ঢাকাটাইমসের সংবাদে ইউএনওর স্ট্যাটাস, বুধবার যাচ্ছেন স্কুলে

রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৭, ২০:৫৭ | প্রকাশিত : ০৭ মার্চ ২০১৭, ১৮:৩২

মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি স্কুলের দুর্র্দশার সংবাদ পড়ে তা সমাধানে সামাজিক উদ্যোগ নিয়েছেন দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকতা মা. শাহাদত কবির। এ জন্য প্রতিবেদনটির লিংক দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন পেজ থেকে শেয়ার করে তিনি এর সঙ্গে নিজের একটি স্ট্যাটসও যুক্ত করেন।

তাতে তিনি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষস্বল্পতায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পরিদর্শনে বুধবার সেখানে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে।

গত ২ মার্চ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ‘ওদের ধারণা- তৃতীয় শ্রেণীটা এ রকমই হয়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ঢাকাটাইমসে। প্রতিবেদনটি উঠে আসে জেলা-উপজেলার আলোচনায়। এরপর সামাজিক উদ্যোগে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন ‘নাগরিক আড্ডায় উন্নয়ন ভাবনা’র ধারণার জন্য প্রশংসিত ইউএনও মো. শাহাদত কবির। দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন পেজে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

‘বন্ধুরা, এগিয়ে আসুন। আওয়াজ তুলুন, ভাল কাজের জন্য। এলাসিন ইউনিয়নের মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চরম দুরবস্থার বর্ণনা উঠে এসেছে সাংবাদিকের লেখনীতে। স্কুলটির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ধারণা, ক্লাস থ্রি মানেই বোধ হয় ও-রকম ভাঙাচোরা ক্লাসরুম! তো, চলুন দেখি, আমরা সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগে কিছু একটা করে ওদের এই ভুল ভেঙে দিতে পারি কি না। গত ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দেলদুয়ার জমিদারবাড়ি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত নাগরিক আড্ডায় আমরা ভাল কাজের শপথ নিয়েছিলাম। আর কথা খরচ না করে চলুন, তাহলে এগিয়ে যাই। আগামী বুধবার (৮ মার্চ) সকাল ১১.০০ টায় আমরা যেতে চাই ওই স্কুলে। দেখব ওখানকার অবস্থা। কথা বলব স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে। আমরা নাগরিক আড্ডার বন্ধুরা চেষ্টা করে দেখি সবাইকে সাথে নিয়ে স্কুলটির জন্য কিছু করতে পারি কি না। যে যেখানে আছেন, আওয়াজ দিন।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে নানা রকম উৎসাহ ও প্রশংসামুল মন্তব্য করছেন ওই পেজের বন্ধুরা।

আবার পড়ি প্রতিবেদনটি আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,/রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।/বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,/একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।/ একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,/ তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।’

‘আসমানী’ কবিতায় কবি জসীম উদ্দিনের বর্ণনার রহিমদ্দির বাড়িটির সাদৃশ্য চোখে পড়ল টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ইউনিয়নের মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ছোট্ট ছাউনি। ভবন ও শ্রেণিকক্ষস্বল্পতায় স্থানীয়রা স্কুল ক্যাম্পাসের মাঝেই তৈরি করেছে একটি একচালা ঘর। যেখানে রোদ আর বৃষ্টি কোনোটারই ঢুকতে বেগ পেতে হয় না। এর মধ্যেই চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষ ও ভবনস্বল্পতায় মনে হচ্ছে এটি শিক্ষা অফিসের অধীনের বাইরে।

যেখানে হাতে-খড়ি, যেখানকার পরিবেশ দেখে শিশুরা পরিবর্তন করবে সামাজিক পরিবেশ, অথচ প্রথম ধাপেই হোঁচট খেতে হচ্ছে এসব কোমলমতি শিশুকে। ওই কক্ষে নেয়া হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ওরা জানে একচালাতেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তে হয়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী রবিন, সাদিয়া, এ্যানি, ইয়ামনি ও সৌরভ বলল, ‘আমরা থ্রিতে পড়ছি। আর কয়টা দিন। ফোরে উঠলেই বিল্ডিংয়ে পড়তে পারব।’ ওরা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি বিদ্যালয়টিতে ভবন ও কক্ষস্বল্পতা। ওদের ধারণা তৃতীয় শ্রেণির জন্যই শুধু এ রকম কক্ষ ব্যবহার করা হয়। তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যাপীঠ এই বিদ্যালয়ে সাতটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র চারটি। তিন বছর আগে একটি পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে ওয়াশব্লক তৈরির পর থেকে সৃষ্টি হয় শ্রেণিকক্ষস্বল্পতা। প্রাক প্রাথমিকের জন্য একটি কক্ষের মেঝে ব্যবহার করায় উক্ত কক্ষে দ্বিতীয় শিফ্টের কোনো পাঠদান কর হয় না। বললেন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

বিদ্যালয়টির ৬/৭ ফুটের একটি সিঁড়ি কক্ষও ব্যবহার করা হচ্ছে পাঠদানে। এতেও সংকুলান না হওয়ায় কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চলে। পরে স্থানীয়রা একটি একচালা ঘর তৈরি করে দিয়েছে মাঠের এক কোণে। ওই কক্ষ পাঠদানের অনুপযোগী বললেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এতে ব্যাঘাত ঘটছে পাঠদান কার্যক্রম। খোলা আকাশের নিচে ক্লাস হচ্ছে না, হচ্ছে একটি কক্ষে। তবে কক্ষ থেকে বাইরের পরিবেশ সহজেই দেখা যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা মনযোগী থাকছে না। এমনকি শ্রেণিকক্ষে পড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে পার্শ্ববর্তী সব প্রাইভেট স্কুলগুলোর দিকে। বিদ্যালয়টিতে ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিার পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় সহকারী শিক্ষকের ওপর রয়েছে প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্বভার। একদিকে প্রধান শিক্ষকের শূন্যতা, অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষস্বল্পতা।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম খান বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির দেলদুয়ার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ে একটি ভবনের বিশেষ প্রয়োজন। উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু নতুন ভবনের আশ্বাস না পাওয়ায় এভাবেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে এই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিদ্যালয়ে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে এসব শিশুর পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

দেলদুয়ার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, মশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনস্বল্পতা সম্পর্কে তারা অবগত। এ বিদ্যালয়সহ উপজেলায় ৫টি বিদ্যালয়ে ভবনস্বল্পতা রয়েছে। পাঠদানের বিঘ্ন ঘটায় একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ভবন ধার্য হয়নি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/৭মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :