যতনে থাকুক বইপত্র
অন্তত ৬০ হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের এমন উক্তিতেই জীবনের সঙ্গে বইয়ের সম্পৃক্ততা বোঝা যায়। অন্যদিকে মার্ক টোয়েনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিটিও মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ছিল বইয়ে ভরা। বিশ্বখ্যাত এই সাহিত্যিক আবার বইচোরদেরও পক্ষ নিয়েছেন। অবশ্য বইপ্রেমীদের ক্ষেত্রেই কেবল তার সমর্থন প্রযোজ্য হবে।
সংগ্রাহক যারা তারা বই চুরি প্রতিরোধে সব সময় সতর্ক থাকেন। বই যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হয়। তারপরও বই পোকায় কাটে, ছিঁড়ে যায় আর ধুলা জমে। বই থেকে কটু গন্ধও ছড়াতে পারে। তাই বইপত্র শুধু সংগ্রহ করলেই হবে না, এগুলো সংরক্ষণের দিকটিতে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত বইয়ের যত্ন নিতে হবে।
প্রিয় বই যত্নে থাকতে পারে একটু সচেতনতায়। এসব দিক নিয়ে এই সময়-এর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মহানগর লাইব্রেরির সহকারী গ্রন্থাগারিক কুমারেশ চন্দ্র বিশ্বাস। বইয়ের যত্নে তার দেওয়া পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হলো।
যখন বই পড়ি...
# পড়ার আগে বইয়ে মলাট লাগিয়ে নিলে প্রচ্ছদ অনেকদিন ভালো থাকে।
# বই পড়ার সময় ভেজা কিংবা নোংরা হাতে ধরা অনুচিত।
# বই পড়ার সময় সহজে পড়া খুঁজে পেতে বইয়ের ভেতর পেনসিল কিংবা কলম রেখে দিই। তখন বইটা উঁচু হয়ে থাকে এবং সেই বইয়ে কোনো প্রকার চাপ পড়াটা স্বাভাবিক। চাপের ফলে বাঁধাইয়ের সুতা খুলে যায়। এতে বাইন্ডিং নষ্ট হয়ে যায়।
# ব্যক্তিগত বই হলেও কলম দিয়ে দাগ কাটা ঠিক না। তবে খুব প্রয়োজনে হালকাভাবে পেনসিল ব্যবহার করতে হবে। যাতে পরবর্তী সময়ে ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলা যায়।
# একই সময়ে বই পড়া আর খাওয়া অনেকের অভ্যাস। ফলে খাবারের দাগ কিংবা খাদ্যটুকরো বইয়ে লেগে থাকতে পারে। এগুলো পোকামাকড়ের উপদ্রবের আশঙ্কা থাকে।
# বইয়ের পাতাও কেউ কেউ ভাঁজ করে রাখে। দীর্ঘদিন রাখা ভাঁজ করা পাতা ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। পাতায় চিহ্ন দেওয়ার প্রয়োজনে বুক মার্ক, যেকোনো কার্ড বা টুকরো কাগজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
# পানীয় বা তরলজাতীয় কোনো কিছু পাশে নিয়ে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
# ফুল বা পাতা বইয়ের ভেতর রাখা একেবারেই অনুচিত। কারণ ফুলটি পচেগলে পাতাটির রং কিংবা লেখাটি নষ্ট হয়ে যায়। আবার স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ায় ছিঁড়েও যেতে পারে।বই কখনোই পুরনো হয় না
# বইয়ের প্রধান শত্রু ধুলা-বালি। তাই নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। কাচের দরজাযুক্ত শেলফগুলোতে ময়লা কম হলেও কিছুদিন পর পর মুছতে হবে। আর খোলা শেলফ পরিষ্কার করা প্রয়োজন সপ্তাহে অন্তত দুবার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে।
# বই সংরক্ষণে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন। ঘরের আলোর তাপমাত্রা ৬৫-৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকা ভালো। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে যেন না যায়।
# আর্দ্রতার বিষয়টিও নজরে রাখা প্রয়োজন। কারণ আর্দ্রতা কাগজ নরম করে দেয়। ঘরের আর্দ্রতা ৩০-৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বইয়ের জন্য ভালো। ৩৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাই আদর্শ।
# বই গুছিয়ে রাখতে হবে। শেলফে সাধারণত বই কম থাকে, তাই সেখানে লেখকের নাম অনুযায়ী কিংবা গল্প, কবিতা, উপন্যাস আলাদা করে সাজানো যেতে পারে। কারো সংগ্রহে অধিক কিংবা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকলে বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা যায়।
# দীর্ঘদিনের অযত্নে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে ধোঁয়ার উৎপন্ন করে এক বা দুদিন শেলফের দরজা বন্ধ রাখা যেতে পারে। বিদেশি বইগুলোতে প্রতি পৃষ্ঠাতেই একধরনের ক্যামিকেল দেওয়া থাকে, যা বইকে দীর্ঘদিন পোকার উপদ্রব থেকে মুক্ত রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেই। তবে এ ক্যামিকেলগুলোর ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। তবে ন্যাপথলিনের ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বইয়ের ভেতর না রেখে শেলফের আশপাশে রাখা যায় । ফলে এর দুর্গন্ধে পোকামাকড় দূরে থাকবে।
# বই ছিঁড়ে গেলে যথাসম্ভব দ্রুত বাঁধাই করতে হবে। তা না হলে বই আরো ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ধারে সাবধান
# বই ধার দিলে অবশ্যই তালিকা করে ব্যক্তি এবং বইয়ের নাম লিখে রাখতে হবে।
# বই ধার নিলে কিংবা দিলে প্রথমেই সময় উল্লেখ করে দেওয়া বা নেওয়া উচিত।(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/টিএ/টিএমএইচ)