ভোট টানতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি প্রার্থীদের

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা (আঞ্চলিক) প্রতিনিধি
| আপডেট : ১৬ মার্চ ২০১৭, ০৯:০৯ | প্রকাশিত : ১৬ মার্চ ২০১৭, ০৮:২১

বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে এই দুই দলের ভোট টানতে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নেতা-কর্মীদের মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেয়ার। তারা অভিযোগ করছেন, জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে এই আসনের উপনির্বাচনে ২২ মার্চ ভোট নেয়া হবে। সুন্দরগঞ্জ বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বে¡ও এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি রাজনৈতিক দল দুটি।

একাধিক সূত্র জানায়, এ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের লক্ষাধিক ভোট রয়েছে। তাদের ভোট যে প্রার্থীর পক্ষে যাবে, তার জয় সহজ হবে। এ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীরা এই ভোট পেতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ (নৌকা), জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (লাঙ্গল), জাসদের (ইনু) অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ আলী প্রামাণিক (মশাল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সর্দার (আপেল), শরিফুল ইসলাম (মাছ), জিয়া জামান খান (আম) ও ওয়াহেদুজ্জামান সরকার (বাইসাইকেল)।

তবে লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সর্দারের মধ্যে।

গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ দাবি করেন, একসময় সুন্দরগঞ্জ জামায়াতের ঘাঁটি ছিল বটে, তবে এখন তা আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। তাই ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ১ লাখ ১১ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ ভোটগুলো পাবেন তিনি (মোস্তফা)। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে না হলেও ব্যক্তি ইমেজে বিএনপি-জামায়াতের ভোট পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

কিন্তু ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাদের ওপর আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা। তিনি সুন্দরগঞ্জের পশ্চিম বাজারপাড়ায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এক পথসভায় বলেন, ‘এ উপজেলার নিরপরাধ মানুষজনকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অর্ধেক বন্দী সুন্দরগঞ্জের। নাশকতার অজুহাতে তাদের কারাগারে আটকে রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দলমত-নির্বিশেষে কোনো নিরপরাধ কাউকে হয়রানি হতে দেবেন না বলে জানান।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন জানান, সুন্দরগঞ্জ আসনের প্রতিবারের নির্বাচনে জামাত দ্বিতীয় হয়েছে। কর্নেল (অব.) কাদের খানের স্বীকারোক্তিতে এমপি লিটনের খুনি চিহ্নিত হয়েছে। এরপরও জামায়াতের নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রাখার কোনো যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করে তিনি তাদের মুক্তির দাবি করেন।

উপজেলার রামজীবন গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ন কবির জানান, ভুলি নাই অতীতের কথা। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মানবতাবিরোধী মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ে জামায়াতের ৭০ হাজার নেতাকর্মী ও সমার্থকের নামে মামলা করা হয়। তাদের মধ্যে প্রকৃত অপরাধী ছাড়াও এলাকার সহজ-সরল অসংখ্য মানুষ রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পথে বসেছেন। আসন্ন উপনির্বাচনে তারা অনেক হিসাব-নিকাশ করে ভোট দেবেন।

সূত্রমতে, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৮ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থী আবদুল আজিজ। ওই সময় বিএনপি পেয়েছিল ৩৮ হাজার ভোট। সেই সূত্রে বিএনপি-জামায়াতের মোট ভোট ১ লাখ ১৬ হাজার। গত ১০ বছরে ভোট বেড়ে বর্তমানে এই দুই দলের ভোটসংখ্যা ধরা হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে মহিলা ভোটারসংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৪১ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৫ জন। সর্বমোট ভোটার ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৬ জন। ২২ মার্চ ১০৯টি কেন্দ্রে ৬৩৭টি বুথে ভোট নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :