যাদুকাটায় পাথর উত্তোলন বন্ধ, ২০ হাজার শ্রমিক বেকার

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫৩

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটাতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সীমান্ত নদী যাদুকাটায় পাথর ও কয়লা কুঁড়িয়ে হাজারো শ্রমিক জীবনজীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কয়লা ও পাথরগুলো বন্যার পানিতে ভেসে আসে নদীর তলদেশে জমাটবদ্ধ হয়। সে কয়লা ও পাথরগুলো কুদাল, বেলচা ও দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে উত্তোলন করেন স্থানীয় শ্রমিকরা। সেই সাথে ছোট ইঞ্জিনচালিত সেলোমেশিন দিয়ে পানি সেচার কাজ সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি প্রশাসন পরিবেশবাদী সংগঠনের হাইকোর্টে রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকের কমসংস্থান।

স্থানীয় পাথরশ্রমিক লাউড়েরগড় গ্রামের রাবেয়া বেগম বলেন, যাদুকাটা নদীতে কয়েকদিন ধরে পাথর-কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা খুবই বিপদে আছি। নদীতে পাথর উত্তোলন করে প্রতিদিন ৪-৫শ টাকা রোজগার করতাম। আমার স্বামী কর্মক্ষম না থাকায় পাঁচ ছেলে-মেয়ের সংসার আমার রোজগারের উপরই নির্ভর করছে। নদীতে কাজ করার সুযোগ দেয়া হলে আমাদের বাঁচার উপায় হতো।

শাহিদাবাদ গ্রামের দিনমজুর রব্বানী বলেন, বর্তমানে কোথাও কোন কাজ না থাকায় বেকার আছি। সংসার কীভাবে চলবে- তা বুঝতে পারছি না। নদীটি চালু থাকলে প্রতিদিন ৫-৬শ টাকা রোজগার করতে পারতাম। নদী বন্ধ থাকায় খুবই দুর্দিনে আছি।

লাউড়েরগড় গ্রামের আব্দুস শুকুর বলেন, কাম নাই, কাজ নাই- সংসার চালাতে পারছি না। কিতা কইমু, কয়েকদিন পর পর ম্যাজিস্ট্রেট আইসা আমাদের পাথর তোলা বন্ধ করে দেয়। ভারত তাইক্যা পাথর আসে আর এ পাথর তুইল্ল্যা আমরা সংসার চালাই। এইডা বুলি পরিবেশের ক্ষতি করে। আমার ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে থাকলে তো তারা দেখইন না কেন? নদী বন্ধ রাখলে আমাদের কাজ-কাম দিতে অইব। কাজ কাম পাইলে আমরা নদীতে যাইমু না।

লাউরগড় বালি-পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জমাট হওয়া বালির চরে প্রতিবছরই এই মৌসুমে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বালির নিচ থেকে ছোট ছোট গর্ত করে পাথর উত্তোলন করে আসছে। কোন কোন গর্তে পানি জমাট হয়ে গেলে ছোট সেলো মেশিন দিয়ে পানি সেচে হাতে খুঁড়ে পাথর ও কয়লা উত্তোলন করে হাজারো কর্মহীন মানুষ জীবনজীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েক যুগ ধরে ধরে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমি নিজে সরেজমিনে নদীর চরে ঘুরে দেখেছি। এতে পরিবেশের কোন ক্ষতির কারণ রয়েছে বলে মনে হয়নি। এ বিষয়টি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সকল সদস্য ও এলাকার শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হয়ে হাজার হাজার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পথে উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছি।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি নিজে এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা নদীর মধ্যবর্তী চরে যুগযুগ ধরে শ্রমিকরা পাথর ও কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পাথর উত্তোলনের কাজে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না যাতে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ওই এলাকার মানুষের রোজগারের কোন পথ না থাকলে চোরাকারবারি কিংবা খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে অচিরেই হয়তো এ সমস্যার সমাধান হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :