বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও জাতীয় শিশু দিবস পালন
কুবিতে ফুল দেয়া নিয়ে শিক্ষকদের দু’পক্ষে ধাক্কা-ধাক্কি, ভাঙচুর
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ফুলের ডালা ভাঙচুর করা হয়।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা।
মূলধারার বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার পরে পরিষদের অপর পক্ষ ফুল দিতে আসেন। এসময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের মূলধারার সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়া উদ্দিন বাধা দেন। তখন বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট দুলাল চন্দ্র নন্দী এবং জিয়া উদ্দিনের মধ্যে ধাক্কা-ধাক্কি হয়। একপর্যায়ে জিয়া উদ্দিন ফুলের ডালাটি ভেঙে ফেলেন। এতে করে শিক্ষকদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হাতাহাতি শুরু হলে জিয়া উদ্দীন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন নিচে পড়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোঃ খলিলুর রহমান বারবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো: আবু তাহেরের দিকে তেড়ে আসেন এবং মূলধারার বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকদের জামাত-শিবির বলে আখ্যা দেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, প্রক্টর কাজী মো: কামাল উদ্দিন এবং মূলধারার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আইনুল হক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হাতাহাতির সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা পরিষদের ফুলের ডালাটিও ভেঙে যায় বলে জানায় কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি জিনাত আমান।
প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়া শেষে হলের সামনে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের অপরাংশের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সমাবেশ করেন। সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন তারা।বক্তব্যে উপাচার্য দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েকজন শিক্ষক আমার অপসারণ চায়। সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে রবিবারের আগেই উপাচার্য কার্যালয়ের তালা খুলে দিতে বলেন। অন্যথায় আগামী রবিবার উপাচার্যের কার্যালয়ের তালা ভেঙে উপাচার্যকে অফিসে করার সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে শাখা ছাত্রলীগ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের উপস্থিতিতে একদিকে যখন এই সমাবেশ চলছে তখন অপর দিকে সমাবেশের অনতিদূরেই মূলধারার বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দরা অর্ধঘণ্টাব্যাপী সমাবেশ করে মোঃ জিয়া উদ্দিনকে লাঞ্চনা করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে এর বিচারের দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ অপরাংশের সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগের বঙ্গবন্ধু পরিষদ এখন আর বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শগত জায়গায় নেই। তাই আমরা নতুন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করেছি। সকালে আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে যাই। এইসময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি কিছু শিক্ষক আমাদের ফুল দিতে বাধা দেয়। এসময় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আহত করে। আমি উপাচার্যের কাছে তদন্তসাপেক্ষে এই ঘটনার বিচার দাবি করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যে রকম ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ঘটেছে তা লজ্জাজনক। শিক্ষক সমিতি যদি আমার অপসারণ চায় তাহলে তাদেরকে বলবো রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে আসুন। আমি নিজেই পদত্যাগ করবো। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুষ্টিমেয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তো আমার অপসারণ চান না, তাহলে আমি চলে যাবো কেন?
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ থেকে বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্যকে ‘অবাঞ্চিত’ আখ্যা দিয়ে তাকে তার কার্যালয়ে অফিস করতে দিচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তাই উপাচার্য আজ ১০দিন ধরে তার নিজ বাসভবনে অফিস করছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/এমকে/ইএস
মন্তব্য করুন