‘এরা কারা, কী করে, আর কারা এসব সংগঠনের অনুমতি দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এখন এমন অবস্থা হয়েছে পারলে নাপিত লীগও তৈরি করে ফেলে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে ধান্দা করার জন্য এরা এসব করছে।’

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :