গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আগে আমজনতা হোন

বিলকিস ইরানী
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:২২

গত মা‌সে বা‌ড়িওয়ালা ভাড়া বাড়া‌লেন ৯০০ টাকা। বলা নাই কওয়া নাই, ডি‌সেম্ব‌রে এসেই বল‌লেন জানুয়া‌রি থে‌কে বাসা ভাড়া বাড়া‌তে হ‌বে। বাসা ভাড়া ৫০০ আর পা‌নির বিল ৪০০! ‌কেন জান‌তে চাইলে ব‌লে‌ছেন পা‌নির বিল বে‌ড়েছে। আরও নানা বাহানা। এখন আবা‌রো বাড়‌তি টাকা গুণ‌তে হ‌বে।

গ্যাসের দাম বাড়লে বাড়ে বাস ভাড়াও। হোক না সেটা বাসাবাড়ির গ্যাস কিংবা সিএনজির। বা‌সে উঠ‌লে এখন সি‌টিং এর নামে চ‌লে ডাকা‌তি, ১০ টাকার ভাড়া নেয় ৪০ টাকা! তার উপর নতুন আমদানি ‘স্টু‌ডেন্ট ভাড়া নাই’ এমন স্টিকার অধিকাংশ বা‌সেই। ‌সিএন‌জি‌তে উঠ‌লেই ১০০ টাকার নি‌চে ভাড়া নাই। মিটারে তো চলেই না তারা।

গ্যাসের দাম বাড়লে বরাবরই সব‌কিছুর দাম বা‌ড়ে। অনেক ক্ষে‌ত্রে দ্বিগুণও হয়। তাহ‌লে প্রশ্ন, এখন থে‌কে ওই সি‌টিং ব্যবসায়ীরা বাস ভাড়া কি ৮০ টাকা কর‌বেন? বা‌ড়ি ভাড়া কি বাড়‌তি এখন ১৮০০ টাকা গুন‌তে হ‌বে? সিএন‌জি কি উঠ‌লেই নি‌বে ২০০ টাকা?

অনেক স্টু‌ডেন্টের যে গা‌ড়ি ভাড়া দি‌তে দি‌তে ক‌লে‌জে রে‌জি‌স্ট্রেশ‌নের টাকা, পরীক্ষার ফি দি‌তে পার‌ছেন না, এটা কি সরকারের নজ‌রে নাই? অনেক প‌রিবারের কর্তা ব্যক্তি যিনি বাড়‌তি বাড়ি ভাড়া আর গা‌ড়ি ভাড়া গুন‌তে গি‌য়ে নি‌জের সন্তান‌কে ভা‌লো খাবার খাওয়া‌তে না পে‌রে নি‌জের মু‌খে আহার তুল‌ছেন না, এটা কি জা‌নেন না সরকার?

অনেক যাত্রী, অতি‌রিক্ত বাস ভাড়া দি‌তে না পে‌রে কিংবা সিএন‌জিতে উঠ‌তে না পে‌রে অসহা‌য়ের ম‌তো দি‌নের পর দিন কয়েক মাইল হেঁটে হেঁটে অফিস কর‌ছেন, কা‌জে যা‌চ্ছেন, লেট হ‌লে ব‌সের ঝা‌ড়ি শুন‌ছেন, আর কিছু‌দিন পর পর অসুস্থ হ‌য়ে ঘরে প‌ড়ে থা‌কছেন, চাক‌রি থা‌কে কি থা‌কে না দুশ্চিন্তায় জীবন পার কর‌ছেন, কর্তৃপ‌ক্ষের কি নজ‌রে নাই?

আমা‌দের ক‌ষ্টের টাকা থে‌কে যে অতি‌রিক্ত বাস ভাড়া নেয়া হয়, তার ভাগ তো তাদের প‌কে‌টে যায়। আমরা যারা ব্যাং‌কের মাধ্য‌মে বেতন পাই, সেখান থে‌কে তো ইনকাম ট্যাক্স নেনই, তার উপর কোন বাজার সদাই কর‌লেও সেখান থে‌কে ভ্যা‌টের টাকা রে‌খে দেয়া হয়।

বি‌ক্রেতারা ট্যাক্স দি‌য়ে যা কি‌নে আনেন, ক্রেতা‌দের কাছ থে‌কে অতি‌রিক্ত দাম নি‌য়ে তা পু‌ষি‌য়ে নেন। আমরা হ‌চ্ছি ট্যাক্স গাছ। ঝাড়া দি‌বেন আর ট্যাক্স পড়‌বে।

বাসা বা‌ড়ি‌তে গ্যা‌সের দাম বা‌ড়ি‌য়ে‌ছেন। সাম‌নে গ্যাসও দিবেন না। উদ্দেশ্য রান্নার কাজে পাইপলাই‌ন নি‌ষিদ্ধ ক‌রে এলপি গ্যাস বা সি‌লিন্ডার গ্যাসের বিস্তার বাড়ানো। এ ছাড়া জ্বালানি বিভাগ একটি কর্মকৌশলও প্রণয়ন করেছে, যাতে ২০১৮ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাসাবাড়িতে এলপিজি সরবরাহের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। উদ্দেশ্য মহৎ, ‌দে‌শের রাজস্ব বাড়বে। ভালো কথা, ‌কিন্তু এই রাজস্ব খা‌বে কে? এত রাজস্ব তো আমা‌দের কোন কা‌জে আস‌ছে না, বেতন বাড়‌ছে আপনা‌দের সরকারি কর্মকর্তা‌দের, আমাদের তো না? দামি গা‌ড়ি চড়‌ছেন, দা‌মি স্কু‌লে পড়ছে আপনা‌দের সন্তান, আমরা কিংবা আমাদের সন্তান‌কে ঠেল‌তে হ‌চ্ছে ভাঙা বা‌সের ভিড়। জনগ‌ণের রক্ত পা‌নি করা প‌রিশ্র‌মের টাকা দি‌য়ে ট্যাক্স রাজস্ব নিয়ে আয়েশ কর‌বেন আপনারা?

গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর, দুই চুলার হিসাবে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা ব্যয় করেছেন এক মাসে। মাসে ৮৮ ঘনমিটার গ্যাস হিসেবে। সেখানে এলপিজি ব্যবহারে লাগবে দুটি সিলিন্ডার। ১২ দশমিক ৮ কেজি ওজ‌নের একটি বোতলের মূল্য গড়ে ১২০০ টাকা ধরলে সর্বনিম্ন ব্যয় হয় দুই হাজার ৪০০ টাকা। এর বে‌শিও হয় কখনো। আর এখন বাসা বা‌ড়ি‌তে গ্যা‌সের দাম বাড়ি‌য়ে করা হ‌লো ৭৫০ থে‌কে ৮০০ টাকা। সাম‌নে হ‌বে ৯০০ থে‌কে ৯৫০ টাকা। হয়ত আরও বাড়া‌নোর প‌রিকল্পনা আছে। সে হি‌সে‌বে সি‌লিন্ডার গ্যা‌সের দাম কোথায় গি‌য়ে ঠেক‌বে ধারণা আছে কি?

আপনারা যে এল‌পি গ্যা‌স ব্যবহার কর‌তে বল‌ছেন, আমাদের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ম‌ধ্যে আছে কি? গ্যা‌সের দাম বাড়লে যে এল‌পি গ্যা‌স সি‌লিন্ডা‌রের দামও বাড়ে, সেটা কি জা‌নেন না সরকার? প‌ত্রিকা মারফত জানলাম, গত বছর ডিসেম্বর মা‌সে খুলনার বাজারে ১২ কেজি ওজনের গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি হয়ে‌ছে ৯০০ টাকায়। আর এ বছর জানুয়া‌রি‌তে, যার দাম হয় ৯৫০ টাকা। ওই সময় কয়েকটি কোম্পানি প্রতি সিলিন্ডারে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বাড়িয়েছে। বাড়ানো হয়েছে খালি সিলিন্ডারের দামও।

এছাড়া গত আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠানকে এলপি গ্যাস আমদানি, সিলিন্ডারজাত ও বিপণনের লাইসেন্স দেয়া হ‌য়ে‌ছে। এরমধ্যে প্রায় ৩০টি কোম্পানি এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রমই শুরু করেনি। আর লাইসেন্স বা‌তিল হয়েছে ২০ টির। তার মা‌নে এখন এল‌পি গ্যাস নি‌য়ে কাজ কর‌ছে মাত্র ১০ টি কোম্পা‌নি। ধরলাম আরও দুই এক‌টি বাড়‌লো। কিন্তু, প্রায় ২০ লাখ আবাসিক পরিবার গৃহস্থালির কাজে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন। (পরিবা‌রে পাঁচজন সদস্য ধরে) যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য বিকল্প হলো এলপি গ্যাস।

তাছাড়া নতুন আবা‌সিক ভব‌নে গ্যাস সং‌যোগ বন্ধ ক‌রে দেয়ায় অনে‌কেই বাধ্য হ‌য়ে এল‌পি গ্যা‌সে ঝুঁক‌ছেন। তাই এই সু‌যোগে বা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছেন এল‌পি গ্যা‌সের দাম। যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :