খুলনায় অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় আতঙ্কে রাজনীতিক-জনতা

খুলনা ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:১০

খুলনা মহানগর ও জেলায় বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। তাতে বাড়ছে খুনোখুনি। সন্ত্রাসীদের বুলেটের কাছে ছাড় পাচ্ছে না সাধারণ পথচারী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা। গত দেড় মাসে একের পর এক খুন, ডাকাতি, রাহাজানির ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।

তবে বরাবরের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, অপরাধ দমনে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে তারা।

চলতি বছরটি শুরুর আগে আগে নগরীর দোলখোলা এলাকায় শিপ্রা কুন্ডু নামের এক নারী নিহত হন গুলিতে। গত ৩১ ডিসেম্বর নগর রাতে আ.লীগের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী শিপ্রা রানীকে বিদ্ধ করে।

হত্যাকাণ্ডের খবর নিয়ে শুরু হওয়া নতুন বছরের গত দেড় মাসে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, কলেজশিক্ষকসহ খুন হয়েছেন আরো কয়েকজন। এর মধ্যে চারটি ঘটনায় খুন সংঘটিত হয় গুলিতে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফুলতলায় বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশন রোডে দুর্বৃত্তের গুলি ও বোমায় নিহত হন যুবলীগের কর্মী জনি মোল্লা। এক দিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম খানকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর আহসান আহমেদ রোডের বাসিন্দা কম্পিউটার ব্যবসায়ী নাজমুল আহসান রনিকে দুষ্কৃতকারীরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যবসায়ী এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে ১৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর শেরেবাংলা রোডের আমতলা মোড়ের অদূরে কলেজশিক্ষক চিত্তরঞ্জন বাইনকে হত্যা, ১২ ফেব্রুয়ারি রূপসা উপজেলার দক্ষিণ খাজাডাঙ্গা গ্রামের খতিবুল ইসলামের ছেলে সরদার খায়রুল ইসলাম পরাগ হত্যা ঘটে। এ ছাড়া জেলা ও মহানগরীতে দুর্ধর্ষ চুরি, ডাকাতি ও হত্যাকা- এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে তারা খুনি। এদের সহায়তাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের নির্ভয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশ তৈরির দাবি জানান খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। হত্যাকা- বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগর বিএনপির নেতারাও। তারা সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেন, মহানগরীসহ খুলনা জেলায় সাম্প্রতিককালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ঘের দখল করতে গিয়ে গুলি করে যুবদল নেতাকে হত্যা, ডাকাতি করতে গিয়ে কলেজশিক্ষককে হত্যা, সাবেক জনপ্রতিনিধিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়লে সেই গুলিতে পূজারি গৃহবধূ নিহত হওয়া, জমি দখল করতে গিয়ে হামলায় প্রতিপক্ষকে হত্যার ঘটনা জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একের পর এক হত্যাকা- শুধু নয়, ডাকাতি-রাহাজানি বিশেষত গ্রিল কেটে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।’

আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্ক লাঘব, সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুুলিশ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান বিএনপির নেতারা।

খুলনার সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, কোনো ঘটনার পর তৎপর হতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তা থিতিয়ে যায়। ফলে সন্ত্রাসীরা আবার সক্রিয় হয়ে নতুন উদ্যমে অপরাধ কর্মকাণ্ড শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সার্বিক বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করলে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে আসত।

এ ব্যাপারে কথা বললে কেএমপির কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের শনাক্ত ও তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সব সময় অভিযান পরিচালনা করে। কয়েকটি ঘটনার পর সেই অভিযান আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, খুলনা মহানগরে বর্তমানে যেকোনো সময়ের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি যেসব অপরাধ কর্মকা- ঘটেছে, তার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ শক্ত অবস্থানের রয়েছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :