ফুলবাড়ীতে অধ্যক্ষ নিয়োগে ২০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩৮
ফাইল ছবি

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার এ এইচ ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীকে বিপুল অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ‘বাণিজ্যের’ অর্ধেক ১০ লাখ টাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব অনিয়মের অভিযোগের তির মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদ বিশেষ করে সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের দিকে। তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বোর্ডের প্রতিনিধির পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নির্দেশনা অমান্য করে ভিন্ন পন্থায় ওই প্রার্থীকে নিয়োগের তৎপরতা চালাচ্ছে। এই প্রার্থী হলেন শাহবাজার এ এইচ ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের প্রভাষক মো. নজরুল ইসলাম।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে নিজে অবগত বলে ঢাকাটাইমসকে জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান।

জানা যায়, নিয়োগ-বাণিজ্য নির্বিঘœ করতে পরীক্ষার আয়োজন করা হয় রংপুর ধাপ সাতগারা কামিল মাদরাসায়। কিন্তু এ যাত্রায় বিশ^বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিনিধির আপত্তির কারণে ব্যর্থ হয়ে এখন গোপনে ঢাকায় পরীক্ষা নেয়ার নতুন মিশন চলছে। এ খবর ফাঁস হওয়ায় ঘটনাটি এখন ফুলবাড়িতে টক অব দ্য টাউন।

শাহবাজার এ এইচ ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফজলুল করিম অবসরে গেলে পদটি শূন্য হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী ওই পদে দায়িত্ব পাওয়ার কথা উপাধ্যক্ষের। কিন্তু নিয়ম ভেঙে পরিচালনা পর্ষদ রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আলমগীর হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়।

এরই মধ্যে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় পত্রিকায় অধ্যক্ষ ও দুজন এলএমএসএস পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তাতে অধ্যক্ষ পদে সাতজন প্রার্থী আবেদন করেন। তারা হলেন ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, আরবি প্রভাষক মো. নজরুল ইসলাম, মো. মিনহাজুল ইসলাম, মো. জায়েদুর রহমান, মাওলানা মো. আজিমুদ্দিন, মো. আব্দুল মতিন ও মো. খবিরুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ-বাণিজ্য নিরাপদ করতে ২০ জানুয়ারি রংপুর ধাপ সাতগড়া কামিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। ‘সাজানো পরীক্ষা’ অভিযোগ করে এতে অংশ নেনি দুই প্রার্থী- উপাধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম ও মো. মিনহাজুল ইসলাম।

পরীক্ষায় অংশ নেয়া বাকি পাঁচ প্রার্থীর সবাই ফেল করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৫ নম্বর পাওয়া আরবি প্রভাষক মো. নজরুল ইসলামকে নিয়োগ দিতে তোড়জোড় শুরু করেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রামাণিক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন। এ জন্য চাপ দেয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্ট্যাডিজ বিভাগের অ্যধাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান মোল্লাকে। কিন্তু তারা এই অনৈতিক আবদার অগ্রাহ্য করেন। শুধু দুজন এলএমএসএস নিয়োগের সুপারিশ করে অধ্যক্ষ পদের পুনর্বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন তারা।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এরই মধ্যে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রামাণিক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন অর্থের বিনিময়ে আরবি প্রভাষক নজরুল ইসলামকে আবার নতুন করে নিয়োগ দেয়ার জন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন করে নজরুল ইসলামকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার শর্তে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক ফুলবাড়ী শাখায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনের স্যালারি অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে।

ফেল করা প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য কমিটির চাপের কথা স্বীকার করেন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘লেনদেনের অভিযোগও শুনেছি। মূলত নিয়োগ-বাণিজ্য করতেই পরীক্ষা রংপুরে নেয়া হয়।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘৩০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় পাঁচজন প্রার্থীর কেউ পাস করেনি। সর্বনি¤œ ২ এবং সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ নম্বর পেয়েছে। এ রকম অযোগ্যদের নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

আবার পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন করা হয়েছে বলে শুনেছেন জানিয়ে মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পছন্দের প্রার্থীকে নেয়ার জন্য এটা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন না করে অন্যত্র নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রামাণিক বলেন, ‘নিয়োগ মানে টাকার খরচ। বোর্ড থেকে শুরু করে সাংবাদিক, কমিটির সদস্য সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়। এ ছাড়া মাদ্রাসায় অনেক খরচ হয়।’ এমএলএসএস নিয়োগে জনপ্রতি এক লাখ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ফেল করা প্রার্থী প্রভাষক মো. নজরুল ইসলামকে অধ্যক্ষ নিয়োগের পক্ষে তোড়জোড় সম্পর্কে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তিনি (নজরুল) অসুস্থ থাকায় ওই পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি। তবে আগামী নিয়োগ তিনি ভালো করবেন আমার বিশ^াস।’

এবার পরীক্ষা ঢাকায় নেয়া হবে এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো নিশ্চিত না। বোর্ডের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কিছু অনিয়ম করতে হয়। এতে কিছু করার নাই।’

কিছু লেনদেন হয়েছে বলে স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তবে বিষয়টি কমিটির সভাপতি ভালো জানেন।’ তার বেতন বিলের হিসাব নম্বরে ১০ লক্ষাধিক টাকার লেনদেনের বিষয়ে তিনি বেলন, ‘এ টাকা আমার ব্যক্তিগত।’ কিন্তু এই আয়ের বৈধ উৎস জানাতে চান না তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৫মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :