চায়ের কাপে চলছে রেহানা বুবুর জীবনযুদ্ধ

সাইফুল ইসলাম, নাটোর
 | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০১৭, ০৯:৫৩

জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের শহর নাটোর থেকে ১৭ কিঃমিঃ দক্ষিণে বাগাতিপাড়া উপজেলা। পিচ ঢালা পথ বেয়ে চলতে গিয়ে উপজেলা পরিষদের দেড় কিলোমিটার দূরে চোখে পড়বে বিহারকোল বাজার। বাগাতিপাড়া পৌরসভার পদ্মার শাখা বড়াল নদের তীরে বাজারটি। অদূরেই রয়েছে জমিদার গিরিশ রায়ের ঐতিহাসিক বাড়ি।

বাজারের সাথেই গালিমপুর সেতু। সেই সেতুতে উঠতেই দেখা মেলে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানে চা বানাচ্ছেন মধ্য বয়সী এক নারী। নাম তার রেহানা। সবাই ডাকে ‘রেহানা বুবু’ নামে। বয়স ৫৫। চোখের নিচে কাল দাগ, কুচকে গেছে শরীরের চামড়া। কপালে বলি রেখা। দেখলেই মনে হয়- জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত এক নারী।

চা পান করতে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানালেন, তার জীবন সংগ্রামের কাহিনী। সহায় সম্বলহীন রেহানাকে শিশুকাল থেকেই নামতে হয় জীবনযুদ্ধে। অভাব-অনটনের সংসার বাবার। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়ালেখা হয়নি রেহানার। মামা কালু প্রামাণিকের সংসারে সহযোগিতা করার সুবাদে আশ্রয় মেলে মামার বাড়িতে। স্বামী-সংসার সর্ম্পকে কিছু বোঝার আগে পাশের আরেক সহায় সম্বলহীন সবজি ব্যবসায়ী কাদেরের সাথে বিয়ে হয় তার। রেহেনার কোলজুড়ে আসে পরপর দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে।

সংসারের প্রতি উদাসীন স্বামী কাদের ও সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা রেহানা কাজের সন্ধানে ছুটে যান এখানে-ওখানে। হঠাৎ পরিচয় হয় এনজিও ব্র্যাক কর্মকর্তা এক আপার সাথে। মিলে যায় রেহানার কাজের সুযোগ। পনেরশ টাকা বেতনে ব্র্যাকে শুরু হয় রেহানার নতুন জীবন। ব্র্যাক অফিসেই চা বানানোর হাতিখঁড়ি হয় তার। স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করে তার সংসারে। চাকরি তার তিন সন্তানকে বিয়েও দেন রেহানা। ছয় বছর চাকরি করার পরে পারিবারিক কারণে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আবার রেহানার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

শুরু হয় রেহানার জীবনের তৃতীয় ইনিংস। জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন বিহাড়কোল বাজারে চায়ের দোকান। তিনি একাই দোকান চালান মাঝে মধ্যে তাকে সহযোগিতা করেন তার স্বামী ও ছেলে। সহজ সরল রেহানার আচরণে মুগ্ধ খদ্দের সুযোগ পেলেই এক কাপ চা পান করতে বাজারে আসেন অনেকে। চায়ের দোকান সকাল ছয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত, আবার বিকাল চারটা থেকে রাত্রি ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন প্রায় ২শ ৫০ থেকে ৩শ কাপ চা বিক্রি করেন রেহানা। তাতে যা আয় হয়- তা দিয়েই চলছে রেহানার সংসার। চাকরি ছাড়ার পর এভাবে চলছে প্রায় ১০ বছর। চা বিক্রি করে তিনি এক টুকরো বাড়ি করার মত জায়গাও কিনেছেন। সেখানে তিন রুমের একটি আধা পাকা বাড়িও তৈরি করেন রেহানা। এভাবেই নারী হয়েও জীবনযুদ্ধে অদম্য রেহানা এগিয়ে চলেছে এক সুন্দর স্বপ্নের বাস্তবায়নে।

(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :