‘এফএম রেডিও বাংলা ভাষা বিকৃত করছে’

শেখ সাইফ
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:২৯ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:১১

ভাষা প্রবহমান নদীর মতো। বাংলা ভাষাও এর বাইরে নয়। পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মধ্যেও অবশ্য ঐকতান থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই এর ঘাটতি থাকায় উদ্বিগ্ন ভাষা বিশেষজ্ঞরা। বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাপ্তাহিক এই সময়-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ভাষা সংগ্রামী, কবি ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ সাইফ।

বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আমাদের দেশে বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হবে, সংবিধানে আছে রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত কোথাও বাংলা ভাষার সঠিক স্থান নেই। অধিকাংশই ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে। আসলে ভাষা সম্পর্কে আমাদের মমত্ববোধ বা দায়িত্ববোধ নেই বললেই চলে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আমরা ভাষা আয়ত্ত করি না। আছে ভাষার উচ্চারণ ও ব্যবহারিক বিষয়ে নানা অসঙ্গতি। এই তো সেদিন একটা অনুষ্ঠানে লেখা দেখলাম গগন-এর জায়গায় গগণ লিখেছে। আমাদের মোটেই দায়-দায়িত্ব নেই। বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজির ব্যবহার বেড়েছে। বাংলা ভাষার প্রতি যে আমাদের ভালোবাসা থাকা দরকার সেটির বড় অভাব এখন। অনেক স্কুলে বাংলা ভাষা ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়। সরকারিভাবে বিধিনিষেধ থাকলেও তার তোয়াক্কা করা হয় না। বাচ্চাদের বিদেশি ভাষা সেখার প্রতি এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যেখানে বিদেশি ভাষা শেখানোর এত প্রচেষ্টা সেখানে ভালো করে বাংলা ভাষা শেখানোর কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয় না।

ভাষা পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তন নিয়ে কী বলবেন?

বাংলা ভাষা পরিবর্তনের কোনো ইতিবাচক দিক নেই। অন্তত আমি তা দেখি না। সবই নেতিবাচক। যেমন ধরুন কিছু বর্ণ আছে দীর্ঘস্বরে উচ্চারিত হয়। সেগুলো এখন বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন ‘ঈ’ এর উচ্চারণের পরিবর্তে ‘ই’ ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাষার ব্যবহার সঠিক করতে হবে। সঠিক স্থান থেকে ভাষার ব্যবহার করতে হবে। উচ্চারণের ঠিক ঠিক স্থান থেকে উচ্চারণ করতে হবে।

গণমাধ্যম, বিশেষ করে এফএম রেডিওতে ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক আছে। এ নিয়ে আপনার অবস্থান জানতে চাই।

এফএম রেডিওর উপস্থাপকদের ভাষা ভঙ্গি এক কথায় জঘন্য, আপত্তিকর। এখানে ভাষাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়। এই বিষয় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি কিছুই। এটা পরিবর্তন করার মূল দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের। তারা যদি চায় যে আমরা অশুদ্ধ বা বিকৃত করে ভাষা ব্যবহার করব না, তাহলে এখানে যারা কাজ করছে তারা পরিবর্তন হতে বাধ্য। তবে হ্যাঁ, আঞ্চলিক যে ভাষা আছে সেটা অঞ্চল ভেদে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু যে ভাষা প্রয়োগ সবার জন্য, যেখানে সব মানুষ শুনছে সেখানে বিভিন্ন আঞ্চলিকতা বা বিকৃত করে উচ্চারণ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ষাটের দশকে গণমাধ্যমে যে ভাষা ব্যবহার করা হতো তা শুদ্ধ উচ্চারণে। ওই সময়ে ফয়েজ আহমদ, অলি আহাদ, রুহুল আমিন, আবদুল হালিম সরদার, আবদুস সামাদ, কেজি মোস্তফা প্রমুখ ভাষার সঠিক প্রয়োগের জন্য কাজ করেছিলেন। একাত্তর-পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে ভাষা ব্যবহারে ধস নেমেছে। আর এফএম রেডিও আসার পর তা রীতিমতো অসম্মান করা হচ্ছে।

একনজরে

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত। রবীন্দ্র গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। একাধিক সাহিত্য ও বিজ্ঞান পত্রিকার সম্পদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত। আহমদ রফিক রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলা একাডেমির ফেলো ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং একুশে চেতনা পরিষদের সভাপতি।

আহমদ রফিকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে। ১৯৪৭ সালে নড়াইল মহকুমা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৯ সালে মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেন।

বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে আহমদ রফিকের পদচারণা অনেক দীর্ঘ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তিনি অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করেছেন। তার প্রকাশিত কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাসিত নায়ক, বাউল মাটিতে মন, রক্তের নিসর্গে স্বদেশ, বিপ্লব ফেরারী তবু, পড়ন্ত রোদ্দুরে, শ্রেষ্ঠ কবিতা, ভালোবাসা ভালো নেই ও নির্বাচিত কবিতা। তার প্রবন্ধ ও গবেষণার মধ্যে রয়েছেÑ শিল্প সংস্কৃতি জীবন, নজরুল কাব্যে জীবনসাধনা, আরেক কালান্তর, বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও বাংলাদেশ, ছোটগল্প : পদ্মাপর্বের রবীন্দ্রগল্প, একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা, এই অস্থির সময়, জাতিসত্তার আত্মঅন্বেষা, বাঙালি বাংলাদেশ, রবীন্দ্রভুবনে পতিসর, বাঙলা বাঙালি আধুনিকতা ও নজরুল, বাংলাদেশ জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা, নির্বাচিত কলাম, একাত্তরে পাক-বর্বরতার সংবাদভাষা, কবিতা, আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা, প্রসঙ্গ : বহুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রভাবনায় গ্রাম : কৃষি ও কৃষক, নির্বাচিত প্রবন্ধ। আহমদ রফিকের অনুবাদ গ্রন্থের ভিতর রয়েছে- জীবন রহস্য, অণুর দেশে মানুষ, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। তিনি সম্পাদনা করেছেন- নাগরিক (ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র, দ্য ইস্ট পাকিস্তান মেডিকেল জার্নাল দ্য মেডিকেল ডাইজেস্ট, পরিভাষা, সুজনেষু ও বাংলা একাডেমির চিকিৎসা বিজ্ঞান পরিভাষা কোষ (সংকলক ও তত্ত্বাবধায়ক সম্পাদক)। তিনি কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এর মধ্যে আছে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, রবীন্দ্রাচার্য উপাধি (টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলকাতা)।

ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এসএস/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :