স্কুলছাত্রী ও বোনকে নির্যাতনের পর নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার!

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০১৭, ২২:১৫

রাজীবুল হাসান, ভৈরব প্রতিনিধি

বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরের প্রতিবাদ করায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ও তার বোনকে নির্যাতন ও ২০১৫ সালের হরতাল-অবরোধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে ভৈরব থানার পুলিশের বিরুদ্ধে।

পৌর শহরের কমলপুর মুসলিমের মোড় এলাকার রিকশাচালক খায়ের মিয়ার মেয়ে বুশরা আক্তার পান্না (১৭) ও  তার বড় বোন দুই সন্তানের মা বন্যা আক্তার (২০) এখন কারাগারে।

পান্না স্থানীয় কমলপুর হাজি জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখার দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর বোন বন্যা তার সন্তান নূরুল ইসলাম নূর (৭) ও গোলাম মোস্তফাকে (৫) নিয়ে কিছুদিন আগে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন।

পারিবারিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, পান্না-বন্যার বড় ভাই কাউছার (২৫) একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তার খোঁজে তাদের বাড়িতে যায় ভৈরব থানার জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক মো. নজমুল হুদার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। তারা টিনের তৈরি সদর গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকলে এর প্রতিবাদ করেন পান্না ও বন্যা। এই নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে নজমুল হুদা দুই বোনকে মারধর করে ঘরে ঢুকে কাউছারের সন্ধান করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ঘরের আসবাব ও মালামাল ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

প্রতিবেশীরা জানায়, কাউছারকে না পেয়ে পান্না ও বন্যাকে আবার মারধর করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পান্না-বন্যার বাবা খায়রুল জানান, ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের থানার অদূরে আলশেফা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় পিকেটারদের ইট-পাটকেলে বাসের এক যাত্রী আহত হয়ে পরে মারা যায়। ওই ঘটনায় করা একটি মামলায় তার দুই মেয়েকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলে পুলিশ।

গত সোমবার কিশোরগঞ্জ জেল-হাজতে মেয়েদের দেখতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে পান্না-বন্যার মা মরিয়ম বেগম বীনা অভিযোগ করেন, তখন মেয়েরা তাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা নজমুল হুদাসহ অন্যদের অশালীন আচরণসহ শারীরিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। বলেই  কান্নায় ভেঙে পড়েন মরিয়ম বেগম। তিনি পুলিশ অফিসার নজমুল হুদার শাস্তি দাবি করেন।

আবুল খায়েরের বাড়িতে পুলিশি অভিযান ও পান্না-বন্যাকে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী গৃহবধূ রীনা বেগম। তার ভাষ্য, ‘পান্না-বন্যার চিৎকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখি তাদের মারধর করছে পুলিশ। আমি তাদের না মারতে অনুরোধ করলে নাজমুল দারোগা আমাকেও গালিগালাজ শুরু করে। আমি তখন চুপ করে থাকি।’

সামসুন্নাহার বেগম নামের এক গৃহবধূ জানান, একপর্যায়ে উপপরিদর্শক নজমুল হুদা মোবাইল ফোনে কল করে থানা থেকে নারী পুলিশ সদস্য এনে বন্যা-পান্নাকে উঠিয়ে নিয়ে যান।

বন্যা-পান্নার বাবা খায়ের মিয়া জানান, তিনিসহ তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি সদ্য সমাপ্ত পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের একজন ভোটার (ডেলিগেটর) ছিলেন। তার ক্রমিক নং ৩০ আর সদস্য নং ৬০৬৭৫০। একজন আওয়ামী লীগার হয়েও তার মেয়েরা কী করে বিএনপি-জামায়াতের পিকেটিংয়ে অংশ নিয়ে গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মানুষ হত্যা করল- প্রশ্ন তোলেন খায়ের মিয়া।

তিনি দুই মেয়ের মুক্তি দাবি করে পান্না-বন্যার বাবা বলেন, ‘মামলার বর্ণনা মতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ঘটনা ঘটে। সেবার আমার ছোট মেয়ে জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। আর বন্যা তো ছিল তার স্বামীর বাড়ি গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামে।’ তার মেয়েদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জেলে পাঠানোর অভিযোগ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং পুলিশ কর্মকর্তা নজমুল হুদার বিচার দাবি করেন তিনি।

বন্যার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লেফটেন্যান্ট মো. অহিদুর রহমান জানান, বুশরা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। সে নম্র-ভদ্র ও শান্ত। তিনি পান্নার মুক্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক মো. নজমুল হুদা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন।  তিনি বলেন,  পান্না ও বন্যা দুই বোন নাশকতা মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। ওই দিন তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/মোআ)