গ্যাসের দাম বৃদ্ধি কি যৌক্তিক?

আনিস রায়হান
| আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৫ | প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৩

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম মার্চ ও জুনে দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।

আবাসিকে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ৯ টাকা ১০ পয়সা এবং জুন থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা করে দিতে হবে। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৭ টাকা করে। এছাড়া যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত সিএনজির দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা হবে। আর ১ জুন থেকে হবে ৪০ টাকা।

এতে বেড়ে যাবে গাড়ি ভাড়া। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যক খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, যার ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে, ব্যবসায়ীরাও তা তুলবেন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে। শেষ বিচারে জনগণের পকেট থেকেই তা যাবে।

মূল্যবৃদ্ধির সরকারি যুক্তি

মূলত তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েই সরকার এই মূল্যবৃদ্ধি করেছে। প্রথমত, ব্যয়বৈষম্য ঘোচানো। বরাবরই সরকার বলে আসছে যে, পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহারকারীরা স্বল্প ব্যয়ে গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু পাইপলাইনের সুবিধা যারা পাচ্ছেন না, তারা এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে এই খাতে অনেক বেশি ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই ব্যয়বৈষম্য ঘোচাতে আবাসিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করল সরকার। এর ফলে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার বাড়বে। এরই অংশ হিসেবে বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাইপলাইন বসিয়ে নতুন কোনো বাসাবাড়িতে আর কখনই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না মর্মেও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ পাইপলাইন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তা সিলিন্ডার গ্যাসের দামের কাছাকাছি আনার মাধ্যমে সরকার রান্নার কাজে এলপিজিকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া সিএনজি থেকে যেন শিল্পে গ্যাস না যায়, সেজন্য সিএনজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, রাজস্ব আইনের নতুন ব্যাখ্যার সঙ্গে সমন্বয় তথা সরকারের আয়বৃদ্ধি। জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপাদনে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক কোম্পানি (আইওসি) রয়েছে তিনটি- অস্ট্রেলিয়ার সান্তোস, যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন ও যুক্তরাজ্যের তাল্লো। এসব কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে গ্রাহক পর্যায়ে কম দামে বিক্রি করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৯৯৩ সালে জারি করা ২২৭ নং এসআরও অনুযায়ী আইওসি গ্যাস শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি এনবিআর ওই এসআরও পুনর্ব্যাখ্যা করে পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ৫৫ শতাংশ রাজস্ব দাবি করেছে। এই দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণ প্রধানত এটাই।

সম্প্রতি বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাকসুদুল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘দাম যতটাই বাড়ানো হোক, তার প্রধান কারণ গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ব্যয় সংকুলান হবে এই অর্থ দিয়ে।

তৃতীয়ত, আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সঙ্গে দামের পার্থক্য কমিয়ে আনা। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালের দিকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আমদানিকৃত নতুন গ্যাস। এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে তরল থেকে এটি গ্যাসে রূপান্তরিত হবে। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের গড় দাম পড়ছে প্রতি হাজার ঘনফুট ২ দশমিক ২ ডলার। কিন্তু প্রতি হাজার ঘনফুট আমদানিকৃত এলএনজির দাম পড়বে ৭ থেকে ৮ ডলার। এতে বছরে শুধু গ্যাস কেনা বাবদ খরচ হবে দেড় বিলিয়ন ডলার। বেশি দামের ওই গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যমান গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করতে আমদানিকৃত গ্যাস আসার আগেই বিদ্যমান গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করল সরকার।

বিশেষজ্ঞদের মত

সরকারের দেয়া উপরোক্ত তিন যুক্তি মানতে নারাজ এই খাতের বিশেষজ্ঞরা। তথ্য-উপাত্তের সাহায্যে তারা প্রমাণ করেছেন, এসব যুক্তি অসঙ্গতিপূর্ণ। খ্যাতিমান জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। সরকারের এই তিনটি যুক্তিকেই খারিজ করেছেন তারা।

অধ্যাপক এম শামসুল আলম আমাকে বলেন, ‘সরকার বলছে, সমতাবিধানের জন্য গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব। আমরা বলেছি, পাইপলাইনের ব্যবহারকারীরাই তো গ্যাস ঠিকমতো পাচ্ছে না। মাসিক গ্রাহক ৯২ ইউনিট খরচ ধরে তাদের গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৫০ টাকা। কিন্তু দেখা গেছে, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে একজন গ্রাহক মাসে খরচ করেন মাত্র ৪২ ইউনিট। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ৪২ ইউনিট গ্যাস দিয়ে তারা ৯২ ইউনিটের দাম নিচ্ছে। অথচ বর্তমানে ওই ৪২ ইউনিটও মানুষ পাচ্ছে না। সেই হিসাবে গ্যাসের দাম তো আরও কমানো দরকার।’

শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে, এলপিজির দাম বিইআরসির গণশুনানি মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। এলপিজির সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এলপিজির বাজার যাতে কেউ একচেটিয়াভাবে দখল করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এলপিজি গ্যাস খাত এখন বেসরকারি খাতে। এখানে কালোবাজার তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সালে সরকার যে এলপিজির দাম ৭০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে, তা এখন ৯৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার সেই কালোবাজারির ফলে বাড়া দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে এখন পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে তারা কালোবাজারিকে বৈধতা দিচ্ছে। আমরা ভারতে এলপিজির দাম বিবেচনায় নিয়ে ও এদেশের বিভিন্ন সূচক হিসাব করে দেখেছি যে, এর দাম ৪৫০ টাকা হওয়াই সমীচীন। সে হিসাবে পাইপ লাইনের গ্যাসের গ্রাহকরা তো ইতোমধ্যেই এলপিজির দামের চেয়ে বেশি খরচ করছেন। তাছাড়া বাসাবাড়ির গ্যাস, পরিবহনের গ্যাস ও শিল্প খাতের ক্যাপটিভ বিদ্যুতে দেয়া গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা এসব খাতে এলপিজি ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে, এভাবে এলপিজির বাজার বিস্তৃত করা হচ্ছে।’

রাজস্ব আয় বাড়াতে যেভাবে আইন সংশোধন করা হয়েছে, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস খাতের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করেই ১৯৯৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে ৫৫ শতাংশ রাজস্ব (৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূসক) না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায় তা ব্যয় করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে এসআরও (২২৭ নম্বর) জারি করেছিল, এখন তার অন্যথা করা জনস্বার্থের অনুকূল নয়। তাছাড়া এই খাতে ইতোমধ্যেই জনগণ সরকারকে অনেক দিয়েছে। গ্যাসের যে দাম বাড়ানো হয় তার ৮১ ভাগই যায় সরকারের পকেটে।’

এলএনজি আমদানির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো এক সময় ব্যয় বাড়তে পারে, তাই আজই আগাম মূল্যবৃদ্ধি করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। কোথাও এটা পাওয়া যাবে না যে, কবে বেশি ব্যয় হবে তা ভেবে আজ দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না যে, যা ঘটেনি তার জন্য আমাদের বাড়তি মূল্য দিতে হবে।’

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘গ্যাস কোম্পানিগুলো সব লাভেই আছে, তাদের রাজস্ব ঘাটতি নেই। গণশুনানিতে আমরা এটাই প্রমাণ হতে দেখেছি। কিন্তু সেখানে যেসব মত উঠে আসছে তা গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। বিভিন্ন পক্ষের যৌক্তিক মতামত যদি গ্রহণ না করা হয়, তাহলে শুনানি করার দরকারটা কি? আমার মতে এটা লোক দেখানো শুনানি হচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফল্যে মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য, পরিবহন ব্যয়সহ সকল খরচই বাড়বে। তাহলে কোন যুক্তিতে এই মূল্যবৃদ্ধি, এটা আমার মাথায় আসে না। দরকার ছিল এলপিজির দাম কমিয়ে আনা। তা না করে তারা এলপিজির বাড়তি দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

বদরুল আলম আরও বলেন, ‘সরকার যেভাবে এলএনজির পরিকল্পনা করছে, তা আমাদের জ্বালানি ভারসাম্য ও অর্থনীতিতে বিরাট একটা আঘাত হয়ে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে তারা পরিকল্পনা করছে এভাবে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনার, পর্যায়ক্রমে এটা তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত বাড়াতে চায় তারা। বসে থাকা শিল্পগুলো চালু এবং আরও প্রবৃদ্ধির জন্য সরকার এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। কিন্তু যে দামে এই গ্যাস আসবে, তা অতি উচ্চমূল্য। এটা দেশে একটা বিরাট ‘প্রাইসশক’ (মূল্যদুর্ভোগ) ঘটাবে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে তারা এখনই গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। যেন পর্যায়ক্রমে সবই উচ্চমূল্য হয়ে যায়। আমদানিকৃত গ্যাস কিনতে তখন কারও বাধবে না। এটা তো কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে না। রাষ্ট্র কিন্তু জনগণের সঙ্গে এরকম করতেও পারে না। এটা আমার মনে হয় উল্টো পথে চলা। সহজ সমাধানটা ছিল, গ্যাস উত্তোলনে মনোযোগ দেয়া। সাগরে আমাদের গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১২ সালে সাগরের সীমানা বিতর্ক অবসানের পর মিয়ানমার কিন্তু আমাদের সীমানার পাশেই গ্যাস তুলতে শুরু করেছে। তারা অনেক এগিয়েও গেছে। মিয়ানমারের ওই গ্যাসক্ষেত্রের পাশে আমাদের সীমানাতেও গ্যাস পাওয়ার কথা। অথচ নতুন গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পিছিয়ে আছে। মোটকথা, জ্বালানি সংকট সমাধানে সঠিক পদক্ষেপগুলো গৃহীত হচ্ছে না বরং এই খাত চলছে উল্টোপথে। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা ক্রমশ আরও অবনতির দিকেই যাচ্ছে।’

করণীয়

এটা খুব পরিষ্কার যে, জ্বালানি খাতের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা অর্জনের চেয়ে এই খাতকে ব্যবহার করে মুনাফা করার দিকেই সরকারের আগ্রহ বেশি। ফলে এই খাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনবান্ধব হচ্ছে না, হচ্ছে গণস্বার্থ পরিপন্থী। জ্বালানি সংকট ঘনীভূত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার প্রভাব এখনই পড়ার কথা ছিল না। আর এই সংকটের কারণও সরকারের ভুল পদক্ষেপ ও দুর্নীতি। যে সংকট এখনো আসেনি, মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার জনগণকে সেই জ্বালানি সংকটের পরিস্থিতিতেই নিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের আরোপিত দায়মুক্তি অধ্যাদেশের কারণে এসব বিষয় নিয়ে আদালতে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতিতে একটাই কর্তব্য, সরকারের এসব কর্মকান্ডে বাধা দেয়া। এই অন্যায় চলতে দেয়া যায় না। স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে দেশ ও জনগণকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ার এই সরকারি পাঁয়তারার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।

লেখক: বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :