ট্রেনে বরাদ্দ আসন কমানোয় ফুঁসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মাশরেকী স্বপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
| আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৫১ | প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৩০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন কমানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। সাত দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা হুমকি দেয়া হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টায় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের সচেতন ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে স্টেশনের প্লাটফর্মে আয়োজিত এক সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যোগ দেয়া কয়েক শ ছাত্র-তরুণের মানববন্ধনে আগের আসন বরাদ্দ বহাল এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বরাদ্দ দ্বিগুণ করারও দাবি জানানো হয়।

আসনসংখ্যা দ্বিগুণ করার দাবিতে ‘সচেতন ছাত্র সমাজ’-এর প্রতিনিধি হিসেবে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মিনহাজ মামুন, তানভীর ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান মায়া এবং রুহুল আমিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দেশে ট্রেনে টিকেট বিক্রির দিক দিয়ে দ্বিতীয় এবং যাত্রীসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন কমানোর সিদ্ধান্ত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে আসন বরাদ্দ দ্বিগুণ করতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম শ্যামল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে যাত্রীর চাহিদার তুলনায় ট্রেন ও আসন দুটোই কম। টিকেট নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় যাত্রীদের। বরাদ্দ আসনের পরও বিপুলসংখ্যক যাত্রী স্ট্যান্ডিং টিকেটে ভ্রমণ করেন। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আসন কমানো এক হাস্যকর ব্যাপার।’

শ্যামল বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রীর আধিক্যের কারণে মূলত প্রয়োজন আরো আসন বরাদ্দ করা। তা না করে আসন কমানোর পরামর্শ কারা কেন দিয়েছে তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করেন বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা আয়েশা জুলেখা। তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়ার টিকিট (আসনসহ) পাওয়া বিরল ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক সময় কালোবাজারিদের কাছ থেকে দু-তিন গুণ বেশি দামে টিকেট কাটতে হয়। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া থেকে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়া আর যুদ্ধ জয় করা এক সমান। তারপরও আমরা নিরাপদ ও সময় সাশ্রয়ের জন্য জন্য রেলকেই বেছে নিই।’

তিনি আরো জানান, শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরসহ বেশ কিছু এলাকার মানুষও এই স্টেশন দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করেন। ট্রেন ও আসন বাড়ানো পরিবর্তে কমানোর সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

ট্রেনের আসন কমানোর পেছনে বাস কোম্পানিগুলোর যোগসাজশের সন্দেহ প্রকাশ করেন আরেক নিয়মিত যাত্রী সুশান্ত দাস। তিনি বলেন, সড়কপথে রাস্তার বেহাল অবস্থা এবং সময় বেশি লাগার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীরা বাসযাত্রা এড়িয়ে চলতে চান। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ভৈরব পর‌্যন্ত ডাবল লাইন চালু হওয়ায় ট্রেন যাতায়াতে সময় আরো কমে এসেছে। ফলে যাত্রীরা ট্রেনকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, চাহিদার অতিরিক্ত যাত্রী থাকার পরও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য আসন কমানোর কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট যাত্রাপথে চলাচলকারী চারটি আন্তনগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য আসন কমিয়ে ফেলে রেল কর্তৃপক্ষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে চট্টগ্রাম ও ঢাকার পথে যাত্রী নেয়া চারটি আন্তনগর ট্রেনের বরাদ্দ করা আসনসংখ্যা ১৪ জানুয়ারি কমানো হয়। পরে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেসের আসনসংখ্যা কমানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকাগামী মহানগর গোধূলির শোভন শ্রেণিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন ১৬৫ থেকে কমিয়ে ১০০টি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘শোভন’ শ্রেণিকে ‘শোভন চেয়ারে’ পরিবর্তন করা হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির ১০টি আসনও বাতিল করা হয় বলে জানা যায়। ঢাকাগামী তূর্ণা-নিশীথার শোভন চেয়ারের আসনসংখ্যা ৬০টির স্থলে ৪০ করা হয়েছে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির (এসি) আসন ১৬টি থেকে কমিয়ে ছয়টি, শোভন শ্রেণির আসন ১০০ থেকে কমিয়ে ৫০টি করা হয়েছে। একই ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লার যাত্রীদের আসন ২৫টি থেকে কমিয়ে ১৫টি করা হয়েছে। আর লাকসাম যাতায়াতের জন্য কোনো আসনই দেওয়া হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ফেনী আসন দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি। চট্টগ্রামগামী তূর্ণা-নিশীথার শোভন চেয়ার শ্রেণিতে আসন ৬০টি কমিয়ে ৫০ করা হয়েছে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) আসন পাঁচটি অপরিবর্তিত রাখা হয়।

পরে দ্বিতীয় দফায় ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের আসনসংখ্যাও কমানো হয়। ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন শ্রেণির আসনসংখ্যা ১২৭, তা কমিয়ে করা হয় ১০০টি। চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনসংখ্যা ১২৫টি থেকে ৬০টি আসন কমানো হয়। এ ট্রেনে প্রথম শ্রেণির কোনো আসন বরাদ্দ নেই।

(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :