দিনাজপুরে পীর হত্যা: গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্বের জের

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
| আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১০:৫৯ | প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১০:০৮

মতপার্থকের জের ও গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে পরিকল্পিতভাবে দিনাজপুরে ‘পীর’ ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার গৃহকর্মী রুপালী বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে কুড়িগ্রামের আরেক ‘পীর’সহ আরও অনেকেই জড়িত রয়েছেন বলে আটক দুজন জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় নিজ কার্যালয়ে তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘পীর ইসাহাক শাহ্ নামাজ পড়ার পক্ষে থাকলেও পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী ছিলেন বিপক্ষে। এ কারণে এলাকার আজিমুদ্দিনের ছেলে বাবুর সহযোগিতায় পীর ইসাহাক আলী রামপুর গ্রামে পৃথক দরবার গড়ে তুলেন। এ নিয়ে কথিত দুই পীরের মধ্যে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় পীর ইসাহাক আলী। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় খাদেম সাইফুল হককে দিয়ে পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরীকে দরবার শরীফে ডেকে আনা হয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে বাবুসহ তিন যুবক দরবার শরিফে ফরহাদ হোসেন চৌধুরীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে গুলি করে। মুত্যু নিশ্চিত হয়ে বের হওয়ার সময় ঘাতক বাবুকে গৃহকর্মী রুপালী দেখে ফেলে। তাৎক্ষণিকভাবে রুপালীকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় দরবারের খাদেম সাইদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দিনাজপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আটক কথিত পীর ইসহাক আলী ও বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা এলাকায় কাদেরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবারের প্রধান খাদেম সাইদুর রহমান।

তিনি জানান, জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছে- মতপার্থকের জের ও গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে পরিকল্পিতভাবে দিনাজপুরের কথিত পীর ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার গৃহকর্মী রুপালী বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি কাউন্টার টেরোরিজম তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইহসাক আলী কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি গ্রামের পীর আজিম উদ্দিনের ছেলে ও খাদেম সাইদুর রহমান বোচাগঞ্জের দৌলা গ্রামের মৃত ফয়জুল হকের ছেলে।

প্রসঙ্গত, ১৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা এলাকায় কথিত পীর ফরহাদ হাসান চৌধুরী ও তার গৃহকর্মী রুপালী বেগম গুলি করে হত্যা করা হয়। ফরহাদ হোসেন চৌধুরী দিনাজপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। তিনি ছিলেন দিনাজপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

স্থানীয় ও স্বজনরা জানান, ২০০৬ সালে ফরহাদ হাসান চৌধুরী রাজনীতি ছেড়ে দেন। এ সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় কুড়িগ্রামের পীর দাবি করা ইসাহাক আলীর। তিনি কাদেরিয়া তরিকার পীর বলে দাবি করেছেন।

ইসহাক আলীর সঙ্গে বেশ কিছুদিন চলাফেরার পর ২০১০ সালের দিকে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা গ্রামে কাদেরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবার নির্মাণ করেন ফরহাদ চৌধুরী। এর আগে থেকেই তার বেশকিছু মুরিদ ও অনুসারী ছিল। দরবার নির্মাণ করার পর তার মুরিদ ও অনুসারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাত শতাধিক মুরিদ ও অনুসারী রয়েছে। প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাতভর জিকির চলে। এছাড়াও বৈশাখ মাসে বড় অনুষ্ঠান (উরস) হয়, যেখানে হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

এই দরবারে মাঝেমধ্যেই আসতেন ‘পীর’ ইসাহাক আলী। তবে দুই-তিন বছর আগে ইসাহাক আলীর সঙ্গে ফরহাদ চৌধুরীর মতবিরোধ দেখা দেয়। এরপর থেকে তিনি আর এই দরবারে আসতেন না। তবে ওই এলাকায় তার কয়েকজন মুরিদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগেও তিনি এই গ্রামে সফরে এসেছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এসএএস/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :