মাতৃভাষার মর্যাদা ও ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক
| আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০০ | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:৫৯

আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য যত নেয়ামত দিয়েছেন এর সেরাটি হলো ভাষা। এই ভাষার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করি। ভাষাহীন পৃথিবীর কথা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। ইসলামের চোখে একমাত্র আরবি ভাষা বাদে সব ভাষাই সমান গুরুত্বের। যত নবি-রাসুল দুনিয়াতে এসেছেন সবাই ছিলেন নিজ নিজ মাতৃভাষার পণ্ডিত। এজন্য ইসলামে মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মাতৃভাষা চর্চা ইবাদততুল্য। কেউ যদি নিজের মায়ের ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য তাহলে এটা সরাসরি সওয়াবের কাজ। এছাড়া ভাষার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ পৌঁছানোর উদ্দেশ্য থাকলেও সেটাও বিশেষ সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে।

মাতৃভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা দুখানে ঘোষিত হয়েছে- ‘আমি তোমার ভাষায় কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করো।’ পরম করুণাময় আল্লাহর এ ঘোষণাই প্রমাণ করে, ইসলাম মাতৃভাষাকে কত মর্যাদার উঁচু আসনে স্থান দেয়া হয়েছে। ইসলাম মাতৃভাষাকে আপন মর্যাদায় আসীন করে ঘোষণা দিয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। আমরা জানি, আমাদের নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরব দেশে জন্মগ্রহণ করেন। আরব দেশের লোকদের মাতৃভাষা আরবি। মহানবীর (সা.) ওপর কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতের সরল ব্যাখ্যা দাঁড়ায়, হে রাসুল, নিশ্চয়ই আমি এ পবিত্র কোরআন শুধু এ উদ্দেশ্যেই তোমার ভাষায়, তোমার মাতৃভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আরবের অধিবাসীরা এটার আদেশ, নির্দেশ ও ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সহজে বুঝতে পারে। হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। এখানে তিনটি বিশেষ দিক স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে- প্রথমত, মাতৃভাষার মর্যাদাদান; দ্বিতীয়ত, মাতৃভাষায় মানুষের শিক্ষাদানের বিষয়, যা মানবজীবনকে সহজ-স্বাভাবিক করে; তৃতীয়ত, হজরত মুহাম্মদকে (সা.) ধর্ম প্রচারে সাহায্য দান করা, সহযোগিতা করা।

সুতরাং মানুষ যাতে সহজে কোরআন মজিদকে বুঝতে পারে, হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে জন্য সরল মানুষকেই তার নিজ ভাষায়, মাতৃভাষায় তা জানা প্রয়োজন। তাই বিভিন্ন দেশের ভাষায় কোরআনের তফসির করা প্রয়োজন। মানুষ সঠিকভাবে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হলে তাকে জীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রেখে তা করতে সহজ হয়। মাতৃভাষাই মানুষের জীবনে স্বাভাবিক কাজকর্মের প্রকৃষ্ট মাধ্যম। কেননা মাতৃভাষা হলো স্বাভাবিক ভাষা। কথা বলা, মনের ভাব আদান-প্রদান করা মানুষের সহজাত কাজ। সে কর্মের মাধ্যমে হলো মাতৃভাষা। মাতৃভাষা তো সে ভাষা যে ভাষা শিখতে, বলতে মানুষকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় না। জীবনের প্রথম প্রভাতে শিশু মাটিতে পড়ে সুতীব্র চিৎকারে তার আগমনী বার্তাকে প্রকাশ করে।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। দেশ-মাটি ও ভাষার জন্য আমরা আজ নিবেদিত। মাতৃভাষার গৌরব টিকিয়ে রাখার জন্য অধিকতর তৎপর হওয়া প্রয়োজন। ইসলাম যেখানে মাতৃভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে মাতৃভাষার ধর্মচর্চা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তাগিদ দিয়েছে, সেখানে এক শ্রেণির শাসক, শোষক বাংলার মানুষের মাতৃভাষার টুঁটি চেপে ধরার ষড়যন্ত্রকে, রক্তচক্ষুকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বাংলার সোনার ছেলেরা কুচক্রীদের সমুচিত জবাব দিয়েছে তাদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে, নিজের মৃত্যুহীন প্রাণ ভাষার সম্মান রক্ষার্থে দান করে দিয়ে। সেই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :