জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা উন্নয়নে বড় বাধা: দোলন

ফরিদপুর ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৭, ০৯:১৩ | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০১৭, ০৮:৫৯

কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা অনেক বড় বাধা। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার সেই স্বপ্ন শতভাগ পূরণ করতে পারব।’

শুক্রবার সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গার কামারগ্রামে বেগম শাহানারা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক ছিল কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন।

ঢাকাটাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘উন্নয়নের জন্যে সাম্প্রদায়িকতা বড় বাধা। আজকে তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছেন এটাকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে হবে। এই সাম্প্রদায়িকতাকে রোখার জন্য বঙ্গবন্ধু সব সময় সোচ্চার ছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। আজ জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে আমরা স্বাধীন ভূ-খণ্ড পেয়েছি।’

নিজের ছাত্রজীবনের কথা তুলে ধরে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘আমার একান্ত কিছু ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করতে চাই। আমি মনে করি, যতদিন পৃথিবী থাকবে- ততদিনই তিনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচিত হবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে সেই কলেজে পড়ার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থাকতেন কলকাতার বেকার হোস্টেলে। আমার সৌভাগ্য হয়েছে সেই বেকার হোস্টেলে থাকার।’

ঢাকাটাইমস সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেকার হোস্টেলে যে কক্ষটিতে থাকতেন সেটি এখন জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত। আমরা সেখানে থাকাকালে কতিপয় ছাত্র প্রথম দাবি তুলেছিলাম এটিকে জাদুঘর করার। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। এরপরে তৎকালীন ডেপুটি হাইকমিশন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে দাবি জানায়। সেটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ওখানে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর যে কর্মকাণ্ড সেই সম্পর্কে জানার কিছুটা সুযোগ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তার অন্যতম চিন্তা ভাবনা ছিল অসম্প্রাদায়িক রাষ্ট্র গঠনের।’

শিশু দিবসের এই দিনে শিশুদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাপ্তাহিক এই সময় সম্পাদক আরিফুর রহমান বলেন, ‘আজকে শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এটি অবশ্যই সম্ভব। আমরা পারব। সেই স্বপ্ন যারা বাস্তবায়ন করবে তারা হচ্ছে আজকের শিশু। আজকে জাতীয় শিশু দিবস। এই কারণে এই শিশুদের সেইভাবে তৈরি করতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের সকলের। নিশ্চয়ই এই দেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই উন্নত রাষ্ট্রকে দেখভাল করে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা কাজ করবে আজকের শিশুরা তাদের যেন আমরা সেইভাবে তৈরি করতে পারি। সতর্ক থাকি। খেয়াল রাখি।’

আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা দোলন বলেন, ‘শুধু বৃহত্তর ফরিদপুর নয়, সারাদেশে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে সেটি যেন অব্যাহত থাকে এবং এই কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যা আগামী নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়ে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হতে পারেন- এ ব্যাপারে আপনারা সবাই সজাগ থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে তিনশ আসনে যারা জনপ্রিয়, যারা জনগণের ভাষা বোঝে- এরকম ব্যক্তিদের নেত্রী মনোনয়ন দেবেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন শতভাগ বাস্তবায়ন করতে গেলে আগামীতে আবারও আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন। আর জনগণকে যারা বোঝে, জনগণের পাশে যারা থাকে তাদেরকে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন। এটাই স্বাভাবিক।’

সংসদ সদস্য পদে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। অনেক কাজ থাকে। অনেক ধরনের ব্যস্ততা ঢাকায় রয়েছে। তারপরও আমি চেষ্টা করছি। এলাকায় ঘুরছি। মানুষের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছি। আমি কিন্তু কিছুই চাচ্ছি না। আপনারা যদি মনে করেন, আমি আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব, আপনাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে পারব, এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারব- তাহলেই একমাত্র আপনারা আমাকে নিয়ে যে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ভাবছেন সেটি ভাববেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কিছুই চাচ্ছি না। আমার নিজের জন্য কিছুই প্রয়োজন নেই। শুধু জনগণের সেবা করার জন্য কোনো প্রতিনিধির নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রয়োজন হয়, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি যোগ্য মনে করে কোথাও মনোনয়ন দেয় নিশ্চয়ই আমি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য রাজি আছি।’

দোলন বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। এই অঞ্চলের উন্নয়ন যেন সমান গতিতে হয় সে ব্যাপারে আমরা যেন সবাই একযোগে কাজ করতে পারি, এই মানসিকতা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, এই দোয়া চাইছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন। তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যেন দীর্ঘায়ু পান, তার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’

বিশেষ অতিথি আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। আমার মনে হয় আমরা জাগার জন্য চিন্তা ভাবনা করছি। আপনাদের মনোভাবটা সেরকম। নিজেদের অধিকার, নিজেদের চাওয়াটা নিজেদের বলতে হবে। চাইতে হবে। তা নাহলে কিছু হবে না। এরকম একটি চাওয়া-পাওয়া নিয়ে এগুতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আরিফুর রহমান দোলনের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক মন-মানসিকতা আছে। সে চাইলে পারবে। এজন্য সবার সহযোগিতা লাগবে। আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’

শেখ আকরাম হোসেন, ‘বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা কতটা সুদূর প্রসারী ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। বাঙালি জাতি এরকম একজন নেতা না পেলে এই স্বাধীন দেশ পেত না।’

আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ, কামারগ্রামের অধ্যক্ষ মোরসেদুর রহমান বলেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে জেগে ওঠবার। আমরা যদি জেগে ওঠতে পারি তবে আলফাডাঙ্গার নক্ষত্র আরিফুর রহমান দোলনকে দিয়ে এই অঞ্চলকে আলোকিত করতে পারব।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান বলেন, ‘নেতা হতে হবে জনগণের। নেতা জনগণ বানায়। কিন্তু জনগণের সামনে দিয়ে চলে যায়, কথা বলে না- এমন নেতা আমরা চাই না।’

তিনি বলেন, ‘দোলন ভাই আমাকে চিনতেন না। কিন্তু যখন তাকে পরিচয় দিয়ে মোবাইলে বললাম আমি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছি। আপনি যদি পারেন কিছু করেন। তিনি আমাদের উপজেলার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ এনে দিলেন।’

কুদ্দুস খান বলেন, ‘দোলন ভাই যতই ব্যস্ত থাকুক, তার গাড়ি দেখে যদি হাত দেখাই সাথে সাথে তিনি গাড়ি থামিয়ে নেমে আসেন। জড়িয়ে ধরেন। কথা বলেন। এমন নেতাই আমরা যাই। যার মধ্যে কোনো অহংকার নেই।’

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়। কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা এমতেহানুর রহমান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। ফরিদপুর জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তৃতা করেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন তারা, মহিলা সম্পাদিকা সুফিয়া বেগম রোজী, ২নং গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ইকু, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, সাবেক শ্রমিক শেখ মোক্তার হোসেন, ২নং গোপালপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, গোপালপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইনামুল হাসান, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলী, আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ ডালিম, আওয়ামী লীগ নেতা হাসমত আলী কাজল প্রমুখ।

অনুদানের চেক বিতরণ: ফরিদপুর জেলা পরিষদ থেকে মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ এবং কবরস্থান মিলিয়ে ১৬টি প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় কিস্তির আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে কামারগ্রাম পূর্বপাড়া জামে মসজিদের জন্য ৮৮ হাজার টাকা, গোপালপুর জামে মসজিদ ২২ হাজার টাকা, ফুলবাড়িয়া জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, বাজড়া ঈদগাহ ৪৪ হাজার টাকা, পাড়াগ্রাম পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, পবন পশ্চিম পাড়া বাইতুল মামুন জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, চর চান্দ্রা বাইতুন নূর জামে মসজিদ ৪৪ হাজার, চর কুচিয়া জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমির জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, বাইতুল ফালাহ দাখিল মাদরাসা ৪৪ হাজার টাকা, কামারগ্রাম মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ২২ হাজার টাকা, মালিডাঙ্গা জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, বাজড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, বাজড়া উত্তরপাড়া জামে মসজিদ ৪৪ হাজার টাকা, মালিডাঙ্গা কবরস্থান ৪৪ হাজার টাকা, ফেরীঘাট জামে মসজিদকে ৪৪ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/প্রতিনিধি/এইচএফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :