মাংসের দাম বাড়িয়ে ধর্মঘট ‘সফল’

আবদুল আউয়াল খাঁন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪৯ | প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪৬

নানা দাবি নিয়ে মাংস ব্যবসায়ীরা যখন ধর্মঘটের ডাক দিলেন, তখনই ভোক্তা সাধারণ আশঙ্কা করেছিল এটা দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। বাস্তবেও তা-ই হলো। ধর্মঘট শেষ হতেই দেখা গেল বাজারভেদে গরুর মাংস কেজিপ্রতি বেড়ে গেছে ৫০ টাকা, খসির মাংস ১০০ টাকা।

আর এর ধাক্কা গিয়ে পড়েছে মুরগির বাজারে। সেখানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

ভারতীয় গরু আমদানিতে সীমান্তে অতিরিক্ত ট্যাক্স, রাস্তায় চাঁদা, পশুর হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে- এমন নানা অভিযোগ আর বিভিন্ন দাবিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় দিনের ধর্মঘট পালন করেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের ধর্মঘটের পেছনে মাংসের দাম বাড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই।

কিন্তু ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর দেখা গেল উল্টো চিত্র। দোকান খুলেই তারা বাড়িয়ে দিলেন মাংসের দাম। এখন তারা বলছেন, হাট থেকে গরু কেনার দাম কমলে মাংসের দাম কমানো হবে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের আগের চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আর তাতে অনেক ক্রেতা বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ও কারওয়ান বাজারে বর্তমানে দোকানভেদে গরুর মাংস ৪৭০-৫০০ টাকা হাঁকা হচ্ছে, যা ধর্মঘটের আগে ছিল ৪৪০-৪৬০ টাকা। খাসির মাংসের দাম ৭৫০-৮০০ টাকা, যা ধর্মঘটের আগে ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা।

শাহজাহানপুরের মোসাম্মৎ শাহানারা বেগম খিলগাঁও বাজারে গরুর মাংস কিনতে দোকানে দোকানে দাম যাচাই করছিলেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে কয়েক দিন মাংস কেনা হয়নি। আজ বাচ্চাদের বায়না রক্ষার জন্য মাংস কিনতে এসে ধাক্কা খেলাম। আগের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি ৫০০ টাকা দাম চাইছেন বিক্রেতা।’ পরে ৫০০ টাকা দিয়েই গরুর মাংস কিনতে বাধ্য হন তিনি।

শাহানারা বলেন, ‘এখন বুঝতে পারছি ওদের ধর্মঘট ছিল লোক দেখানো। আসল উদ্দেশ্য ছিল মাংসের দাম বাড়ানো।’

দোকানটির বিক্রেতা মো. খলিল বলেন, ‘কী করমু, আর কত দিন লস দিমু? গরু কিনার দাম না কমলে আমরা মাংসের দাম কমাইতে পারুম না।’

মালিবাগের লিয়াকত মোল্লা, খিলগাঁওয়ের ছানোয়ার হোসেন, মধ্যবাড্ডার সামসুন্নাহার ও কারওয়ান বাজারের রকিব আহমেদসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতাকে মাংসের দাম বৃদ্ধিতে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

অধিকাংশ বিক্রেতার জবাব এমন- ‘সরকার যেন ইন্ডিয়ার বর্ডারের ট্যাক্স কমায় আর লগে লগে রাস্তায় যারা চান্দা লয় তাগোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’ তারা বলেন, ‘আমরা কম দামে গরু কিনতে পারলে মাংসের দাম বাড়ামু কে? পারলে ৩০০ টেহায় বেচমু।’

গরুর মাংসের দাম বাড়ায় চাপ বাড়ছে মুরগির বাজারে। কয়েকজন গরুর মাংসের বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাংসের দাম বাড়ায় তাদের বিক্রি আগের চেয়ে কমেছে। তবে এমনটা বেশি দিন থাকবে না বলেও মনে করেন তারা।

এই প্রতিবেদকের উপস্থিতির সময়ই অনেক ক্রেতাকে দেখা গেছে দাম শুনে মাংস না কিনেই চলে যেতে। তাদের অনেকে যান মুরগির বাজারের দিকে।

কিন্তু সেখানেও গিয়ে স্বস্তি পেলেন না কারওয়ান বাজারের রকিব আহমেদ। মুরগির দামও বেড়ে গেছে গরুর মাংসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মুরগিভেদে ২০-৩০ টাকা বেশি দাম হাঁকেন বিক্রেতা। কদিন আগে যে ব্রয়লার মুরগি ১৩৫-১৫৫ টাকায় কিনেছেন, সেটি হাঁকা হচ্ছে ১৬০-১৬৫। লাল মুরগি কিনেছিলেন ১৬০-১৭৫ টাকায়, সেটি এখন ১৮০-১৯৫ টাকা।

রকিব আহমেদ বিক্রেতার কাছে জানতে চান, ইন্ডিয়া থেকে গরু আনতে কী কী সমস্যা, তাই ধর্মঘট ডেকে মাংস ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু ছাগল আর মুরগি তো ইন্ডিয়া থেকে আসে না, এগুলোর দাম বাড়বে কেন?

বিক্রেতাও যেন জবাব মুখে তুলে রেখেছেন। বলেন, মুরগি শেষ হয়ে গেছে। সরবরাহ কম।

গরুর মাংসের পাশাপাশি বিক্রি কমেছে খাসির মাংসেরও। কেজিপ্রতি প্রায় ১৫০ টাকা বাড়ায় বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে বলে জানান খাসির মাংস বিক্রেতা তারা মিয়া মফিজুল হক।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/এএকে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :