বন্যহাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে বৈদ্যুতিক বেড়া

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০১৭, ১১:০১

বন্যহাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে শেরপুরের সীমান্ত এলাকায় বৈদ্যুতিক বেড়া নির্মাণ করেছে বন বিভাগ। জেলার ৪০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ১১ কিলোমিটারে, পরীক্ষামূলকভাবে এই বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে হাতির আক্রমণ কমবে। রক্ষা পাবে মানুষের জীবন ও ফসল। সীমান্তের অন্য এলাকাতেও এই বেড়া নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় ও পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্যহাতির দল ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে দলছুট হয়ে শেরপুরের গারো পাহাড়ে ঢুকে পড়ে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় হাতিগুলো আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। হাতির সংখ্যা এখন একশ’ ছাড়িয়েছে। ধান ও কাঁঠাল পাকার সময় লোকালয়ে হাতির উপদ্রুব বাড়ে। ১০-১৫ বছর আগে এলাকাবাসী মশাল জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়াতেন। কিন্তু এখন এসবে কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে বেড়া (বায়োলোজিক্যাল ফেন্সিং) দেয়ার প্রকল্প নেয় বন বিভাগ। এর মধ্যে শেরপুরের প্রায় ৪০ কিলোমিটার হাতির বিচরণক্ষেত্র। ইতোমধ্যে ঝিনাইগাতীতে ৯ কিলোমিটার ও নালিতাবাড়ীতে ২ কিলোমিটার এলাকায় বেড়া নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যহাতির আক্রমণে শেরপুর জেলায় এ পর্যন্ত ৫২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে গত বছরই মারা গেছে ১২ জন। আহত হয়েছে ৫ শতাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলসহ সম্পদ নষ্ট হয়েছে কোটি টাকার ওপর।

অন্যদিকে পাল্টা আক্রমণে হাতি মারা পড়েছে ২০টি। এ জন্য হাতির প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর টিলা-পাহাড়ে লেবু ও বেতগাছের বাগান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু এলাকায় সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে জিআই তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রায় তিনশ বিঘা জমিতে হাতির খাবারের উপযোগী গাছ লাগানো হয়েছে।

ঝিনাইগাতীর তাওয়াকোচা গ্রামের বাসিন্দা বাসন্তী হাগিতক ও সোমেন সাংমা বলেন, সৌরবিদ্যুতের বেড়া দেয়ায় আমাদের কিছুটা উপকার হয়েছে। তবু ওই বেড়ার ফাঁক গলে হাতি ঢুকে পড়ছে। এর চেয়ে এলাকায় বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। কারণ হাতি রাতে আলো থেকে দূরে থাকে।

শ্রীবরদী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রঞ্জল এম সাংমা বলেন, এখনও সীমান্তের বেশিরভাগ অংশ রয়েছে বায়োলোজিক্যাল ফেন্সিং-এর বাইরে। তিনি পুরো সীমান্ত এলাকা সুরক্ষার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর আদলে সীমান্তে পরীক্ষামূলকভাবে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে জিআই তার দিয়ে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী এলাকায় ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে বায়োলোজিক্যাল ফেন্সিং। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি স্ট্রেং দেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ তা বাস্তবায়ন করে।

তিনি জানান, বিদ্যুতের শক হাতিকে ভীত সন্ত্রস্ত করলেও তা মানুষের ক্ষতির আশংকা নেই। এতে হাতির আক্রমণ কমবে। রক্ষা পাবে মানুষের জীবন ও ফসল। এ বিষয়ে স্থানীয়দের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বায়োলোজিক্যাল ফেন্সিং-এর তারের মাধ্যমে ১৩ হাজার ডিসি ভোল্টেজ প্রবাহিত হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, হাতির উপদ্রুব থেকে রক্ষায় পাহাড়ি জনপদে বিদ্যুতায়নসহ পুরো সীমান্ত এলাকায় বৈদ্যুতিক বেড়া নির্মাণ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় প্রায় তিন হাজার পরিবারকে এলাকা ছেড়ে যেতে হতে পারে। ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে করিডোর সবসময় খোলা রাখার দাবিও জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি।

শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল হক বলেন, সীমান্তের বাকি অংশটুকু সোলার ফেন্সিং-এর আওতায় আনার জন্য বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি সম্মতি দিয়েছেন এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া হাতির আক্রমণে হতাহতের পরিবারকে অনুদান ও ক্ষতিপূরণের অর্থ বাড়াতে গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা, আহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা এবং ফসলের ক্ষতির জন্য ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :