রিমান্ডে কাদের জানান পিস্তলটি গাছের গোড়ায় লুকানো

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৫০ | প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫৬

রিমান্ডে দেয়া কাদের খানের তথ্যের ভিত্তিতে উঠান খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি। বুধবার দিবাগত রাতে চালানো তল্লাশিতে কাদের খানের বাড়ির উঠানে আমগাছের নিচে পোঁতা পিস্তল ও ছয় রাউন্ড বুলেটসহ একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম।

এদিকে একই দিনে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লিটন হত্যায় অংশ নেয়া পলাতক আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে। সুন্দরগঞ্জের ভেলারাকাজির ভিটা গ্রামের মৃত তমসের আলীর ছেলে রানা ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য তাকে হাজির করে পুলিশ। পুলিশ সুপার জানান, কাদের খানের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে এবং যে পরিবহনের টিকিট কেটে খুনিদের বগুড়া থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, ওই টিকিটের কপি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পিস্তল উদ্ধার অভিযান কাদের খানের বাড়ির উঠান থেকে পিস্তল উদ্ধারের অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে পুলিশ সুপার জানান, এমপি লিটন হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারের জন্য বুধবার বিকেল থেকেই পুলিশ কাদের খানের গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা বাড়িসংলগ্ন তিনটি পুকুরের পানি সেচে সহায়তা করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সুপার বলেন, অবশেষে রিমান্ডে নেয়া কাদের খানকে চাপ সৃষ্টি করা হলে তিনি পিস্তলের কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতে তার বাড়িতে আবার তল্লাশি চালানো হয়। তার নির্দেশিত আমগাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে সেখানে পাওয়া যায় অস্ত্র ও ম্যাগাজিন। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তল ও ম্যাগাজিনের অবস্থা দেখে অনুমান করা হচ্ছে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে এগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার দুই দফা তল্লাশি চালানো হয় কাদের খানের বগুড়ার রহমান নগর দিলদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে তার চিকিৎসালয় ও বসতবাড়িতে। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি।

কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ পুলিশ কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স করা পিস্তল এবং ১০টি গুলি জব্দ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আরেকটি লাইসেন্সবিহীন পিস্তল বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে আরও একটি লাইসেন্সবিহীন পিস্তল এবং অন্যান্য অস্ত্র তার কাছে রয়েছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তারা জানতে পারবে বলে পুলিশ আশাবাদী।

আ.লীগ নেতা চন্দনকে খুঁজছে পুলিশ লিটন হত্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকার সন্দেহে পুলিশ এখন খুঁজছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বামনডাঙ্গার মনমথ গ্রামের সুশীল সরকারের ছেলে চন্দন সরকারকে। কাদের খানের জব্দ করা মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে তার সঙ্গে চন্দন সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। চন্দন মূলত হত্যাকাণ্ডের দিন এমপি লিটনের বাড়িতে তার অবস্থান এবং অনুকূল পরিবেশের খবর মোবাইল ফোনে খুনিদের জ্ঞাত করেন। তার দেয়া তথ্যমতে কিলিং মিশন সফল করে খুনিরা।

অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান চন্দন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এই ক্ষোভে চন্দন সুন্দরগঞ্জে লিটনবিরোধী পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ প্রদান এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে এমপির বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। কাদের খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকা থেকে গা ঢাকা দেন চন্দন। পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেও পাচ্ছে না।

সুন্দরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে খুনিদের প্রশিক্ষণ সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে কাদের খানের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল গ্রেপ্তারকৃত কিলার শাহীন। পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, এই বাড়িতেই লিটনের খুনিদের পিস্তল চালানো এবং কিলিং মিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন কাদের খান। এই বাড়ি থেকেই অস্ত্রসহ গিয়ে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। সেদিন ওই পিস্তলের ম্যাগাজিনে ছয় রাউন্ড গুলি ছিল। কাদের খানের বাড়িতে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অসাবধানতায় পিস্তল থেকে একটি গুলি বেরিয়ে গিয়ে দেয়ালে লাগে। পুলিশের অভিযানকালে ঘরের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ওই পিস্তলের ম্যাগাজিনে থাকা বাকি পাঁচটি গুলি ছুড়েই খুনিরা হত্যা করে এমপি লিটনকে।

কে এই কাদের খান

সুন্দরগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কাদের খানের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহ জেলায়। তার দাদা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামে জমি কিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসত গাড়েন। কাদের খানের বাবা হাসেন আলী খান। কাদের খানের স্ত্রী ডা. নাসিমা আকতার একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারি চাকরি করছেন। সেনাবাহিনী থেকে কাদের খান কর্নেল হিসেবে অবসর নেয়ার পর বগুড়ার রহমান নগর দিলদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে একটি চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে স্বামী-স্ত্রী মিলে সেটি পরিচালনা করেন। ক্লিনিকের সঙ্গেই বসতবাড়ি, সেখানেই বসবাস করেন তারা। এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন কাদের খান, সেখানে মাঝেমধ্যে গিয়ে থাকেন তিনি।

জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে কাদের খান জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। ২০০৯ সালে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল আজিজকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এমপি লিটন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বিভিন্ন আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, আবার এমপি হওয়ার অভিলাষে কাদের খান পরিকল্পনা করে লিটনকে হত্যা করেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের নিজ বাসায় লিটনের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার ওপর ৫টি গুলি ছোড়া হয়। গুরুতর আহত লিটনকে বগুড়া হাসাপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় লিটনের বোন বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে পুলিশ বেশ কয়েক দিন আগে থেকে সাবেক এমপি কাদের খানকে নজরদারিতে রাখে। গত মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তাকে আটক করা হয়। পরে লিটন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :