ঝুঁকিপূর্ণ কাউখালী লঞ্চঘাট, উদাসীন কর্তৃপক্ষ
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নৌপথে চলাচলের জন্য বন্দরের নির্দিষ্ট স্টেশন (ঘাট) থেকে উঠানামা করে থাকেন। এরকমই একটি পিরোজপুরের কাউখালীর লঞ্চ ঘাট। এ ঘাট ব্যবহার করে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের ছোট-বড় লঞ্চ, ট্রলারে সহস্রাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। বিভিন্ন রুটে চলাচলরত যাত্রী সাধারণ ও লঞ্চে পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ঘাটটি ব্যবহার হয়। এই ঘাটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। যেকোনো সময় এখানে ঘটতে পারে বড়ধরনের দুর্ঘটনা।
জেলার কাউখালী উপজেলা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পণ্য যেমন রপ্তানি হয়, তেমনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানিও হয়। আর এ টার্মিনালটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর যাবত বেহাল অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে এ রুটে চলাচলরত নারী, পুরুষ, শিশু. বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ জীবনের ঝুঁকি আর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
ব্রিটিশ আমল থেকেই রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক বন্দর চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ লঞ্চ, স্টিমার যোগে চলাচল ও পণ্য পরিবহনের জন্য এ মাধ্যমটি নিরাপদ হিসেবে বেছে নেয়।
বর্তমান সময়ে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় যাত্রীরসংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেলেও লঞ্চ পরিবহনব্যবস্থায় কাউখালী লঞ্চ ঘাটটির পুরনো ঐতিহ্য বহাল রয়েছে। যাত্রী সমাগম এখনো চোখে পড়ার মতো।
প্রতিদিন ঢাকা, চাঁদপুরগামী পাঁচটিসহ ছোট বড় প্রায় ১০ থেকে ১২টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। সরকার বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা এ থেকে রাজস্ব আদায় করলেও পল্টুনের সংস্কার করে যাত্রী দুর্ভোগ লাগবে তারা উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে।
কাউখালীর নৌ বন্দরের এ ঘাট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কাঁচা মাল যেমন, নারকেল, ডাব, কলা, পান ও মৌসুমি ফল আমড়া, তাল, সুপারি, চালতা, পেয়ারাসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়।
গত প্রায় এক বছরেরও অধিক সময় ধরে পল্টুনটির বেহাল দশায় পড়ে আছে। টার্মিনালটির উপরের অংশ ফেটে যাওয়ায় এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রায়ই লঞ্চ থেকে উঠানামার সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
লক্করজক্কর মার্কা এ টার্মিনালটির (পল্টুন) পরিবর্তে ভালোমানের একটি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তি ও স্থানীয় সচেতন মহল বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো কাজে আসেনি।
জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. শাহজাহান হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে ঘাটটির নাজুক অবস্থা দেখে দ্রুত এটি অপসারণ করে অন্য একটি স্থাপনের আশ্বস দিয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ভাঙা টার্মিনাল জোড়া লাগেনি।
কাউখালী ঘাট ইজারদার মো. সোহেল মহাজন ঢাকাটাইমসকে জানান, আমাদের এ টার্মিনালটির বেহাল অবস্থা, না দেখলে বোঝা যায় না। টার্মিনালটি থেকে খুবই কষ্টে যাত্রীদের উঠানামা করাতে হচ্ছে। যাত্রীদের একপাশে চাপিয়ে রাখতে হয় বিপদ এড়াতে। পল্টুনের উপরে বসানো মট দুই একটি ছাড়া বাকিগুলো ভেঙে উঠে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৪/৫ মাস পূর্বে বরিশালের এক কন্ট্রাক্টর এসে রিপিয়ারিং করে দিয়েছিল। রিপিয়ারিং নরমাল হওয়ায় এর কিছু দিনের মধ্যেই পল্টুনের উপরের অংশ ভেঙে আগের থেকেও ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হয়েছে। যাত্রীদের নিয়ে আমরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নতুন টার্মিনাল দেবে দেবে বলে। ঘাট সারেং, নোয়াখালীর নাছির সাইব নতুন একটি টার্মিনাল আসবে বলে ২/৩ মাস হয়ে গেলেও এর কোনো খবর নেই।
এ ব্যাপারে কাউখালী লঞ্চ ঘাটের তদারকি কারক (ঘাট সারেং) মো. নাসির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/প্রতিনিধি/জেবি)