নারায়ণগঞ্জে ১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়

আমির হুসাইন স্মিথ, নারায়ণগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩৩

একখণ্ড জমিতে সাত-আট কক্ষের ছোট দোতলা ভবন। কোনোটি পরিত্যক্ত কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ছোট পরিসরের এমন ১৪টি ভবনে চলছে ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছোট ছোট শ্রেণিকক্ষে সকাল-বিকাল পালা করে চার শিফটে চলে পাঠদান।

মাত্র দুই-তিন শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা এসব স্কুলে কোনো খোলা জায়গা নেই। ফলে প্রতিদিনের প্রাতকালীন সমাবেশ হয় শ্রেণিকক্ষে। ভবনে ওঠার সিঁড়ি সরু, ছোট ছোট ক্লাসরুমে গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীরা। ফলে সেখানে সুষ্ঠু পাঠদানের পরিবেশ অনুপস্থিত।

অনেকটা খুপরিঘরের মতো এসব স্কুল ভবনের সিঁড়ি এতটাই সরু যে দুজন চলতে পারে না তা দিয়ে। ওঠা-নামার পথে কোনো একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেক স্কুলের ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকির কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী। অনেক বিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষক সংকট।

নগরীর দেওভোগ এলাকায় এমনই একটি স্কুল লক্ষ্মীনারায়ণ আখড়া সরকারি প্রাথমিক বালক-বালিকা বিদ্যালয়। ১৯৩৭ সালে চার শতাংশ জমির ওপর নির্মিত দ্বিতল ভবনের এই স্কুলে রয়েছে আটটি রুম। তার মধ্যে ভূমিকম্পের কারণে দুটি শ্রেণিকক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন এলজিইডির প্রকৌশলীরা। বাকি ছয়টি রুমের একটি শিক্ষকদের জন্য। পাঁচটি কক্ষে চলে ক্লাস। এই ভবনের এক পালার ২৬ নং সরকারি লক্ষ্মীনারায়ণ সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন সাতজন। আর ২৭ নং বালিকা বিদ্যালয়ের ৪৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৭ জন শিক্ষক।

স্কুলটি পরিদর্শনে এসেছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দা মাহফুজা বেগম। তিনি সরেজমিন ঘুরে নানা সমস্যার চিত্র দেখতে পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। ছোট পরিসরের একটি শ্রেণিকক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। সকাল শিফটের স্কুল ছুটি হওয়ার আগে দুুপুরের শিফটের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এলে সামনের রাস্তায় তৈরি হয় জটলা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ২৬ নং স্কুলের সকাল শিফটের ক্লাস চলে দুই ভাগে। সকাল সাতটা থেকে ৯টা পর্যন্ত নার্সারি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। আবার সকাল নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত ক্লাস ফোর ও ফাইভ। এরপর সোয়া বারোটা থেকে শুরু হয় ২৭ নং স্কুলের ক্লাস। এখানেও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ক্লাস নেয়া হয়। অর্থাৎ এক ভবনে স্কুল চলে দুটি, শিফট চারটি।

২৭ নং লক্ষ্মীনারায়ণ সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী সাহা জানান, শিক্ষার্থীদের সংকুলান হয় না বলেই দুই ভাগে ভাগ করে স্কুল চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, একই অবকাঠামোতে দুটি করে স্কুল চলার কারণে এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন তারা। এক ভবনে দুটি স্কুল চলায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

প্রায় একই রকম চিত্র সদর উপজেলার ১১ ও ১২ নং বংশাল বালক-বালিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪ ও ১৫ নং পাইকপাড়া সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮ ও ১৯ নং বাবুরাইল বালক-বালিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০ ও ২১ নং বাবুরাইল ভুইয়াপাড়া সরকারি বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২ ও ২৩ নং দেওভোগ আদর্শ বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪ ও ২৫ নং দেওভোগ সরকারি বালক-বালিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩১ ও ৩২ নং নয়ামাটি বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৫ও ৩৬ নং গলাচিপা সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৭ ও ৩৮ নং আমলাপাড়া সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০ ও ৪১ নং বন্ধুস্মৃতি সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৪ ও ৪৫ নং এলকে খানপুর সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৬ ও ৪৭ নং খানপুর বালক-বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪৮ ও ৪৯ নং তল্লা সরকারি বালক-বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ ক্লাসরুম বিভিন্ন সময়ের ভূমিকম্পের কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

৪৪ ও ৪৫ নং খানপুর এলকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মাত্র পৌনে দুই শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর এই বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন এলজিইডির প্রকৌশলীরা। তারপরও ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। কিছু ক্লাস নেয়া হয় পাশের সিদ্ধিগোপাল মন্দিরের মেঝেতে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানান, বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে কয়েকদফা জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, একই অবকাঠামোতে দুটি স্কুল পরিচালিত হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। একই আসবাবপত্র, অবকাঠামো, চেয়ার-টেবিল দুই প্রতিষ্ঠান নিজেদের বলে দাবি করছে। ফলে কেউ নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা আসবাবপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করছে না।

এ ছাড়া এসব স্কুল মনিটরিংয়েও সমস্যা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের। কেননা সরকারি অফিস সময় শুরু হওয়ার আগেই স্কুলগুলোর মর্নিং শিফট ছুটি হয়ে যায়। ফলে তাদের মনিটরিংয়ে রাখা যায় না।

তবে ১৯ নং বাবুরাইল সরকারি প্রথমিক বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পিন্টু প্রভা সাহা দাবি করেন, একই অবকাঠামোতে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও পাঠাদানে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। শিক্ষকরা সময়মতোই সিলেবাস শেষে করছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দা মাহফুজা বেগম জানান, এক অবকাঠামোতে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলার কারণে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে অবকাঠামোর উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ১৪টি সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়েট ২৮টি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু ভবন ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জানান, শিল্পকারখানা অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সংকট ভূমি। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই একই অবকাঠামোতে দুটি করে প্রতিষ্ঠান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জমি ও সুযোগ পেলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেনীতে অনাবাদি জমিতে শতকোটি টাকার তরমুজ চাষ

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেলসহ তিন চোর আটক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু 

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :