মুক্তিযোদ্ধা একজন, ভাতা তোলেন দুটি

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর প্রতিনিধি
| আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩৭ | প্রকাশিত : ১৭ মার্চ ২০১৭, ০৮:৩০

তথ্য গোপন করে একজন মুক্তিযোদ্ধা দুটি এলাকা থেকে ভাতা তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কে এম আলম নামের এই মুক্তিযোদ্ধা পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার পাশাপাশি অন্য একটি ঠিকানা ব্যবহার করে ভাতা তুলছেন খুলনার খালিশপুর থেকেও।

কাউখালী উপজেলার জয়কুল গ্রামের বাসিন্দা কে এম আলম এখন বসবাস করেন খুলনার খালিশপুরে।

এই বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পর কাউখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কে এম আলমের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি তাদের কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেননি। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপেও তিনি অভিযোগ স্বীকার করেন। এই মুক্তিযোদ্ধা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি স্থায়ীভাবে খুলনার খালিশপুরে বসবাস করি। এ জন্য আমি জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি কাউখালী উপজেলার নামটি বাতিল করার জন্য।

এত বছর ভাতা গ্রহণের পর এখন একটি উপজেলার নাম কর্তন বিষয়ে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কে এম আলম বলেন, ‘ভুল তো ভুলই। দুই স্থানে (খুলনার খালিশপুর ও কাউখালী) মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়ায় ভুল হয়েছে। আমি ছয় মাস আগেই এই আবেদন করেছি। আমি হিসাব করে দেখেছি, মোট দুই লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো উত্তোলন করেছি, সেই টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব।’ এ বছর হজে যাচ্ছেন বলেও এই প্রতিবেদককে জানান কে এম আলম।

কাউখালী উপজেলার জয়কুল গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে কে এম আলম। এখানে তার সম্মানী ভাতা যায় সোনালী ব্যাংকের কাউখালী শাখায় (হিসাব নং- ১০০০০৯২৫২)। তার লাল মুক্তি বার্তা নং-০৬০৫০৪০২২৫, গেজেট নং-৬২১, তারিখ-১৪-০৫-২০০৫। এই হিসাবে তার জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ১৭ মার্চ, ১৯৫৪ সন।

কাউখালীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্তি ও সম্মানি ভাতা গ্রহণের তথ্য গোপন করে ২০০৬ সালে বর্তমান ঠিকানা খুলনার খালিশপুরের ১০ নং ওয়ার্ডের ডি/১৫ নম্বর বাড়ি ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য আবেদন করেন। পরে তা অনুমোদনও হয়। এ ক্ষেত্রে তার মুক্তিবার্তা নং দেখানো হয় ০৪০১০৩০০৫৫। এই হিসাবেও তার জন্ম তারিখ ১৭ মার্চ ১৯৫৪। মুক্তিযোদ্ধার এই ভাতা যায় সোনালী ব্যাংকের খালিশপুর শাখায় (হিসাব নং ০০২৬০০০১৫৩)।

সোনালী ব্যাংকের কাউখালী শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোর্ট ও দুদক ছাড়া আর কাউকে কোনো অ্যাকাউন্টের তথ্য দেয়ার নিয়ম নেই, তবে এ নামে (কে এম আলম) একজন ভাতাভোগী এখান থেকে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাতা গ্রহণ করেন।’

সোনালী ব্যাংক খালিশপুর (খুলনা) শাখা ব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তথ্য মিলেছে, অ্যাকাউণ্ট ও নামের সাথে মিল রয়েছে। তিনি (কে এম আলম) এখান থেকে তার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেন।’

একই শাখার অফিসার (ক্যাশ) মাসুদ হোসেন বলেন, ‘ডিসি অফিস থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের যে তালিকা আমাদের কাছে পাঠায়, আমরা সেই অনুযায়ী তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেই, তারা তাদের চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন।’ কাউখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন-অর-রশিদ সাঈদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কেএম আলমের এই বিষয়টি আমিও শুনেছি। পরে আলমের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তার বন্ধুরা খালিশপুরে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা অর্ন্তভূক্ত করেছে।’

একই কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার (কাউখালী) আলী হোসেন তালুকদার বলেন, এ বিষয়টি রবিবার শুনেছি। পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি তার হিসাব নম্বরটি জানার জন্য।

জানতে চাইলে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা বলেছেন, ‘এ বিষয়ে শুনেছি তবে, নির্দিষ্টভাবে কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি।’

ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :