সুনামগঞ্জে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

মো. আমিনুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ
| আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৭, ০৯:৩৭ | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০১৭, ০৯:৩৬

সকাল থেকেই সুনামগঞ্জ শহরের খুচরা আর পাইকারি বাজারগুলোতে দলবেঁধে চাঁদাবাজিতে নেমে পরছে হিজড়াদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ। অনেকটাই কৌশলী এসব হিজড়াচক্রের সদস্যরা আগে থেকেই এক এক এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এক এক দলকে দায়িত্ব বন্টন করে থাকে।

তাদের চাঁদাবাজির ধরনও অনেকটা ভিন্ন। নির্দিষ্ট টাকা দাবি করে তারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রাখে চাঁদা আদায় না হওয়া পর্যন্ত। টাকা না দিলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে তারা। আর এ চিত্র সুনামগঞ্জ শহরে নিত্যদিনের।

তবে দীর্ঘদিনের এ চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট হয়ে উঠলেও তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

হিজড়াচক্রের চাঁদাবাজি কেবল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই নয়। দলবেঁধে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয় তারা। এসব সড়কে চলাচলকারী বিয়ের গাড়ি বহরের পথ আগলে দাঁড়িয়ে চাঁদা দাবি করছে তারা। যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা না দেয়া হচ্ছে, ততো সময় পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখছে। ব্যস্ততম সড়কে হিজড়াচক্রের চাঁদাবাজির জন্য সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

কেবল সড়ক পর্যন্তই নয়। শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে দলে দলে অবস্থান নিয়ে বর পক্ষ এবং কনে পক্ষকে একরকম নাজেহাল করছে তারা। প্রত্যেকটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় বর এবং কনে পক্ষের কাছ থেকে আলাদা আলাদা করে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে হিজড়ারা। টাকা না দিলে বিয়ের অনুষ্ঠানে হট্টগোল শুরু করে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

এসব ছাড়াও শহরের কাচা বাজারে রোজ হিজরাচক্রের সদস্যদের বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের।

সকাল হলেই দলবদ্ধ হয়ে কাচা বাজারে হানা দিচ্ছে হিজড়ারা। তারা প্রত্যেক দোকান থেকে অনেকটাই জোরপূর্বক সবজি সংগ্রহ করছে। বাজারের এক প্রান্ত থেকে শুরু করে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবগুলো দোকান থেকে প্রয়োজন অনুসারে সবজি ও বিভিন্ন কাচামাল নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে টাকা ছাড়াই তাদের নিত্যদিনের তরি-তরকারির প্রয়োজন মেটাচ্ছে হিজড়াচক্র।

হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির ব্যাপারে ব্যবসায়ি রিয়াদুল হোসেন বলেন, ‘সকাল ওইলেই হিজড়াদের বেশ কয়েকজন আইসা দোকানের মালে ঝাপটা দেয়, কিচ্ছু কইলে বিভিন্ন কথা শোনাইয়া যায়, গালি দেয়, সব দোকান থাইক্যা একটা একটা মাল নিয়া যায়, আর এই ঘটনা ডেইলি ঘটে। এদের কিচ্ছু করা যায় না, পুলিশেও এদেরকে ধরে না, রোজ দোকানে দোকানে চাঁদাবাজি করাটা যেনো তারার নিয়মিত কাজ।’

শহরের ষোলঘর এলাকার মেহেদী হাসান বলেন, ‘রাস্তার দিকে বরযাত্রীর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তারা চাঁদাবাজি করে। পাঁচ হাজার টাকার জন্য সেদিন দেখলাম বরযাত্রীর গাড়ি যেতেই দিচ্ছে না। আর এজন্য রাস্তায় যানজট লেগে গেছে। অনেকটাই মাস্তানি স্বভাবের। এদের প্রায় সব লোকেই ভয় পায়। সাধারণ মানুষ তো তাদের কাছে অনেকটাই অসহায়, যখন এরা টাকা দাবি করে।’

শহরের মধ্য বাজার এলাকার বাসিন্দা জয়নাল বলেন, ‘আমাদের এক আত্মীয়ের বিয়েতে আমরা খুব বিপদে পরেছিলাম হিজড়াদের জন্য। এরা বিয়ের সেন্টারে ৪-৫ জন মিলে গিয়েছিল এবং তিন হাজার টাকা দেয়ার জন্য বলেছে। টাকা না দিলে তারা যাবে না বলে বরের স্টেইজে একসঙ্গে সবাই বসে পরেছিল। তারা অনেক হট্টগোল করেছিল। পরে মান সম্মানের বিষয় বিবেচনা করে তাদের চাঁদা দিতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ভাবতে হবে বলেই আমি মনে করি।’

হিজরাদের অত্যাচারের শিকার বাজারে আসা সাধারণ ক্রেতারাও। তাদের একজন শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘শহরের একটি শপিং সেন্টারে গিয়ে রীতিমতো আমাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। হিজড়াদের কয়েকজন আমার কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য যে আচরণ করেছে- তাতে আমি লজ্জিত হয়েছি। তারা শাড়ির টাকা নিয়েছে বলে চাঁদাবাজি করেছে। এদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’

পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। এদের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিয়ের গাড়ি আটকে এরা টাকা নেয় শুনেছি। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :