‘লিটনকে সরিয়ে পুনরায় এমপি হওয়ার স্বপ্ন ছিল কাদেরের’

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:২৭ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:২৩

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা হিসেবে সুন্দরগঞ্জের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আব্দুল কাদের খানকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে কাদের খানের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। লিটনকে সরিয়ে নিজে পুনরায় এমপি হওয়ার স্বপ্ন ছিল কাদের খানের। এজন্যই তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন।

বুধবার সকালে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এসব তথ্য।

এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা যেভাবে

প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি জানান, পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে এক মাস ২০ দিনের তদন্ত শেষে ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। এমপি লিটনকে সরিয়ে দিয়ে পুনরায় ওই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার উচ্চাভিলাস ও ক্ষমতার মোহেই সাবেক এমপি কাদের খান এক বছর আগে থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি তার ঘনিষ্ঠ চার সহচর মেহেদী হাসান, শাহীন, হান্নান ও রানাকে প্রলুব্ধ করেন এবং নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে তাদের ছয় মাসব্যাপী নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেন।

ডিআইজি জানান, তার ছক অনুযায়ী ইতোপূর্বে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার পথে এমপি লিটনকে গত অক্টোবর মাসে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা ব্যর্থ হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তায় প্রথমে তার গাড়িতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এতে গাড়ি থামিয়ে লিটন বের হয়ে আসা মাত্রই তাকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে ওই কিলাররা। কিন্তু সে মিশনও ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এমপি লিটনের নিজ বাড়িতে তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। লিটন হত্যা মিশনে তিনজন অংশ নেন। তারা হলেন- মেহেদী হাসান, শাহীন ও হান্নান। এরমধ্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা নিশ্চিত করেন মেহেদী হাসান। প্রথমে তিন খুনি লিটনের সাথে জরুরি কথা আছে এ কথা বলেই তার সাথে বৈঠকখানায় ঢোকে। সেখানে ঢুকেই তাকে সালাম দিয়েই এক রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন মেহেদী। যা লিটন হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। ফলে সে গুলিটি হাতে লাগে। যেহেতু এই খুনিরা পেশাদার কিলার ছিল না, সেজন্য প্রথম গুলিটি ব্যর্থ হলে মেহেদী ঘাবড়ে যান এবং চোখ বন্ধ করে এলোপাথারি পরবর্তী চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা নিশ্চিত করেন। হত্যাকাণ্ড শেষে তাদের ব্যবহৃত ডাইং ব্রাউন্সার রানার ১০০ সিসির কালো রংয়ের মোটর সাইকেলটিতে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যান তারা। খুনে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি কাদের খানের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত এবং রেজিঃ বাবদ প্রদত্ত ফি জমা করা হয়েছে এমডি আলীর নামে। যা পুলিশ জব্দ করেছে। এরপর রাস্তায় অপেক্ষমাণ কাদের খানের গাড়িতে কিলাররা বগুড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে পরে খুনিরা বাসে ঢাকায় গিয়ে কাদের খানের সহযোগিতায় আত্মগোপন করে থাকেন।

যেভাবে কিলাররা শনাক্ত হয়

এমপি লিটনের কিলাররা গত ২ জানুয়ারি গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ধোপাডাঙ্গায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ওই পিস্তলটি ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে ফাইম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে। ছিনতাই শেষে তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে পিস্তলের ছয় রাউন্ড বুলেটের ম্যাগাজিনটি তাদের অগোচরে রাস্তায় পড়ে যায়। যা স্থানীয় জনগণের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ উদ্ধার করে। এই পিস্তলের বুলেট পরীক্ষা করে দেখা যায় এমপি লিটনের শরীর থেকে অপারেশন করে বের করা এবং তার বাড়িতে হত্যার পর প্রাপ্ত বুলেটের খোসার সাথে ওই ম্যাগাজিনের বুলেটের মিল রয়েছে। পরে এই সূত্র ধরে খুনিদের আটক করা হয় এবং পিস্তলটির ব্লাস্টিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

খুনিদের স্বীকারোক্তি

গ্রেপ্তারকৃত তিনজন মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতা ও প্রশিক্ষণদাতা হিসেবেও আব্দুল কাদের খানের নাম উলে¬খ করেন।

এদিকে খুনিরা কাদের খানের পিস্তলটি ব্যবহার করেছিল বলেই বিভিন্ন সুত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত ব্লাস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা চূড়ান্ত হবেন বলে জানিয়েছেন।

সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান খুনিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কাদের খানের পিস্তল এবং বুলেট জব্দ করেন। কিন্তু ৪০ রাউন্ড বুলেট কিনলেও কাদের খান পুলিশকে মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দিতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব তিনি দিতে পারেননি।

লিটনের বোন ও স্ত্রীর সন্তোষ

লিটনের হত্যার পরিকল্পনাকারী ও খুনিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এই খুনের রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতিও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

লিটন হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

জেলা জজ আদালতে সরকার পক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, চাঞ্চল্যকর এমপি লিটন খুনের মামলাটির জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সে কারণেই এই মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় বগুড়া শহরের রহমান নগর জিলাদারপাড়া বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাতেই তাকে গাইবান্ধায় নিয়ে আসা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :