যশোরে ১২৫০০ নারী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যশোরে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। এ অঞ্চলের ছোট-বড় নানা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাড়ে ১২ হাজার নারী। ঘরে কিংবা বাইরে, অফিস কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই তাদের সফল পদচারণ।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইন-আদালত, শিক্ষকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ছাগল-গরু পালন, নার্সারি, মিল, কলকারখানা, খাবার হোটেল, বিউটি পার্লার, দর্জির দোকান, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এখন সামনে থেকে পরিচালনা করছে নারীরা। এর মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয়ী হচ্ছেন যশোরের নারীরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩-এর যশোর জেলা রিপোর্টে এ রকম চিত্র উঠে এসেছে।
যশোর জেলা পরিসংখ্যান অফিস বলছে, জেলার নারীরা শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবসা ও কর্মসংস্থানে গত এক দশকের চেয়ে অনেক এগিয়েছে। সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ মতে শুধু প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন ১২ হাজার ৫৫৫ নারী। ২০০৩ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৩৭২। সেই সময় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী ছিলেন ২৯ হাজার ৩০৮ জন। ২০১৩ সালের জরিপে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ হাজার ৩৬৪ জনে।
যশোর শহরের শংকরপুরের বাসিন্দা শাফিয়া বেগমের দিন এনে দিন খাওয়া সংসার ছিল। শংকরপুর গোলপাতা মসজিদের পাশে মুদি দোকান দিয়ে তিনি ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। এখন কোনো অভাব নেই তার সংসারে।
গরিব নারীদের ভাগ্য বদলাতে ১৯৯৮ সালে পরশমণি মহিলা উন্নয়ন সংগঠন চালু করেন শহরের রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা শিল্পী খাতুন। তিনি বলেন, ‘মহিলাদের সঞ্চয়ে আগ্রহী করার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে আমার সংগঠনটি। নারীদের সঞ্চয়ের টাকা দিয়েই তাদের স্বাবলম্বী করতে গরু পালন, হাঁস-মুরগি পালন, বাড়িতে হস্তশিল্প কিংবা দর্জি দোকান করতে উৎসাহিত করা হয়। অনেকে সঞ্চয়ের টাকার সঙ্গে সমিতি থেকে সামান্য সুদে ঋণ নিয়ে সেখানে কাজে লাগাচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন কাজ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছে তারা।’
সমিতির ৪৩০ সদস্যের মধ্যে ১০০ জনের মতো নারী বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন। তারা নারীদের চিকিৎসাসেবা, শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম, বৃদ্ধা মাকে ছাগল প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিচ্ছেন।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও বিউটিশিয়ান এবং ২০১৫ সালে যশোর জেলা পর্যায়ে জয়িতা সম্মনানা পাওয়া লতিফা শওকত রূপা সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন নিজের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯২ সালে চারজন কর্মী নিয়ে ‘দোলা নকশী ঘর’ নামে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি এনজিও চালু করার মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু।
লতিফা শওকত রূপা বলেন, ‘বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৫০০ দরিদ্র অসহায় নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। পরে শহরের দড়াটানায় দোলা বিউটি পার্লার নামে একটি পার্লার ও মেয়েদের ফিটনেস সেন্টার খুলি। সেখানে আরও মেয়ের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। তারা আবার অন্য মেয়েদের কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন, অনেকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন এসব কাজে। তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এভাবে বাড়ছে কর্মসংস্থান। ’
নিজের সফলতার কথা তুলে ধরে রূপা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পারিবারিক, সামাজিক নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অনেক সংগ্রাম করে আমি আজ সফল হতে পেরেছি। সফলভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি।’ নারীকে সফল হতে নিজের প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
মহিলা আইনজীবী সমিতি যশোরের জেলা সমন্বয়কারী নাসিমা বেগম বলেন, মহিলা আইনজীবী সমিতি থেকে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য নারী উপকারভোগী হয়েছেন। তারা এখন সংসারসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে কাজ করছেন। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন এবং অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন।যশোর পরিসংখ্যান অফিসের উপপরিচালক মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, যশোরের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্যেসহ বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সফল হচ্ছেন। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর।
জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন বলেন, সরকারের নারীবান্ধব নানা কর্মসূচি চালুর ফলে সচেতনতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে যশোরের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আগের চেয়ে তারা এখন অনেক বেশি সচেতন।
(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/মোআ)
মন্তব্য করুন