ফুটপাত দখলমুক্ত করে গাড়ি রাখতে সড়ক ভাড়া

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৭, ০৯:৫৮ | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০১৭, ০৮:১২

মানুষের চলাচলের পথ নির্বিঘ্ন করতে রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার ফুটপাত থেকে তুলে দেয়া হয়েছে হকারদের। নগরীর অন্য এলাকাতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির মেয়র। তার এই পদক্ষেপ যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি পথচারীদের চলাচলকে সহজও করেছে। কিন্তু একই নগর কর্তৃপক্ষই আবার চলাচলের রাস্তা ভাড়া দিয়ে রেখেছে পার্কিং করতে। সেটাও আবার নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

নগরীর যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয় সড়কে গাড়ির পার্কিং। বড় সড়কের ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলে সরু হয়ে যায় মূল সড়ক। আর এতে করে রুদ্ধ হয় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি। বাঁধে যানজট।

নগর বিশেষজ্ঞরা বরাবরই সড়কে পার্কিংয়ের বিরোধী। এ জন্য তারা বিকল্প ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়ে এলেও তাদের পরামর্শ রাখছে না নগর কর্তৃপক্ষ। যদিও মাঝে একবার রাজধানীর কেন্দ্রস্থল মতিঝিলে পার্কিং ভবনও নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন, কিন্তু সেই ভবনে পার্কিংয়ে আগ্রহী নয় গাড়ির মালিকরা। তারা আগের মতোই সড়কে গাড়ি রাখতে পছন্দ করছেন।

মতিঝিলে পার্কিং ভবনের এই অভিজ্ঞতার পর সিটি করপোরেশন আর ওপথে যায়নি। পার্কিং এর জন্য আর বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগই নেয়া হয়নি। উল্টো পার্কিং এর জন্য ইজারা দেয়ার রাস্তার সংখ্যা বাড়াচ্ছে তারা।

নগরীতে সব বাণিজ্যিক ভবনের নিচতলা বা বেসমেন্টে পার্কিং এর জন্য খালি রাখার কথা। কিন্তু নানা সময় অভিযানের পরও সব ভবন পার্কিং এর বদলে অন্য উদ্দেশ্যে এই জায়গা ব্যবহার করতেই আগ্রহী বাড়ির মালিকরা। ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে যাওয়া গাড়িগুলো রাখতে হচ্ছে বাইরেই।

সিটি করপোরেশন ও পুলিশ পার্কিং নিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে এখন উল্টো পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মতিঝিল, কারওয়ানবাজারের পর এবার ইস্কাটন, নিউমার্কেটসহ নয়টি এলাকায় টাকার বিনিময়ে পার্কিং এর জন্য ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলোতে দিনে একই সঙ্গে ৫৪২টি গাড়ি রাখা যাবে।

রবিবার মতিঝিলে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের তিন ভাগের এক ভাগ পার্কিংয়ের জন্য সাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। তিন মাস আগেও এসব এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে হকারদের রমরমা ব্যবসা চলতো। উচ্ছেদ অভিযানের পর হকাররা উঠে গেলেও প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল বিআরটিসি বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের বৈধ, অবৈধ পার্কিং বেড়ে গেছে।

পার্কিং এর জন্য নির্মিত সিটি সেন্টারের চিত্র

মতিঝিল, দিলকুশাসহ আশপাশের ব্যস্ত এলাকার যানজট কমাতে সিটি সেন্টার ভবন নির্মাণ করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। এখানে একই সঙ্গে ৫০০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এখন মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাচ্ছে। গাড়ি রাখার তলাগুলো ফাঁকা থাকছে, গাড়ি রাখা হচ্ছে রাজপথে।

সিটি সেন্টারের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত গাড়ি রাখার স্থান ভবনটির বিভিন্ন অফিস বা স্পেস মালিকপক্ষের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচালনায় চতুর্থ থেকে দশম তলা পর্যন্ত ৩১৫টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে গাড়ি রাখার ভাড়াও তুলনামূলক কম, ঘণ্টায় একটি গাড়ির ভাড়া ১০ টাকা, তিন ঘণ্টা ৩০ টাকা, সারা দিন থাকলে ৬০ টাকা।

মতিঝিলের একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। পার্কিং নৈরাজ্যের সঙ্গে একশ্রেণির ইজারাদার, পুলিশ ও অন্যান্য সুবিধাভোগীর স্বার্থের সম্পর্ক থাকায় এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। নগরীতে যে কয়েকটি পার্কিং স্পেস গড়ে উঠেছে সেগুলোও তাদের কারণে কার্যকর করা যাচ্ছে না।

সড়কে পার্কিং বাড়াচ্ছে সিটি করপোরেশন

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাজধানীর পার্কিং সমস্যা সমাধানে আমরা আলিকো, মতিঝিল, হলি ফ্যামিলি রোডসহ নয়টি স্পট ঠিক করেছি। এগুলো শিগগিরই ইজারা দেয়া হবে। এছাড়া আমাদের সিটি সেন্টারে পার্কিং লট আছে, সেখানে প্রায় ৩১৫টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে।’

কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে ইজারা দেয়া পার্কিংগুলি সরানোর কোন পরিকল্পনা নাই। যেগুলো আছে সেগুলো থাকবে, এছাড়া আরও বেশ কিছু অন স্ট্রিট পার্কিং ইজারা দেয়া হবে। আর যানজট নিরসনে আমাদের একটি হাইপাওয়ার কমিটি আলাদা প্রকল্প হাতে নেবে।

সড়কে গাড়ি রাখলে যানজট তো বাড়বে- এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়িগুলো কিন্তু এমনিতেই অবৈধভাবে যত্রতত্র পার্কিং করছে। এতে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। এগুলি যদি নির্দিষ্ট জায়গায় দেয়া যায় তবে যানজট অনেকটা কমে যাবে।’

পার্কিং সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে আরও কিছু পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যতে আমরা সড়ক থেকে পার্কিং সরিয়ে নেব, এজন্য কাজ চলছে। রাজধানীর সাদেক হোসেন খোকা বালুর মাঠটিতে কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে পার্কিং এর জন্য ইজারা দেয়া হবে। এছাড়া টিটি পাড়ার নার্সারিসহ এই রকম বেশ কিছু স্পট আমরা দেখছি। সেগুলোতেও ইজারা দেয়া হবে পার্কিং এর জন্য।’

সিটি করপোরেশনের এই চিন্তা নগরে যানজট পরিস্থিতি আরও নাজুক করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কি কোনো গবেষণার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? সিটি করপোরেশন সড়কে যে পার্কিংগুলোর ব্যবস্থা করেছে সেগুলো সরাতে বলে আসছি আমরা। সেটি না করে নতুন করে তারা আবার অন্য সড়কে পার্কিং এর ব্যবস্থা করলে সেটা আরও বেশি খারাপ হবে।’

একই কথা বলেছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। শাহবাগ ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট শামীম আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাস্তায় পার্কিং করলে যানজট বাড়বে। রাস্তার তিন ভাগের একভাগ বন্ধ থাকলে তো যানজটে প্রভাব পড়বেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/জিএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: বিচার চায় সচেতন নাগরিক সমাজ

তীব্র তাপপ্রবাহে জনসাধারণের মাঝে পানি, খাবার স্যালাইন বিতরণ বিএনপির

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে: সালাম

ঢাকা মেডিকেলে এক কারাবন্দিকে মৃত ঘোষণা

ভাষানটেকে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫, বাকি একজনও আশঙ্কাজনক

মুগদা-মান্ডা সড়কে অভিযান: ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ  

মোহাম্মদপুরে তিতাসের এমডির বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজধানীতে থাকবে না ফিটনেসবিহীন বাস, জুন থেকে মাঠে নামছে বিআরটিএ

আজ ৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায়

গরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতা সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ডিএমপির

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :