মানিকগঞ্জের গ্যাস সংকট আরো চার বছর

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
| আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৭, ০৮:৫৪ | প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০১৭, ০৮:৫৩

গত চার বছর ধরে মানিকগঞ্জ জেলায় চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনে এর প্রতিবাদ আর সমাধানের দাবি জানিয়েও সংকট থেকে রেহাই মিলছে না। মানিকগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির স্থানীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপকের মতে, গ্যাস সংকট মিটতে আরো চার বছর লেগে যাবে।

কিন্তু গ্যাস না পেলেও বছরে ২০০ কোটি টাকার বিল দিতে হচ্ছে মানিকগঞ্জের গ্রাহকদের।

২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাবিতে শত শত নারী-পুরুষ আন্দোলনে নেমেছিল। পৌরবাসীর সেই আন্দোলন দমাতে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। ওই বিক্ষোভের পর দুই-তিন মাস গ্যাস পাওয়া গেলেও আবার ফিরে আসে গ্যাস সংকট। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা গ্যাস সংকটের জন্য বড় বড় শিল্পকারখানাকে দায়ী করছেন অনেক গ্রাহক।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌর এলাকাসহ জেলায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ আছে ১২ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে ডাবল চুলা ১১ হাজার ৯৫০, সিঙ্গেল ১৫০টি। ডাবল চুলার জন্য ৬৫০ টাকা, সিঙ্গেল চুলার জন্য ৬০০ টাকা হারে হিসাবে আবাসিক সংযোগ থেকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে রাজস্ব পাচ্ছে ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জে ১৭টি সিএনজি পাম্প এবং ৪২টি শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ রয়েছে। সিএনজি পাম্প থেকে মাসে ছয় কোটি টাকা এবং শিল্প কারখানা থেকে নয় কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। আবাসিক ও শিল্পকারখানা মিলিয়ে প্রতি মাসে তিতাস গ্যাস বিল নিচ্ছে ১৫ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসাবে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না পেয়েও মানিকগঞ্জবাসী বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার গ্যাস বিল পরিশোধ করছে।

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের এ জেলা শহরের প্রায় বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ আছে। কিন্তু রান্নাবান্নার জন্য গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় অনেক গ্রাহক বিলও পরিশোধ করছেন না। বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের চাপ দেয়া হলেও তারা তা মাথায় নিচ্ছেন না। আবার অনেক গ্রাহক স্বেচ্ছায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানিকগঞ্জে অব্যাহত গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ এ জেলায় স্থাপিত বেশ কয়েকটি বড় শিল্পকারখানা। এসব শিল্পকারখানায় সিএনজি স্টেশন থেকে রাতের বেলায় অবৈধভাবে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস পাচার করা হচ্ছে। এর আগে পুলিশের বিশেষ অভিযানে বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করার সময় আটক করে। ওই সব সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধে তখন আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়। তারপরও এই অবৈধ কাজ বন্ধ হয়নি।

মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকার বাসিন্দা লিমা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছি। নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় সন্তানদের সময়মতো খাবার দিতে পারি না। একসময় শুক্রবার গ্যাস পাওয়া যেত, এখন তাও পাওয়া যায় না।’

২৪ ঘণ্টায় একবার গ্যাস সরবরাহ পান জানিয়ে মানিকগঞ্জ শহরের পূর্ব দাশড়া এলাকার শারমিন সুলতানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তাও আবার রাত সাড়ে তিনটার পর। যদি ঘুম থেকে উঠতে পারি তাহলে রান্না করা সম্ভব হয়। না হলে পরদিন মাটির চুলায় রাঁধি।’

পশ্চিম দাশড়া এলাকার খুশি আক্তার বলেন, ‘আমরা গ্যাস পাই না, কিন্তু প্রতি মাসে গ্যাস বিল পরিশোধ করি। আমাদের এই অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারেন এর সমাধান করতে।’

ঢাকার কাছের এই জেলায় শহরে গ্যাস সংকটের কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পান না মানিকগঞ্জ শহরের পূর্ব দাশড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা নজরুল হুদা কার্লিস। তিনি জানান, মানিকগঞ্জের আশপাশের সব জেলায় গ্যাস সরবরাহ ভালো। অথচ মানিকগঞ্জ জেলায় গ্যাস নেই। সমস্যা সমাধানে রাস্তায় নামার পরও কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ।’

মানিকগঞ্জ জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, এ জেলায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার হয়নি।’

মানিকগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির স্থানীয় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানায় যায়, জেলায় গ্যাসের চাহিদা ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে কতটুকু সরবরাহ করা হচ্ছে তা জানাতে পারেননি ওই কার‌্যালয়ের ব্যবস্থাপক রতন চন্দ্র দে।

ঢাকাটাইমসকে রতন চন্দ্র বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ার কারণে এ জেলায় গ্যাস সংকট রয়েছে। তার মতে, গ্যাস সংকট কাটাতে আরও প্রায় চার বছর সময় লাগবে।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গ্যাস সংকট জাতীয় সমস্যা। সরকার আবাসিক গ্রাহকদের সংযোগ নতুন করে আর দেবে না। যেসব আবাসিক সংযোগ রয়েছে তাদের প্রতি আমার পরামর্শ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা।’

(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :