ইসলামবিরোধী হামলা থেকে বাঁচতে হিন্দুদের তিলক, সিঁদুর পরার পরামর্শ
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে 'হেইট ক্রাইম' কিংবা ইসলামবিরোধী বিদ্বেষ থেকে রক্ষা পেতে সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারী পুরুষদের কপালে তিলক ও নারীদের সিঁদুর বা বিন্দি পরার পরামর্শ দিলেন ভারতে দক্ষিণপন্থী একটি হিন্দু সংগঠন।
হিন্দু সংহতির সভাপতি তপন ঘোষ মনে করেন, হিন্দুরা যদি তিলক-সিঁদুরের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পারেন তাহলে পাশ্চাত্যে ইসলাম-বিরোধী হামলাগুলোর আঁচ তাদের গায়ে লাগবে না।
তবে তার এই বক্তব্যের পর ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। অনেকেই বলেছেন, হিন্দুদের এভাবে বাঁচানোর কথা বলে তিনি কি অন্য ধর্মের লোকেদের ওপর হামলাকেই সমর্থন করছেন?
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের বারে শ্রীনিবাস কুচিবোটলা নামে এক প্রবাসী ভারতীয় যুবককে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেন মার্কিন নৌবাহিনীর এক সাবেক সেনা।
প্রায় দশ বছরের পুরনো ভারতী কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন ‘হিন্দু সংহতি’ মনে করছে, ওই যুবক যদি কপালে তিলক পরে থাকতেন তাহলে তিনি হামলার হাত থেকে বেঁচেও যেতেন। কারণ হিন্দুরা ওই সব আক্রমণের নিশানা নন।
সংগঠনের নেতা তপনের পরামর্শ, পাশ্চাত্যের হিন্দুরা নিজেদের আলাদা করে চেনাতে কপালে তিলক বা সিঁদুর ব্যবহার করে দেখুন। এটা পরলে সবাই চিনতে পারবেন যে হিন্দু আসলে কারা। কে না জানে শিখরা বহুবার আক্রান্ত হয়েছেন কারণ বিন লাদেনের পাগড়ির সঙ্গে তাদের পাগড়িকে অনেকে গুলিয়ে ফেলেছে। অনেক তরুণ প্রজন্মের শিখ তো নিরাপত্তার জন্য পাগড়ি পরা ছেড়েই দিয়েছে। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচুর হিন্দু আছে, তাই হিন্দু ছেলেরা যদি তিলক আর হিন্দু নারীরা বিন্দি বা সিঁদুর পরা শুরু করেন, তাদের অবশ্যই আলাদা পরিচিতি তৈরি হবে। সেই জন্যই আমি ওই প্রস্তাব দিয়েছি।"
সংবাদমাধ্যমে তার এই মন্তব্য প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই যেমন তার প্রস্তাব অবাস্তব ও কুরুচিপূর্ণ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন, তেমনি অনেকে আবার তা সমর্থনও করছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রিয়ংবদা সরকারের মতে, তিলক-সিঁদুরের কথা বলে হিন্দু পরিচয়টাকেই আসলে খুব সরলীকরণ করে ফেলা হচ্ছে। পরিচিতি বা আইডেন্টিটি জিনিসটা সহজ নয়, এতে অনেক জটিলতা আছে। আর পরিচয় মানে কখনওই শুধু ধর্মীয় পরিচয় হতে পারে না, এখানেই একটা মস্ত গন্ডগোল করে ফেলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বহু বছর ধরে বাস করেন কলকাতার শৌভিক রায়। তিনি বলেন, ওই দেশে কখনওই তিলক পরার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারবো না। এটা ভীষণ বোকার মতো প্রস্তাব। যখনই একটা জাতি বা ধর্মীয় গোষ্ঠী নিজেদের আলাদা করে দেখাতে চায়, আলাদা ভাষায় বা ভঙ্গীতে কথা বলে কিংবা আলাদা 'অ্যাপিয়ারেন্স' দিতে চায়, তখনই অভিন্ন সমাজে তাদের ঘিরে সংশয় তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রআসলে খুব অন্য রকম দেশ, একটা সমুদ্রের মতো। সাগরে যেমন সব নদী মেশে, এখানে এসে মেশে পৃথিবীর সব দেশের লোক। এখানে সংবিধান সব ধর্মের লোককে নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা দেয় ঠিকই, কিন্তু তাই বলে সমাজের সেটাই রীতি হবে, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু তা মনে করে না।
হিন্দু সংহতির তপন ঘোষ এক সময়ে আরএসএস-র প্রচারক ছিলেন। তিনি বিবিসিকে পরিষ্কার জানান, যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে প্রায় সব হামলাই আসলে ইসলামবিরোধী হামলা, সেগুলোকে বর্ণবাদী বা অভিবাসনবিরোধী হামলার তকমা দেওয়াটাই অর্থহীন। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সব ধর্মেই তো নানা মতের লোক আছেন। ফলে কেউ যদি খ্রিষ্টানবিরোধী হন, তাকে তো আপনি রেসিস্ট বা বর্ণবাদী বলতে পারেন না।ফলে আমি বলব পাশ্চাত্যে এ ধরনের সব হামরাই আসলে ইসলামের বিরুদ্ধে হামলা, কিছুতেই রেসিয়াল অ্যাটাক নয়।’
ভারতের এই হিন্দু সংগঠনগুলোর বক্তব্য, পশ্চিমা দেশগুলোতে হিন্দুরা শান্তিপ্রিয় বলেই পরিচিত, সমাজে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। সুতরাং নিজেদের সুরক্ষার জন্য তাদের আলাদা পরিচিতি দরকার।
(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/জেএস)