নাজিরপুরে সরকারি জমি ভরাট, প্রশ্নে চটে গেলেন ইউএনও

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর থেকে
| আপডেট : ০৫ মার্চ ২০১৭, ১০:৪৩ | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৭, ০৯:৫৩

পিরোজপুরের নাজিরপুরে সরকারি খাস জমি ও নদী ভরাট করে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহায়তায় অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি ও নদী দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন কতিপয় ব্যক্তি। কাজ শুরুর বিষয়টি স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কাছে জানিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে। এখানে নদী ভরাট করে পাকা কাঠামো নির্মাণ প্রশাসনের ইশারা ছাড়া শুরু হয়নি বলেও মনে করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের সাথে আলাপকালে তিনি বিষয়টিকে ‘ফালতু’ আখ্যা দিয়ে এ নিয়ে ‘প্যাঁচাল’ পোটার সময় তার নেই বলে জানান। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেও তিনি ঢাকাটাইমস প্রতিনিধির ফোনের লাইন কেটে দেন।

শনিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চটে গিয়ে তিনি ঢাকাটাইমসের প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেউলবাড়ী না কোন বাড়ী কী হয়েছে, কোন খাল ভরাট করছে এসব তো ঢাকাটাইমস্, ডেইলি স্টারের কাজ না’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনার আসল উদ্দেশ্যটা কী?’

এ ব্যাপারে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. গাউসের সঙ্গে। এ সময় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ছিলেন তার সঙ্গে। তিনি জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে কথা বলতে ফোন ধরিয়ে দেন। পরে জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ বিষয়টি শুনে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন এবং এ বিষয়টি দেখবেন বলে ঢাকাটাইমসকে আশ্বাস দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজিরপুরের উপজেলার দেউলবাড়ি ইউনিয়নের গাওখালী বাজার সংলগ্ন নদীর পাড়ের সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করে আসছে একটি মহল। সেই দোকান ঘরের পেছনের নদীতে গত প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্বে পাইলিং দিয়ে বালু ফেলে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় একটি চক্র। কাজ শুরুর পর কোনো বাধার সম্মুখীন না হওয়ায় ইতোমধ্যে কাজ এগিয়েছে বহুদূর। আর এ কাজের নেতৃত্বে রয়েছেন দেউলবাড়ী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও গাওখালী গ্রামের স্বপন মন্ডলসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী মান্নান শিকদার, শাহাদাত, হেদায়েত কাজী ও শফিকুল ইসলাম। এ কাজে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালি উল্লাহ সহায়তা করছেন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি খাস জমি ও বালু ফেলে নদী ভরাট করার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে অবহিত করলেও তারা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। এ সুযোগে কাজ এগিয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সমর্থন ছাড়া এ কাজ তারা করতে পারেন না বলে স্থানীয়দের ধারণা।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বপন মন্ডলের ভাইপো (ভাইয়ের ছেলে) ও গাওখালী বাজারের ব্যবসায়ী জুয়েল মন্ডল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সেখানে তারা দীর্ঘদিন ধরে দোকানঘর দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহ তাদের ওই জায়গা ডিসিআর পাইয়ে দেয়াসহ পাকা ভবন নির্মাণে সহায়তা করছেন। অফিস ম্যানেজ করেই পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানালেও ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালি উল্লাহ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের সরকারি খাস জায়গায় দোকান করে ব্যবসা করে আসছে। সেখানে পাকা ভবন নির্মাণের সংবাদ পেয়ে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহম্মদ শামীম কিবরিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন তহসিলদারকে নির্দেশ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (দেউলবাড়ী ইউনিয়ন) স্বপন মন্ডল শনিবার ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার ভাই সুখরঞ্জন মন্ডল ওই বাজারে ব্যবসা করেন। ওখানে আমাদের আধা শতাংশ জমি ডিসিআর নেয়া আছে। কবে, কখন নিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, দুই বছর আগে নিয়েছেন এবং প্রতি বছর ডিসিআর রিনিউ করতে হয়।

স্বপন মন্ডল বলেন, ওই জায়গায় শুরু হওয়া কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সরকারি খাস জমি দখল ও নদী ভরাটের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

নাজিরপুর থানা ওসি (তদন্ত) রাসেল সরোয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেখবেন। তারা আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহায়তা দেব।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :