‘গবেষণায় উন্নত হবে দেশের নার্সিংয়ের মান’
উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের নার্সিংয়ের মান সেভাবে বাড়েনি।গবেষণায় নার্সিংয়ে মান উন্নয়ন হবে বলে জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। তিনি বলেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নার্সরা। রোগীদের সাথে সার্বক্ষণিক থাকার সুযোগ হয় নার্সদের। তাই গবেষণার ক্ষেত্রে তাদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই।
বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ’র) শহীদ ডা. মিলন হলে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রকাশ উপলক্ষে ‘নার্সেস রোলস ইন ইম্প্রুভিং কোয়ালিটি অব কেয়ার অব প্যাশেন্টস অ্যাডিমিটেড ইন টারশিয়ারি হসপিটাল ইন বাংলাদেশ’ ভূমিকা শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
‘রোগীদের সেবার মান উন্নয়নে নার্সদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গবেষণা চালানো হয় জুন ২০১৫ থেকে অক্টোবর ২০১৬ পর্যন্ত। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ২২৫ জন রেজিস্টার্ড নার্সের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।
২২৫ জন রেজিস্টার্ড নার্সের ওপর এই গবেষণায় উঠে আসে রোগীর সেবায় নার্সদের কী ধরনের ভূমিকা থাকা উচিত। গবেষণায় বলা হয়, একজন নার্স রোগীর কাছে অনেক ধরনের ভূমিকা রাখতে হয়; কেয়ার প্রোভাইডার, সিদ্ধান্তগ্রহীতা, যোগযোগকারী, কেয়ার কো-অর্ডিনেটর, শিক্ষক, ম্যানেজার, সুপারভাইজার, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও একই সঙ্গে তিনি রোগীর উকিল।
গবেষণাপত্রে নার্সদের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিত, সেই চারটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। প্রথমত নার্সদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানে অবদান রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত রোগীর সেবা দেয়ার জন্য তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তৃতীয়ত ডাক্তার এবং রোগী ও তাদের আত্মীয় সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কাজ করা। সব শেষে তাদেরকেও গবেষণায় যুক্ত থাকতে হবে।
যে ২২৫ জন নার্সের ওপর এই গবেষণা চালানো হয় তাদের ৯১ ভাগই নারী আর ৯ ভাগ পুরুষ। যাদের ৬৭ ভাগই নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করেছেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগেরই ১-৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান। সভাপিতত্ব করেন উপ-উপাচার্য ( গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক শহীদল্লাহ সিকদার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য ( প্রশাসক) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এস এম জাকারিয়া স্বপন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্টার মিসেস সুরাইয়া বেগম প্রমুখ।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে সেবার মান উন্নত হয়েছে, তাদের নার্সিংয়ের মানও অনেক উন্নত। কিন্তু আমাদের এখানে সেভাবে এর প্রসার ঘটেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে নার্সিংও ডেভেলপ হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘নার্সদের সেবার মান উন্নয়নে যে গবেষণা হয়েছে তা সময়ের দাবি। আগে নার্সদের সাথে রোগীর যে সম্পর্ক ছিল এটা এখন আগের মতো নেই। আমার চাই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সরা সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন করবে। এখন বিএসএমএমইউর সেবা নিয়ে রোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করে থাকে। আমার চাই পৃথিবীতেই যেন এই সুনাম ছড়িযে পড়ে।’
ডা. কামরুল বলেন, ‘আগে নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না, এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিংয়ে বিএসসির এর পাশাপাশি এমএসসিও চালু হয়েছে। এই ক্ষেত্রে পড়াশোনা এবং গবেষণার ক্ষেত্রও বেশ প্রসারিত হয়েছে।
অধ্যাপক শহীদল্লাহ সিকদার বলেন, ‘একজন নার্স হাসি দিয়ে কথা বললেই রোগী অনেক সময় নিরাময় হয়ে যায়। অসুস্থ রোগীর কাছে বিরক্তি প্রকাশ করে সেবা করলে রোগীও কষ্ট পায়। আমাদের নার্সদের উচিত হবে তারা যেন এই দিকটি খেয়াল রাখেন।’
অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রাজুয়েট নার্সিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেবেলে ডি রোজারিও, সহযোগী অধ্যাপক হরিদাস অধিকারী, সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশীদ গাজী, মিস দেলোয়ারা বেগম।
(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/ঋয়াদ/জেবি)