ওদের ধারণা- তৃতীয় শ্রেণীটা এরকমই হয়!

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০১৭, ১০:৩৮

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, /রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। /বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, /একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। /একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, /তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।”

আসমানী কবিতায় কবি জসীমউদ্দিনের বর্ণনার রহিমদ্দির বাড়িটির সাদৃশ্য চোখে পড়ল টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ইউনিয়নের মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ছোট্ট ছাউনি। ভবন ও শ্রেণীকক্ষ সল্পতায় স্থানীয়রা স্কুল ক্যাম্পাসের মাঝেই তৈরি করেছে একটি একচালা ঘর। যেখানে রোদ আর বৃষ্টি কোনটারই ডুকতে বেগ পেতে হয় না। এর মধ্যেই চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। বিদ্যালয়টির শ্রেণী কক্ষ ও ভবন সল্পতায় মনে হচ্ছে এটি শিক্ষা অফিসের অধীনের বাইরে।

যেখানে হাতে-খরি। যেখানকার পরিবেশ দেখে শিশুরা পরিবর্তন করবে সামাজিক পরিবেশ। অথচ প্রথম ধাপেই হোঁচট খেতে হচ্ছে এসব কোমলমতি শিশুদের। ওই কক্ষে নেয়া হচ্ছে- তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ওরা জানে একচালাতেই তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তে হয়।

তৃতীয় শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী রবিন, সাদিয়া, এ্যানি, ইয়ামনি ও সৌরভ বলল, আমরা থ্রিতে পড়ছি। আর কয়টা দিন। ফোরে উঠলেই বিল্ডিংয়ে পড়তে পাড়ব। ওরা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি বিদ্যালয়টিতে ভবন ও কক্ষ স্বল্পতা। ওদের ধারণা, তৃতীয় শ্রেণীর জন্যই শুধু এরকম কক্ষ ব্যবহার করা হয়।

তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যাপিঠ এই বিদ্যালয়টিতে সাতটি শ্রেণী কক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র চারটি। গত তিন বছর আগে একটি পরিত্যাক্ত ভবন ভেঙে ওয়াশব্লক তৈরির পর থেকে সৃষ্টি হয় শ্রেণীকক্ষ স্বল্পতা। প্রাক প্রাথমিকের জন্য একটি কক্ষের মেঝে ব্যবহার করায় এই কক্ষে দ্বিতীয় শিফটের কোন পাঠদান করানো যায় না, বললেন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

বিদ্যালয়টির ছয়-সাত ফিটের একটি সিঁড়িকক্ষও ব্যবহার করা হচ্ছে পাঠদানে। এতেও সংকুলোন না হওয়ায় কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চালায়। পরে স্থানীয়রা একটি একচালা ঘর তৈরি করে দিয়েছে মাঠের এক কোণে।

ওই কক্ষে পাঠদানের অনুপযোগী বললেন, শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। এতে ব্যাঘাত ঘটছে পাঠদান কার্যক্রম। খোলা আকাশের নিচে ক্লাস হচ্ছে না। হচ্ছে একটি কক্ষে। তবে কক্ষ থেকে বাইরের পরিবেশ সহজেই দেখা যাওয়ায় শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা মনযোগী থাকছে না। এমন কি শ্রেণীকক্ষে পড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে পাশের সব প্রাইভেট স্কুলগুলোর দিকে।

বিদ্যালয়টিতে নয়জন শিক্ষক-শিক্ষিার পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় সহকারী শিক্ষকের ওপর রয়েছে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ভার। একদিকে প্রধান শিক্ষকের শূণ্যতা। অন্যদিকে শ্রেণীকক্ষ স্বল্পতা।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম খান বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির দেলদুয়ার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, শ্রেণীকক্ষ বাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে একটি ভবনের বিশেষ প্রয়োজন। উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে। কিন্তু নতুন ভবনের আশ্বাস না পাওয়ায় এভাবেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে এই বিদ্যায়টিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে এসব শিশুর পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

দেলদুয়ার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, মশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন স্বল্পতা সম্পর্কে আমরা অবগত। এ বিদ্যালয়সহ উপজেলায় ৫টি বিদ্যালয়ে ভবন স্বল্পতা রয়েছে। পাঠদানের বিঘ্ন ঘটায় আমরা একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও ভবন ধার্য হয়নি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :