ফ্রি সাঁতার শিখিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন পাবনার ইমামুলের

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা থেকে
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৭, ০৮:২৯

ব্যক্তিগত ইচ্ছায় পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে মাত্র তিন বছরে গ্রামের সব শিশুকে সাঁতারে পারদর্শী করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার ঈশ্বরদীর ইমামুল। কোনো শিশুই যেন পানিতে ডুবে অকালে প্রাণ না হারায় সে টার্গেট তার।

পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাড়াগোপালপুরের বকশিচক গ্রামের ইমামুল হক ঢাকাটাইমসকে জানান, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। সে সময় প্রায়ই দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় পড়তেন। এতে তিনি বিমর্ষ হয়ে মনে মনে পণ করেন অন্তত তার গ্রামের কোনো শিশু যেন পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ না করে সে ব্যবস্থা করবেন তিনি। তখন থেকেই গত তিন বছরে এলাকার তিন শতাধিক শিশুকে সাঁতার শিখিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

এলাকাবাসী জানা, ইমামুলের বাড়ির আঙিনার পাশের ছোট্ট পুকুরে সাঁতার শেখানোর পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বন্ধু ও এলাকার মানুষদের বুঝিয়ে আকৃষ্ট করে তোলেন তিনি।

ঈশ্বরদীর সেলিম সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিনামূল্যে সাঁতার শেখানোর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে খুশি অভিভাবক ও গ্রামবাসী। ইমামুলের মতো অনেকেই এগিয়ে এলে কোনো শিশু পানিতে ডুবে অকালে মৃত্যু হবে না বলছেন তারা।

এলাকাবাসী জানায়, এই গ্রামের পাঁচ বছর বয়সী সব শিশুই সাঁতার জানে এবং শিশুরা সাঁতার শিখে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করছে।

ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শারমিন নাতাশা ও তার ছোট ভাই মাহিম এসেছে বাবার সঙ্গে সাঁতার শিখতে। নাতাশা জানায়, এক মাসেই সে সাঁতার শিখতে পেরেছে।

নিজ বাড়ির ৮০ ফুট লম্বা ও ৫০ ফুট চওড়া পুকুরটিকে সাঁতার প্রশিক্ষণের উপযোগী করে তুলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় তাকে। রাবারের আটটি টিউব ও ফুটবল। পুকুরে ওঠানামার জন্য বানান বাঁশের সিঁড়ি। সাঁতার শিখতে আসা মানুষের বিশ্রাম নেয়ার কথা ভেবে পুকুরপাড়ে বানান সিমেন্টের বেঞ্চ।

স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ইমামুলের সংসার। সম্পত্তি বলতে আছে বিঘা তিনেক জমি। এই জমিতে চাষাবাদের আয় ও পেনশনের টাকা দিয়ে সাংসারিক খরচ চলে। বড় ছেলে সুজন বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। ছোট ছেলে সৌরভ পাবনা পলিটেকনিকের ছাত্র।

প্রথমে দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূকে সাঁতার শেখান ইমামুল। এরপর প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয়দের সাঁতারে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এভাবে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সাঁতার শেখানোর কথা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকে নানা বয়সী মানুষ। তিনি সিদ্ধান্ত নেন আগে শেখাতে হবে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থী ও কিশোরদের। এরপর বড়দের।

নারীদেরও সাঁতার শেখাতে তিনি স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে প্রশিক্ষিত করেন। তিনি জানান, বর্তমানে ঈশ্বরদী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছে সাঁতার শিখতে আসছে।

ইমামুলের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিশু-কিশোর, নারী ও পুরুষদের মোট তিনটি ব্যাচ রয়েছে। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এই ব্যাচে ৩০ জন শিক্ষার্থী একযোগে সাঁতার শেখে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন মাস। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সম্পাদন ও পুরস্কারের সব খরচ ইমামুলই দেন।

ইমামুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, সবারই সাঁতার শেখা উচিত। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঁতার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা দরকার। প্রয়োজনে বিদ্যালয় ঘুরে ঘুরে সাঁতার শেখাতে রাজি তিনি।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুদের সাঁতার শেখানো উচিত এবং সরকারি চাকরিতে সাঁতার জানাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ইমামুলের মতো অনেকেই এগিয়ে এলে অকালে প্রাণ রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :