রূপগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ (ঢাকাটাইমস)
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০১৭, ১২:৫০

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ-ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাটিতে বসেই চলছে পাঠদান। পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

দড়িয়াকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে তিনটি ভবন রয়েছে। ১৯৬৫ সালে স্থাপিত ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর ২০০৭ সালে এটি পুননির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন পুননির্মাণের ২০ বছর যেতে না যেতেই ভবনটির বিভিন্ন অংশে ভাটল দেখা দিয়েছে। ভবনে ফাটল ধরার পরও কোন উপায় না পেয়ে শিক্ষকদের এ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণী কক্ষেই ক্লাস করতে হচ্ছে।

এ বিদ্যালয়টিতে ৩৩২ জন শিক্ষার্থী ও সাত জন শিক্ষক রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ৯০ ভাগই হতদরিদ্র। অভিভাবাবকদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শিল্প কারখানায় কাজ করেন। তাই দারিদ্রতার তাড়নায় অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও এখানে পড়াতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের দুইটি ভবনে সর্বমোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে- যার মধ্যে দুই দুইটি ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর বাকি ৪টি কক্ষে দেয়ালে বিভিন্ন অংশে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিতে ফাটল ও ছাঁদের ভিমে ও মূল অংশে ফাটল দেখা দেয়ার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠছে। বাধ্য হয়েই ভবনের মধ্যেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এরকমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস চলতে থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া বিদ্যলয়টিতে বাউন্ডারি না থাকার কারণে শ্রেণী কক্ষের ফ্যান, জানালা ও চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। ফ্যান না থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে শিক্ষার্থীদের গরমের মধ্যে ক্লাস করতে হয়।

হালিমা নামে এক অভিভাবক জানান, তিনি স্বল্প বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অভাবের সংসারে ছেলেকে ভাল স্কুলে পাড়নোর মতো সামর্থ তার নেই। তার ছেলে চতুর্থ সিয়াম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। প্রাই সময়ই শ্রেণী কক্ষে জায়গা না থাকার কারণে সিয়ামসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করতে হয়। এছাড়া বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের ২০ বছর হতে না হতেই বিদ্যালয়ের ভবনের দুরাবস্থা।

ওই অভিভাবক আরো জানান, সামর্থ্য না থাকার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তিনি তার ছেলেকে এখানে পড়াচ্ছে। তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যলয়টিতে নতুন ভবন নির্মাণ করা হউক, নতুবা যেকোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা জানান, সব ভবনেই ফাটল ধরার কারণে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে হয়। স্কুলের নির্দিষ্ট কোন বাউন্ডারি না থাকার কারণে বাইরের লোকজন বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারে। এতে করে অপহরণকারীরা যেকোন শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারবে।

তিনি আরো জানান, উপর মহলের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টি প্রত্যেক মাসে দুইবার করে পরিদর্শন করে যান। তাদের এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, ভবনগুলো ফাটল ধরার উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপর মহলের কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার জানানো হলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। অথচ উপর মহলের কর্মকর্তারা বিদ্যালয়টিতে প্রতি মাসে দুইবার করে পরিদর্শনে আছেন।

আব্দুল আলীম কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি ও মানসম্মত বাথরুম ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে থাকতে হচ্ছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় যেকোন সময় মারাত্মক কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি বিউটি আক্তার বলেন, এ ব্যাপারটি কয়েকবার উপজেলার শিক্ষা অফিসারকে জানানো পরও এ ব্যাপারে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইসলাম বলেন, শিগগির বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধান করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :