দিনাজপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি

শাহ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০১৭, ১১:৫৮

‘ওঁকি গাড়িয়াল ভাই- কত রব আমি পন্থের পানে চাইয়া রে’- গ্রাম-বাংলার প্রাণপ্রিয় এই গানটি যেমন এখন আর শোনা যায় না, তেমনি গ্রাম-বাংলার একটি জনপ্রিয় যান গরুর গাড়িও এখন আর আগের মত চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে গাড়িয়াল পেশাও। এখন আর গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। যা এক সময় উত্তর জনপদের বিভিন্ন উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি বাহনের সরগরম অস্তিত্ব ছিল। ছিল সর্বত্র এই গরুর গাড়ির কদর। কি বিয়ে, কি অন্য কোন উৎসব- গরুর গাড়ি ছাড়া যেন কল্পনাই করা যেত না।

দিনাজপুরেও এক সময় গরুর গাড়ি চলত প্রতিনিয়ত। কিন্তু, এখন প্রত্যন্ত এই জনপদেও হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ি। মাঝে-মধ্যে গ্রামাঞ্চলগুলোতে দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়ে। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। তাহলে কি আধুনিক সভ্যতায় আমরা আমাদের ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছি? আজ শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা, গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ি যানবাহনটির সাথে পরিচিত নয় খুব একটা। আগে অনেকেরই গরুর গাড়ি ছিল উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় এমন তিন থেকে চারটা গাড়িয়াল পট্টি আছে। মাধরবাটী এলাকার গাড়িয়াল আব্দুল লতিফের সাথে কথা হয় গরুর গাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, আমার বাপ-দাদারা গরুর গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করে আমাদের বড় করেছেন। এই আধুনিক যুগে গরুর গাড়ি নেই, আছে অটো বা ইঞ্জিনচালিত যানবাহন।

তার পেশা এখন কি? জানতে চাইলে বাবলু বলেন, গরু কেনার টাকা নেই তাই ভ্যানরিকশা চালাই।

মুরাদপুর এলাকার আহছাস আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আগে মালামাল বহন করার জন্য গরুর গাড়ির বিকল্প ছিল না। শুধু মালামালই না, কারো বাড়ি নাইর বা বিয়ের জন্য এই গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র ভরসা।

গাড়িয়াল ইমাম মোল্লা জানান, আগে আমাদের এলাকায় গরুর গাড়ির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মালামাল থেকে শুরু করে বিয়ে বা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। শুধু কি তাই, এই গরুর গাড়িগুলোর বিশাল মাঠে কার গাড়ি আগে যায়- তা নিয়ে শুরু হতো বিশেষ প্রতিযোগিতাও। এখন যেমন আমরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য প্রাইভেটকার বা মাইক্রো ক্রয় করে থাকি, ঠিক তেমনি আগে গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন লোকজন ও গৃহস্থরা গরুর গাড়ি নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করে বাড়িতে রাখতেন। আপদ-বিপদে তা তারা বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন। কখনও কখনও তা আবার ভাড়ায় খাটাতেন।

এখন আর গরুর গাড়ি নেই। গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এসে গ্রাম বাংলার সেই জনপ্রিয় গরুর গাড়ি বাহনটি এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বাংলা এবং বাঙালির ঐতিহ্যগুলোকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/নিজস্ব প্রতিবেদক/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :